আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

মন্তব্য প্রতিবেদন: সংলাপ না সংঘাত?

মঙ্গলবার, ২৮ মে ২০১৩, দুপুর ০৪:৫২

মুরাদ মাহমুদ, সিইও, উত্তরবাংলা ডটকম

বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্তমান সব থেকে আলোচিত শব্দ হচ্ছে সংলাপ। ১৯৯৪ সালে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে কমনওয়েলথ মহাসচিব এমেকা এ্যানিওয়াকুর উদ্যোগে স্যার স্টিফেন নিনিয়ানের মধ্যস্থতায় সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আলোচনার সময় সংলাপ শব্দটি আলোচিত হয়। তখনও একই অবস্থা দেখা গেছে। দীর্ঘ ২৯ দিন সংলাপ করার পর তিনি ব্যর্থ হয়ে চলে যান। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ, ভোটার তালিকায় ভুয়া ভোটার বাদ দেয়ার ইস্যু নিয়ে সংসদ ভবনে আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মরহুম আব্দুল জলিল ও বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব মরহুম আব্দুল মান্নান ভূঁইয়ার মধ্যে ঐতিহাসিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। দুই দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দুই ব্যক্তির দীর্ঘ তিন মাস চিঠি চালাচালির পর অনুষ্ঠিত এ সংলাপ নিয়ে সাড়া পড়লেও সমঝোতা হয়নি। ঢাকার নামীদামী হোটেল থেকে শুরু করে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের বাসা পর্যন্ত গড়িয়েছিল সেই সংলাপ। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এর কারণ হলো দুই দলের কেওই আন্তরিক ছিল না।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অতি পরিচিত সংলাপের আওয়াজ এখন ভাসছে আকাশে-বাতাসে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসনে সংলাপের বিকল্প নেই। দু’দলের মধ্যম ও শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা সংলাপের দিকেই তাকিয়ে আছেন। কিন্তু দল দুটির শীর্ষ নেত্রীর কাছ থেকে বক্তব্য না আশা পর্যন্ত দেশবাসীকে হতাশায় থাকতে হবে। গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব দল থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ছোট মন্ত্রীসভার প্রস্তাব দিলেও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তারপরও নির্বাচন কালীন সরকারব্যবস্থা কেমন হবে তা নিয়ে প্রধান বিরোধী দলসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে কোনো শর্ত মেনে আলোচনায় তারা বসতে নারাজ।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের কোন বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সংলাপের আয়োজন করতে হবে। দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জাতিসংঘসহ অনেক বন্ধু-রাষ্ট্র ও সংস্থা থেকে সমঝোতা ও সংলাপের কথা বলা হচ্ছে। দুই রাজনৈতিক জোটের নেতারাও মনে করছেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য সংলাপ জরুরি। রাজনৈতিক সংকট নিরসনে সংলাপের বিকল্প নেই। দেশে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট সমাধানে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনবোধ করছে সকল স্তরের মানুষ। সংলাপের জন্য সংলাপ চলছে। অথচ সংলাপের ত্রেই প্রস্তুত হয়নি। দুইদল নিজেদের অবস্থান থেকে এক চুলও নড়ছেন না। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলাটের দিকে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, সঙ্কট উত্তরণে সংলাপ করতেই হবে নয়তো অপেক্ষা করছে অনিবার্য সংঘাত।

জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিবের সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফর যেন এ দাবির পালে নতুন করেhasina-khaleda হাওয়া যুগিয়েছিল, যদিও তা দ্রুতই বিলীন হয়ে যায়। অস্কার ফারনান্দেজ তারানকো এসেছিলেন জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত হিসেবে। তার এ সফর এটাই প্রমাণ করে যে জাতিসংঘ বাংলাদেশের বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ হয়েছে। এ সফরকে গতানুগতিক ভাবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। মহাসচিব বান কি মুনের দূত ফিরে যেতে না যেতেই সরকার সংলাপ প্রশ্নে আগের অবস্থান থেকে পিছু হটেছে। বিএনপি প্রশ্নে হার্ডলাইনেই হাঁটছে সরকার। অন্যদিকে ক্রমাগত সাংগঠনিক বিপর্যয়, দূরদর্শী কর্মসূচি দিতে ব্যর্থতা এবং সরকারি বিভিন্ন চাপে দিশাহারা বিএনপিও কঠিন পরিস্থিতির মুখে পতিত। সংলাপ নিয়ে বাস্তবমুখী কোনো অবস্থান প্রকাশ করতে পারছে না তারা। এতে আপাতত আর সংলাপের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সংলাপ না হওয়ার কারণ হিসেবে সরকারি দলের নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া না দিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় সরকার উৎখাতের আল্টিমেটাম দেওয়া, হেফাজতের ঘাড়ে ভর করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা, শর্ত জুড়ে দিয়ে সংলাপে বসার কথা বলা, ঘন ঘন হরতাল, নৈরাজ্যমূলক কর্মসূচিই সংলাপ না হওয়ার কারণ।

