আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি       হিট অ্যালার্টে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি       শিল্পী সমিতির নতুন সভাপতি মিশা, সম্পাদক ডিপজল       নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১      

 width=
 

ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদ সীমার উপড় দিয়ে প্রবাহিত

শুক্রবার, ১২ জুলাই ২০১৩, বিকাল ০৬:২৮

ব্রহ্মপুত্র নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর, উড়িয়া, গজারিয়া ও ফুলছড়ি ইউনিয়নের ৫৮২ পরিবারের বসতভিটা, ২টি মসজিদ, ৪টি শিা প্রতিষ্ঠান, আবাদি জমি মূল্যবান গাছপালাসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে রতনপুর বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ একটি আদর্শ গ্রামসহ আরো শতাধিক পরিবার।বালাসীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল বলে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রেলওয়ে মেরিন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর, দণি খাটিয়ামারি, ফুলছড়ি ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি, এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের তিনথোপা, সন্যাসীচর, দণি হরিচন্ডী, বুলবুলি, উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর, রতনপুর, কৃঞ্চমনি, গজারিয়া ইউনিয়নের কাতলামারি, জিয়াডাঙ্গার নদীপাড়জুড়ে শুরু হয়েছে রাুসী ব্রহ্মপুত্র নদীর ভাঙ্গন। গত কয়েক দিনে ব্রহ্মপুত্র ভয়াল রুপ ধারণ করায় নদীপাড়ের অন্তত ১০টি গ্রামের মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই তাদের ঘরবাড়ি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।

কান্নাজড়িত কন্ঠে ফজলুপুর ইউনিয়নের নিশ্চিতপুর গ্রামের খইবর রহমান (২৫) বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া শেষ সম্বল ৩ শতক জমির ওপর তার বাড়ি। স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে দিনমজুরী করে চলে তার সংসার। দেখতে দেখতে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙ্গন মোর ঘরের দরজায় এসে ঠেকেছে। চিন্তায় রাইতোত (রাতে) ঘুম ধরে না। কখন ঘর দুইটা মোর নদীত ভাঙ্গি যায় সেই অপেক্ষায় আছোম। খইবরের স্ত্রী সম্পা বেগম বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্রই হামার সর্বনাশ করল। এর পর কোনটে থাকমো আল্লাই জানেন।’

৭ দিনের ব্যবধানে ফজলুপুরের নিশ্চিতপুর ও খাটিয়ামারি গ্রামের ৩৫০ পরিবারের বসতভিটা ও নিশ্চিতপুর জামে মসজিদটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।এ প্রসঙ্গে ফজলুপুর ইউপি চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জালাল বলেন, তার ইউনিয়নের লোকসংখ্যা ৩৭ হাজার ৬৬৫ জন। গত পাঁচ বছরে ৭ হাজারেরও বেশি পরিবার নদীভাঙ্গনের শিকার হয়েছে। এখনও নদী ভাঙ্গছে, গৃহহীন হচ্ছে মানুষ শত শত পরিবার। অব্যাহত ভাঙ্গনের ফলে নিশ্চিতপুর ও খাটিয়ামারি গ্রামের লোকজন পার্শ্ববতী উড়িয়া ইউনিয়নের কাবিলপুর এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। ফুলছড়ি ইউনিয়নের বাজে ফুলছড়ি গ্রামের মতিবর রহমান (২৫), মোগল (৪৫), বাহেজ আলী (৬৫), ফিরোজা বেগম (৩০), রহিমা বেগমসহ (২৫) ওই এলাকার ১৩২ পরিবারের বসতভিটা ও বাজে ফুলছড়ি জামে মসজিদ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গৃহহারা পরিবারের লোকজন তাদের সহায়-সম্বল হারিয়ে এখন বাজে ফুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এছাড়াও হুমকির মুখে রয়েছে পিপুলিয়া আদর্শ গ্রামসহ আরো শতাধিক পরিবার।

ফুলছড়ি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর গফুর মন্ডল বলেন, যে হাবে নদীভাঙ্গছে তাতে অল্প কিছু দিনের মধ্যেই আদর্শগ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এরেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন সরকার প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ও ১শ পবিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদীর স্রোতের গতিপথ পরিবর্তিত হয়ে ভাঙ্গছে লোকালয় ও জনপদ। অসংখ্য পরিবার হচ্ছে নি:স্ব। নি:স্ব পরিবারগুলোকে যতই রিলিফ দেন কোনো কাজে আসবেনা। এভাবে দিন দিন দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এ থেকে মুক্তি পেতে আমরা রিলিফ চাইনা কুড়িগ্রামের চিলমারী থেকে বগুড়ার সারিয়াকান্দি পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদী ডেজিং করে চাই। তবেই ভাঙ্গন থামবে। এতে ফুলছড়ি উপজেলার মানুষের কষ্ট লাঘব হবে।

গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মনোতোষ রায় মিন্টু জানান, আশির দশক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত নদীভাঙ্গনের শিকারে এলাকার প্রায় দশ হাজার কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ি, হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিসহ বহু মৎস পুকুর, দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ সব সম্পদ হারিয়ে অনেক পরিবার এখন উদ্বাস্ততে পরিণত হয়েছে।

এদিকে শুক্রবার সকালে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক পানি বন্দী ও নদী ভাঙ্গন কবলিত রতনপুর, কাবিলপুর, ফজলুপুর, খাটিয়ামারি, কালাসোনা, নিশ্চিতপুর, খঞ্চাপাড়া গ্রাম পরিদর্শন করে পানি বন্দি ৩শ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করেন। ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মেহেদী উল-সহিদ, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানগণ এসময় উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ফজলুপুর, উড়িয়া, এরেন্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি, গজারিয়া, উদাখালী ও কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের জন্য বিশেষ জিআরএর চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে।

ভাঙ্গনের কথা স্বীকার করে গাইবান্ধা পাউবোর নিবার্হী প্রকৌশলী রেজাউল মোস্তাফা মো. আসাফুদ্দৌলা বলেন, অর্থ বরাদ্দ না থাকায় ভাঙ্গন ঠেকাতে কোন কার্যকর পদপে নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।

মন্তব্য করুন


 

Link copied