আর্কাইভ  রবিবার ● ২০ জুলাই ২০২৫ ● ৫ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   রবিবার ● ২০ জুলাই ২০২৫
২০ জুলাই: কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ, শাটডাউন প্রত্যাহারের ‘গুজব’, সমন্বয়কদের প্রত্যাখ্যান

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
২০ জুলাই: কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ, শাটডাউন প্রত্যাহারের ‘গুজব’, সমন্বয়কদের প্রত্যাখ্যান

জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

আজকের এই দিনে রংপুরে শহীদ হয়েছিলেন ৪ জন

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
আজকের এই দিনে রংপুরে শহীদ হয়েছিলেন ৪ জন

রংপুরের সাবেক এসি ইমরান “ তথ্য গোপন করে বিসিএস কর্মকর্তা “

৫ আগস্টের পর 'আত্মগোপনে' চলে যায়
রংপুরের সাবেক এসি ইমরান “ তথ্য গোপন করে বিসিএস কর্মকর্তা “

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যে হাসিনাঘনিষ্ঠদের সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরের হিড়িক

রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, দুপুর ১২:৪০

Advertisement

নিউজ ডেস্ক: ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের প্রায় এক বছর পার হলেও বাংলাদেশে এখনও রাজনৈতিক বিভক্তি ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে এখনও বেশ হিমসিম খাচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এই প্রেক্ষাপটে লন্ডনের নাইটসব্রিজের কোনো বিলাসবহুল টাউনহাউজ কিংবা সারে’র অভিজাত এলাকায় অবস্থিত প্রাসাদসম বাড়ি যেন এক ভিন্ন জগতের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু এসব বিলাসবহুল সম্পত্তিই হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নাটকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কারণ, সাবেক হাসিনা সরকারের উচ্চপদস্থ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রাষ্ট্রীয় চুক্তি ও ব্যাংকিং খাতের অপব্যবহার করে কোটি কোটি পাউন্ড বিদেশে পাচার করেছেন। এই অর্থের বড় অংশই যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি কেনায় ব্যয় হয়েছে।

গত মে মাসে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) সালমান এফ রহমান পরিবারের সদস্যদের মালিকানাধীন ৯ কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি জব্দ করে। এক মাসের ব্যবধানে এনসিএ সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ১৭ কোটি পাউন্ড মূল্যের সম্পদ জব্দ করে, যার মধ্যে ৩০০-এর বেশি ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও বাড়ি ছিল যুক্তরাজ্যে।

এরই মধ্যে গার্ডিয়ান এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এক যৌথ অনুসন্ধানে জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর ও বন্ধকীকরণের মতো অন্তত ২০টি ‘অ্যাপ্লিকেশন ফর ডিলিং’ (চুক্তির আবেদন) হয়েছে যেসব ব্যক্তি ঢাকায় তদন্তাধীন।

তদন্তকারীরা প্রশ্ন তুলছেন, যুক্তরাজ্যে আইনজীবী ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো যথাযথ যাচাই না করেই এইসব লেনদেনে সহায়তা করেছে কি না।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন, তদন্ত চলাকালে সন্দেহভাজনদের আরও সম্পদ ‘ফ্রিজ’ করার জন্য যাতে তারা পালানোর সুযোগ না পায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মানসুর বলেন, ‘আমরা জানি, অনেকেই তাদের সম্পদ দ্রুত লিকুইডেট করার চেষ্টা করছে। যুক্তরাজ্য সরকারের উচিত আরও ফ্রিজিং অর্ডার দেওয়া। এতে আমরা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পদ ফেরত আনার আশায় থাকব।’

বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, তিনি এনসিএ’র কাছে আরও ব্যক্তির সম্পদ জব্দের অনুরোধ জানিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার এ বছরের জুনে প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল লন্ডন সফরে যায়, যারা দ্য ডরচেস্টার হোটেলে অবস্থান করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারের চেষ্টা চালায়।

সোবহান পরিবার ও গোপন লেনদেন
বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন সোবহান পরিবারের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে কোটি কোটি পাউন্ডের সম্পত্তি কেনা এবং তা বিক্রি বা হস্তান্তরের অভিযোগ উঠেছে। নাইটসব্রিজে অবস্থিত এক চারতলা বাড়ি আগে বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের নামে ছিল, যা সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় দেখানো হয়েছিল।

২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে সেই বাড়ি ব্রুকভিউ হাইটস লিমিটেড নামে একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানের নামে হস্তান্তর করা হয়। এই কোম্পানির পরিচালকেরা আগে সোবহান পরিবারের হয়ে সম্পত্তি কেনাবেচার কাজে জড়িত ছিলেন। পরে ওই বাড়ি ৭.৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডে একটি নতুন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি হয়, যার পরিচালক এক অচেনা হিসাবরক্ষক। একই পরিবারের শাফিয়াত সোবহানের নামে আরও দুটি সম্পত্তির হস্তান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

সোবহান পরিবারের এক সদস্যের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ নানা অভিযোগ তদন্তাধীন। যদিও তারা আগেই জানিয়েছে, তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করে আইনি পথে প্রতিরোধ গড়বে।

সাইফুজ্জামান চৌধুরীর নিকটাত্মীয়দের সম্পত্তিও নজরে
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে সাইফুজ্জামান চৌধুরীর ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী এবং এক প্রবাসী ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ডেভেলপার সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাজ্যে একাধিক সম্পত্তি কেনাবেচা করেছেন। আনিসুজ্জামানের নামে থাকা রিজেন্টস পার্কের পাশে একটি দশ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের বাড়ি গত বছর বিক্রি হয়েছে। আইনজীবীরা দাবি করছেন, এই বিক্রির সিদ্ধান্ত ২০২৩ সালেই নেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) এক চেয়ারম্যান দাবি করেছেন, চৌধুরী এক ব্রিটিশ-বাংলাদেশি ডেভেলপারকে অবৈধভাবে ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন। সেই ডেভেলপারের ওপর এ বছর বাংলাদেশি আদালত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

সালমান এফ রহমান পরিবারের সম্পদও ফ্রিজ
বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ও ভাগনে আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের মালিকানাধীন তিনটি সম্পত্তিও সম্প্রতি এনসিএ জব্দ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মেফেয়ারের গ্রোসভেনর স্কয়ারের একটি ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের অ্যাপার্টমেন্ট।

সালমান এফ রহমান পরিবারের আইনজীবীরা বলছেন, রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে অনেকের বিরুদ্ধেই ভিত্তিহীন অভিযোগ উঠছে এবং তারা যুক্তরাজ্যে যেকোনো তদন্তে সহযোগিতা করবেন।

ব্রিটিশ এমপির সতর্কতা
ব্রিটিশ এমপি জো পাওয়েল বলেছেন, ‘ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয়, তদন্ত চলাকালে যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে এসব অবৈধ সম্পদ উধাও হয়ে যায়।’ তিনি এনসিএ’র নেওয়া পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে আরও বলছেন, দ্রুততার সঙ্গে আরও সম্পদ জব্দ করার ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

যুক্তরাজ্যে কালো টাকা বিনিয়োগ বন্ধে কাজ করা সংসদীয় দলের নেতৃত্বে থাকা এই লেবার পার্টির এমপি বলেন, রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর বিশ্বের নজর পড়েছে লন্ডনে গোপন সম্পদের উৎস ও তা সহায়তাকারীদের দিকে—এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রসঙ্গও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

মন্তব্য করুন


Link copied