আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

ইতি-নেতির প্রবণতা

রবিবার, ২ অক্টোবর ২০১৬, বিকাল ০৫:১১

প্রভাষ আমিন

সাংবাদিকতার শুরু থেকেই একটা কথা শুনে আসছি, খারাপ খবরই বড় খবর। কুকুর মানুষকে কামড়ালে সেটা নিউজ নয়, মানুষ কুকুরকে কামড়ালে সেটা বড় নিউজ। তবে ‘ব্যাড নিউজ ইজ গুড নিউজ’, এই ধারণার সঙ্গে আমি কখনোই একমত নই। যেটা নিউজ, সেটা সবসময়ই নিউজ। ইতিবাচক বা নেতিবাচক, ট্যাগ দিয়ে সংবাদের মান যাচাই করা উচিত নয়। এই ধারণা অবশ্য ইদানিং ভেস্তে যেতে বসেছে। পত্রিকার পাতায় পাতায় এখন ইতিবাচক অনেক নিউজের ছড়াছড়ি। ব্যক্তির সাফল্য, সংগঠনের সাফল্য, দেশের সাফল্য প্রচার হয় ফলাও করে। এইসব সাফল্যের খবর আরো অনেক ব্যক্তি ও  সংগঠনকে ভালো কাজে উৎসাহিত করে। তবে আমরা এখনও নেতিবাচক সংবাদকেই বড় করে দেখানোর প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। বরং আমরা ইতিবাচক সংবাদেও নেতিবাচক বিষয়টি খুঁজে সেটা হাইলাইট করি। সম্প্রতি দেশের ১৪ জেলার জেলা প্রশাসক পদে রদবদল করা হয়। ডিসি পদে রদবদল কখনোই তেমন নিউজ নয়। পত্রিকার  ভেতরের পাতায় বড় জোর সিঙ্গেল কলাম নিউজ হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে এই রদবদলকে ঘিরেই বড় নিউজ হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় চলছিল কদিন ধরেই। আস্তে আস্তে গণমাধ্যমেও ঠাঁই করে নিচ্ছে খবরটি। বিদায়ী জেলা প্রশাসকদের মধ্যে অন্তত চারজন সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। এই চারজনের মধ্যে আবার তালিকার শীর্ষে আছেন ময়মনসিংহের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মুস্তাকীম বিল্লাহ ফারুকী, যিনি কাজল ফারুকী নামেই পরিচিত। এছাড়া পত্রিকায় এসেছে কুমিল্লার বিদায়ী জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোল, চট্টগ্রামের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মেজবাহউদ্দিন এবং মুন্সীগঞ্জের বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল। তাদের অপরাধ বিদায়ের সময় তাদের ব্যাপক সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। আলোচনা মূলত তাদের বিদায় সংবর্ধনার সংখ্যা এবং ধরনে। আমাদের অবস্থা হয়েছে প্রশ্ন কমন না পড়া সেই ছাত্রের মত। সে মুখস্থ করে গেছে নদী রচনা, পরীক্ষায় এসেছে গরু রচনা। চতুর পরীক্ষার্থী গরুকে নদীর পাড়ে নিয়ে গেল এবং নদী রচনা ঝেড়ে দিল। আমরা সাংবাদিকরাও নেতিবাচক সংবাদ খুঁজতে খুঁজতে না পেয়ে ইতিবাচক সংবাদ থেকেও নেতিবাচক বিষয় বের করে আনতে দারুণ পারঙ্গম। আমরা খুঁজে দেখতে চাইনি ১৪ জন জেলা প্রশাসকের মধ্যে ৪ জনকে বিপুল সংবর্ধনা দেয়া হলো, বাকিদের কেন দেয়া হলো না। বাকি ১০ জনের চেয়ে এই চারজন কোথায় আলাদা? জেলা প্রশাসক একটি জেলার প্রধান নির্বাহী। তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয় জেলার সব নির্বাহী তৎপরতা। আমলাদের সবাই জেলা প্রশাসক হওয়ার সুযোগ পান না। যোগ্য, দক্ষ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তারাই জেলা প্রশাসক হওয়ার সুযোগ পান। পদের নাম জেলা প্রশাসক হলেও তারা আসলে জনগণের শাসক নয়, সেবক। কিন্তু জেলা প্রশাসকরা বরাবরই নিজেদের শাসকই ভেবে এসেছেন।  