অপর পক্ষে বিরোধী দলের নেতারা বলছেন, সংলাপের কথা বলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের নতুন করে গ্রেফতার-হামলা-মামলা, বিএনপিকে সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া, সংলাপ নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তাচ্ছিল্য-পূর্ণ বক্তব্য, ভেতরে-বাইরে সংলাপের কথা বলে এখন সংসদে যাওয়ার আহবান, শর্তহীন সংলাপের কথা বলে সরকারের প থেকেই শর্ত জুড়ে দেওয়া, বিএনপি চেয়ারপার্সনের চায়ের দাওয়াতকে গ্রহণ না করা, প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কথা বলা, সংলাপ নিয়ে বিরোধীদলীয় নেতার আল্টিমেটামকে পাত্তা না দেওয়া।

একদিকে সরকারি দল আওয়ামী লীগ বলছে কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না। অন্যদিকে বিরোধী দল বিএনপি বলছে নির্দলীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। দুই দল এখনো এই দুই বিরোধী নীতিতে অটল রয়েছে। এ অবস্থায় সংলাপ হলে তা ফলপ্রসূ হবে না। দৃশ্যত সংলাপের বিষয়ে দুই দলের মধ্যে ইতিবাচক কোন লক্ষণ নেই। সংলাপ নিয়ে সরকারের প থেকে চিঠি দেওয়ার কথা বলা হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। চিঠি দেওয়ার বিষয়টি আওয়ামী লীগের বক্তৃতা বিবৃতিতেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বিরোধী দলের সংলাপের বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যাচ্ছে না। সংলাপের পরিবেশ তৈরি হলেই বিরোধী দলকে চিঠি দেওয়া হবে বলে নেতারা জানান।

সংলাপ থমকে যাওয়ার একমাত্র কারণ দুই দলের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাব। তারা সদিচ্ছা নিয়ে আন্তরিকভাবে চাইলে অবশ্যই সংলাপ হবে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া খোলা মন নিয়ে বসলেই কেবল এ সমস্যার সমাধান হবে। শেখ হাসিনা যদি মনে করেন আমি আওয়ামী লীগ করি, আমি কেন ছাড় দেব, খালেদা জিয়াও যদি একই কথা মনে করেন; তিনি বিএনপির প্রধান, তিনি কেন ছাড় দেবেন- তাহলে হবে না।

কথিত গণতন্ত্রের অধীনে জাতি এখন দ্বিখণ্ডিত। দ্বিখণ্ডিত জাতি কোনো দিনই একটি অগ্রসরমান সমাজ বিনির্মাণ করতে পারে না। সংলাপটা হতে হবে দুই নেত্রীর মধ্যে অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে। তা না হলে সংলাপের কথা বলা অনেকটাই অর্থহীন। দুই দলের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে বিরাজমান সমস্যার সমাধান না ঘটলে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। দুই দলের বাইরে অন্য কোনো শক্তি দেশের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে পারে। এতে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। বর্তমান জটিল রাজনৈতিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী দুই মাস পর রাজপথ আবারও উত্তপ্ত হতে পারে। রমজান মাসের পর ব্যাপক কর্মসূচি নিয়ে বিরোধী দল মাঠে নামলে সংকট নতুন রূপ নিতে পারে। সংকট বাড়লে তি দেশ ও জনগণের। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশের অর্থনীতি। তাই আমরা আশাবাদী হতে চাই যে সংলাপের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান হবে। কারণ, সংলাপের বিকল্প সংঘাত ও সম্ভাব্য অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যৎ।

মন্তব্য করুন


 

Link copied