আর্কাইভ  সোমবার ● ২১ জুলাই ২০২৫ ● ৬ শ্রাবণ ১৪৩২
আর্কাইভ   সোমবার ● ২১ জুলাই ২০২৫
২০ জুলাই: কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ, শাটডাউন প্রত্যাহারের ‘গুজব’, সমন্বয়কদের প্রত্যাখ্যান

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
২০ জুলাই: কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ, শাটডাউন প্রত্যাহারের ‘গুজব’, সমন্বয়কদের প্রত্যাখ্যান

জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার

আজকের এই দিনে রংপুরে শহীদ হয়েছিলেন ৪ জন

ফিরে দেখা জুলাই বিপ্লব
আজকের এই দিনে রংপুরে শহীদ হয়েছিলেন ৪ জন

রংপুরের সাবেক এসি ইমরান “ তথ্য গোপন করে বিসিএস কর্মকর্তা “

৫ আগস্টের পর 'আত্মগোপনে' চলে যায়
রংপুরের সাবেক এসি ইমরান “ তথ্য গোপন করে বিসিএস কর্মকর্তা “

প্রক্টর-ছাত্র উপদেষ্টাকে প্রতীকী শাড়ি চুড়ি পরিয়ে দিলেন শিক্ষার্থীরা

রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫, রাত ১২:০০

Advertisement

বেরোবি প্রতিনিধি : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কাগজে কলমে ক্যাম্পাসে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে ভিন্নচিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ক্যাম্পাসজুড়ে শিবির ও ছাত্রদলের বৈঠক, প্রোগ্রাম এবং বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচি পালনের অভিযোগ উঠেছে। এসব কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ আর নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনের নাকের ডগায় শিবির ছাত্রদলের নেতাকর্মী নিয়মিতভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এবং গত ১৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১১তম সিন্ডিকেট সভায় তা অনুমোদিত হয়। সেখানে বলা হয় ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ করার পরেও কেউ বিভিন্ন ব্যানারে ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অপচেষ্টা করলে এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক করণীয় এবং শান্তি নির্ধারণের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়।

বলা হয়, ‘ক্যাম্পাসে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, আবাসিক হলে সিট বাণিজ্য এবং সব ধরনের লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি বন্ধ করার পরেও কেউ যদি ক্যাম্পাসে উক্ত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে, তার শান্তি হিসেবে আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করা যেতে পারে। প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শান্তি বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করা হলো।

গত ৯ জুলাই শাখা শিবিরের নতুন কমিটি দেয়। যদিও তাদের আগেও কমিটি ছিল বলে জানা যায়। কমিটি দেওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসে এ নিয়ে তীব্র আলোচনা  সমালোচনার ঝড় উঠে। অন্য দিকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে দেদারসে। ১৮ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে খেলা উদ্বোধন করে। ১৯ জুলাই জুলাই -আগস্টে শহীদের স্মরণে কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়া মাহফিল করে।

আজ রোববার (২০ জুলাই) সদস্য ফরম বিতরণ করে শহীদ আবু সাইদ চত্বরে। প্রধান অতিথি হিসেবে  ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ মুসা ও বিশেষ অতিথি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহ মো. আদনান এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাইজুল খান উপস্থিত ছিল। নিয়ে ক্যাম্পাসে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয় শিক্ষার্থীদের মাঝে। ইতোমধ্যে ছাত্রদল বিভাগ ও হলগুলোতে গোপনে কমিটি দিয়েছে বলেও প্রতিবেদকের কাছে তথ্য রয়েছে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা পরিচালককে প্রতীকী শাড়ি চুড়ি পরিয়ে দেয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছে, রাজনীতি নিষিদ্ধ থাকার পরও প্রতিদিন কোনো না কোনো দলীয় কার্যক্রম হচ্ছে। আমরা আর চাই না আবার কেউ শহীদ আবু সাঈদের মতো কিংবা আবরার ফাহাদের মতো লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির নৃশংস বলি হউক। আমরা চাই সুস্থ ধারার ছাত্রসংসদ ভিত্তিক রাজনীতি যা গণতন্ত্রের সহায়ক। আমরা আর কোনো রাজনৈতিক দলের অধীন থাকতে চাই না।

পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী খোকন ইসলাম বলেন, বিপ্লব পরবর্তী প্রশাসন কেমন হওয়া উচিত ছিল? আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পেরেছেন তারা? বেরোবিতে চলমান সার্কাজমের দায় কেবল প্রশাসনের মেরুদণ্ডহীনতা নাকি সাধারণ শিক্ষার্থী গর্জে ওঠায় ধীরগতি? আর আন্দোলনের নেতৃত্ব সমন্বয়কদের প্রশাসনের প্রতি নমনীয়তাও দায়ী কিনা?

রসায়ন বিভাগ বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত সসম্মানে দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখনও ধৈর্য ধারণ করে আছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে চিরকাল থাকবে এই ধৈর্য!

প্রশাসন যে ব্যর্থ, তা বহুবার প্রমাণ হয়ে গেছে। ভিসি নিয়োগের জন্য আমরা যখন আন্দোলনে নেমেছিলাম, তখন স্পষ্ট করে ঘোষণা দিয়েছিলাম— আমরা চাই একজন মেরুদণ্ডসম্পন্ন, যোগ্য ভিসি এবং একটি বলিষ্ঠ প্রশাসন।

আইন পাশ করে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হলেও, এখনও ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যে চলছে সেই রাজনীতি। ৫ আগস্টের পর শিক্ষার্থীদের সবচেয়ে বড় গণদাবি ছিল— লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।

দুঃখজনক হলেও সত্য, এই গণদাবির প্রতি ন্যূনতম সম্মান দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ব্যবহার করে ছাত্র রাজনীতি বারবার প্রমাণ করেছে— প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বিশ্ববিদ্যালয় সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের ওপর। এমন প্রশাসনের থাকা না থাকা উভয়ই সমান।

এ বিষয়ে বেরোবির বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শামসুর রহমান সুমন তার ফেইসবুক পোস্টে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নিয়ে আইন করেও যদি ব্যবস্থা না নিতে পারেন। তবে দায়িত্ব ছেড়ে দিন। বিপ্লব উত্তর এসব চুড়ি পড়া প্রশাসনকে দেখতে বেরোবিয়ানরা প্রস্তুত নয়। কিছুদিন আগেও শিবির তাদের কমিটি প্রকাশ করল। নামকাওয়াস্তে তদন্ত কমিটি করলেও তার কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখিনি আমরা। এসব হঠকারিতায় আস্থা হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের।

66b706b0b7f1e

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মো. হুমায়ুন কবির চৌধুরী বলেন, কোনো কিছু নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবহিত করতে হবে। আর এটা পরবর্তীতে সিন্ডিকেটে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ১০ হাজারের কাছাকাছি শিক্ষার্থী এর মধ্যে ক্যাম্পাসের বাইরে যদি মিটিং মিছিল করে তাহলে এটা কি প্রশাসনের ধরা সম্ভব? ক্যাম্পাসের ভেতরে যদি প্রোগ্রাম করে এবং করছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নজরে নেওয়া দরকার। যদি ক্যাম্পাসের মধ্যে করে থাকে তাহলে সিন্ডিকেটের আইন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. শওকত আলী বলেন, আমরা কেউ রাজনীতি চাই না। যারা রাজনীতি করছে তাদের সম্পর্কে আমরা খোঁজ নিচ্ছি। তাদের নমুনা আমাদের কাছে আছে। যারা রানিং শিক্ষার্থী না আমরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না। যারা রানিং শিক্ষার্থী তারা যদি সম্পৃক্ত থাকে থাকলে আমরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

মন্তব্য করুন


Link copied