জেলার সবচেয়ে সুন্দর বাংলোটি জেলা প্রশাসকের জন্য বরাদ্দ। বিশেষ করে পুরোনো জেলাগুলোতে জেলা প্রশাসকের বাংলো রীতিমত দর্শনীয় স্থান। ছেলেবেলা থেকেই দেখে এসেছি, জেলা প্রশাসক মানেই দূর আকাশের তারা। সাধারণ মানুষ কখনো জেলা প্রশাসকের দেখা পান না। সাংবাদিকতা যেমন বদলে যাচ্ছে, তেমনি বদলে যাচ্ছে আমলাদের মনোভাবও। সাংবাদিকতা যেমন পুরোটা বদলায়নি, তেমনি প্রশাসকদের সবাইও বদলাননি। তবে বদলের হাওয়া লেগেছে আমলাতন্ত্রেও। সম্প্রতি রংপুরের তারাগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিলুফা সুলতানার নেতৃত্বে এক ঘণ্টায় আড়াই লাখ গাছ লাগানো হয়। গতবছর মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় গিয়ে দেখেছি সেখানকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবা বিলকিস পাঠাগার গড়ে তোলা, গাছ লাগানোসহ নানা কাজ করছেন; যা আসলে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার করার কথা নয়। রাজনীতিবিদদের কথা আলাদা। যারা রাজনীতি করেন বা ভবিষ্যতে করবেন বলে ঠিক করেছেন; তাদের অনেকেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়ন কাজ করেন, জনগণের পাশে থাকেন। এমনকি সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা চাকরিতে থাকতে থাকতেই নিজের প্রভাব খাটিয়ে নিজের নির্বাচনী এলাকা গুছিয়ে ফেলেন, যাতে ভবিষ্যতে রাজনীতি করে এমপি-মন্ত্রী হতে পারেন। কিন্তু জেলা প্রশাসকরা জনপ্রতিনিধি নন। সরাসরি জনগণের সাথে তাদের কোনো ব্যাপার নেই। ভোটের চিন্তা নেই। জনপ্রিয় হওয়ার ভাবনা নেই। তবে অন্য অনেক পেশার মত ইদানিং আমলাদের মনোভাবেও দারুণ পরিবর্তন এসেছে। জেলা প্রশাসকদের কেউ কেউ রাজকীয় বাংলোর ঘেরাটোপ ছেড়ে সাধারণ মানুষের সাথে মিশছেন, সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করছেন। এই যে বিদায়ের সময় জেলা প্রশাসককে সংবর্ধনা দেয়ার হিড়িকের সাথে তার নিশ্চয়ই একটা সম্পর্ক আছে। এই চারজন এখানেই আলাদা। সংবর্ধনার খবর পড়ে আমি অবাক হয়েছি। নতুন জেলা প্রশাসককে বরণ করার আয়োজন হলে ধরে নিতাম, যিনি এসেছেন, তার মাধ্যমে স্বার্থ আদায় করতে বা তাকে হাতে রাখতে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু যিনি চলে যাচ্ছেন, তাকে কেন এমন বিপুলভাবে বিদায় দেয়া হচ্ছে? যিনি জেলা প্রশাসকের পদ থেকে চলে যাচ্ছেন, তিনি হয়তো আর কখনোই ঐ জেলায় ফিরে যাবেন না। তাহলে তাকে কোন স্বার্থে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছে? আমি  ঠিক জানি না, এই সংবর্ধনার ঢেউ হয়তো তাদের প্রতি জনগণের ভালোবাসার প্রমাণ। জোর করে, প্রভাব খাটিয়ে এত সংবর্ধনা নেয়া যায় না। একজন জেলা প্রশাসক ভবিষ্যতের কোনো স্বার্থ চিন্তা ছাড়াই ঐ জেলার উন্নয়নের কথা ভেবেছেন, জনগণের হৃদয় জয় করেছেন, বিদায়ের সময় বিপুল সংবর্ধনা পাচ্ছেন; এটা তো ইতিবাচক সংবাদই হওয়ার কথা। যারা সংবর্ধনা দিচ্ছেন, তাদের মনোভাব বা স্বার্থটা আমি জানি না। আমি বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবেই দেখতে চাই। তবে সংখ্যায় বিপুল সংবর্ধনার জন্য নিশ্চয়ই জেলার প্রশাসনিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটেছে। এটা অবশ্যই মাধায় রাখা উচিত ছিল। আগেই বলেছি, সমালোচনাটা তাদের বিদায় সংবর্ধনার সংখ্যা ও ধরন নিয়ে। আলোচিত চার বিদায়ী জেলা প্রশাসক ৩৫ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংবর্ধনায় অংশ নিয়েছেন। সোনার কোটপিন থেকে শুরু করে ফুল- নানা ধরনের গিফট নিয়েছেন। তবে আলোচনায় সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক কাজল ফারুকী। তাকে বিদায় দেয়া হয়েছে রাজার পোশাক পরিয়ে রাজকীয় ভাবে। যে চারজন জেলা প্রশাসকের বিদায় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তাদের কাউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না, তারা লোক কেমন তাও জানি না। চারজনের মধ্যে তিনজনের নামও আগে শুনিনি। নিজ জেলা কুমিল্লার জেলা প্রশাসক হাসানুজ্জামান কল্লোলের নাম শুনেছি, তবে কখনো দেখা হয়নি। এই যে নাম শোনাটাও আমি তার কৃতিত্ব বলেই মানি। নানা ব্যস্ততার কারণে কুমিল্লার সাথে আমার তেমন যোগাযোগ নেই। ৮৮ সালে কুমিল্লা ছাড়ার পর এই হাসানুজ্জামান কল্লোল ছাড়া আর কোনো জেলা প্রশাসকের নামও আমি শুনিনি। আমি বিশ্বাস করি, কেউ যখন কাজ করে, তখনই তাকে নিয়ে আলোচনা হয়, সমালোচনা হয়। কাজ করলেই ভুল হয়, কাজ না করলে কোনো সমস্যা নেই, আলোচনা নেই, সমালোচনাও নেই। এটা জীবনের সব ক্ষেত্রেই সত্যি। ফেসবুকে জেনেছি, ময়মনসিংহের বিদায়ী জেলা প্রশাসক কাজল ফারুকী ছাত্রজীবনে জাতীয় ছাত্রলীগ করতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হল সংসদের এজিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। হয়তো ছাত্র রাজনীতির সেই চেতনাটা তার মধ্যে রয়ে গিয়েছিল। হয়তো অন্তরের তাগিদ থেকেই তিনি জনগণের জন্য কাজ করেছেন, তাদের হৃদয় জয় করেছেন। কাজল ফারুকী এবং হাসানুজ্জামান কল্লোল সংস্কৃতি অনুরাগী ছিলেন। আর এটা করতে গিয়েই সমালোচনার বাধ খুলে দিয়েছেন কাজল ফারুকী। স্থানীয় একটি নাটকের দল বিদায় সংবর্ধনায় তাকে রাজার পোশাক পরিয়ে দেয়। রাজকীয় চেয়ারে মাথায় মুকুট পরা কাজল ফারুকীর ছবিটিই ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পোশাকটি কয়েকশ টাকায় একদিনের জন্য ভাড়া আনা হয়েছিল। জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কোথায় থামতে হবে, এটা না জানলে অনেক ভালো কাজও হিতে বিপরীত হতে পারে। অনেক গ্রেট ক্রিকেটারকেও সময়মত অবসর নিতে না পারায় দর্শকদের দুয়ো শুনতে হয়েছে। আর সীমা লঙ্ঘণকারীকে আল্লাহও পছন্দ করেন না। বিদায়ী জেলা প্রশাসকদের সব সংবর্ধনায় যোগ দেয়া উচিত হয়নি। বাছাই করে নিতে পারতেন বা সবাই মিলে একটা সংবর্ধনাও দিতে পারতেন। তারা নিশ্চয়ই এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবেন। বিদায়ী জেলা প্রশাসকরা ইতিমধ্যে নতুন দায়িত্বে যোগ দিয়েছেন। তারা আরো অনেকদিন প্রশাসনে কাজ করবেন। আশা করি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর গণমাধ্যমের তীর্যক সমালোচনা তাদেরকে হতোদ্যম করবে না। জেলা পর্যায়ে কাজ করার সময় দেশের জন্য, মানুষের জন্য ভালোবাসার যে প্রকাশ তারা ঘটিয়েছেন; তা ভবিষ্যতেও ধরে রাখবেন। প্রশাসক নয়, তারা জনগণের আরো ভালো সেবক হয়ে উঠবেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied