আর্কাইভ  শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪ ● ৭ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শনিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: নীলফামারীতে গোপন বৈঠক থেকে জামায়াতের ৩ নেতা গ্রেপ্তার       পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ       

 width=
 

কবি মাধব রায়; অর্জিত আয়ের ১০ শতাংশ ব্যয় করছে হতদরিদ্র শিক্ষার্থীর পড়াশুনা ও চিকিৎসায়

মঙ্গলবার, ২৩ জুলাই ২০১৩, দুপুর ১১:৪১

সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার হতদরিদ্র মানুষজন এখান থেকে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ পেয়ে থাকেন। থেমে থাকেননি কবি মাধব রায়, নিজ বাড়িতে খুলেছেন গণগ্রন্থাগার। নিজ অর্থে কেনা বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক পুস্তক সংরক্ষণ করেছেন গ্রন্থাগারটিতে। গ্রামের শিক্ষিত মানুষজন অবসর সময় কাটাচ্ছেন এখানে এসে। তারা সবাই বই পড়েন এবং নিজেদের মধ্যে জ্ঞানের চর্চা করেন। গ্রামটিতে এ দৃশ্য নিত্যদিনের।
কবি মাধব রায়ের সাদা মন গ্রামটির শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। কবি এসব কিছু করছেন মানবিক মূল্যবোধ থেকে। আর এর পেছনে ব্যয়িত অর্থ আসছে তার লেখা বই বিক্রি আর বেতনের টাকায়। তিনি পেশায় একজন স্বাস্থ্য পরিদর্শক। বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে কর্মরত আছেন।
২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে অনাথ এক শিশুর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি কষ্টের মধ্য দিয়ে কবি মাধব রায়ের সাদা মন প্রস্ফুটিত হয়। ওই মাসে তার নিজ ইউনিয়ন চন্দ্রপুরে ছয়টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হতদরিদ্র ও অনাথ পরিবার থেকে আসা ৫০ শিক্ষার্থীকে নির্বাচন করেন।
এসব শিক্ষার্থীকে তিনি প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে শিক্ষা উপকরণ আর বছরের প্রথম মাসে নতুন পোশাক দিয়ে আসছেন। আর এদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন নিয়মিত। হতদিরদ্র আর অনাথ পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা এ রকম সহযোগিতায় তার পড়াশুনায় বেশ মনোযোগী, ফলাফলও করছে ভালো।
চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী বিউটি রানী জানায়, তার বাবা একজর রিকশাচালক তাই তিনি পড়াশুনার খরmadhob 2চ দিতে পারেন না। ঠিক সময়ে কবি মাধব রায় তাকে সব খরচ দিয়ে পড়াশুনা করাচ্ছেন।
পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মোরশেদা আখতার জানায়, তার বাবা দিনমজুর। খরচের অভাবে পড়াশুনা বাদ দিতে চেয়েছিল কিন্তু কবি মাধব রায়ের সহযোগিতা তাকে দিয়েছে সজীব প্রাণ। সে শ্রেণীতে সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রী। কবির সহযোগিতায় সে অনেকদূর এগিয়ে যেতে চায় পড়াশুনা করে।
ওই গ্রামের ছেলে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সুজন রায় জানান, গ্রামের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত মানুষজন এখন আর অবসর সময় অলসকায় কাটান না। তারা ভিড় করেন কবি মাধব রায়ের গণগ্রস্থাগারে। এখানে বই পড়া আর জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় উপকৃত হচ্ছে গ্রামটি।
গ্রামের হতদরিদ্র শুসিল চন্দ্র জানান, তার মতো অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষ ও তাদের ছেলেমেয়ের অসুখ হলে ছুটে আসেন কবি মাধব রায়ের জনকল্যাণ সেবাকেন্দ্রে। এখানে বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ ওষুধ পাওয়া যায়। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার সাদা মনের মানুষের এ সেবা গ্রামের স্বাস্থ্যচিত্র পাল্টে দিচ্ছে বলে তিনি জানান।
চাপারহাট সরকারি প্রাথমকি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিনুল ইসলাম জানান, কবি মাধব রায়ের সহযোগিতা পেয়ে গ্রামের হতদরিদ্র পরিবার থেকে আসা অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এখন সানন্দে পড়াশুনা করছে। কবির নিঃস্বার্থ সেবা গ্রামে শিক্ষার পরিবেশে আমূল পরিবর্তন আনছে বলে তিনি জানান।
কবি মাধব রায় (৫৯) ওই গ্রামের স্বর্গীয় দ্বীনোনাথ রায় ও জ্ঞানোদা রানীর ছেলে। ছাত্রজীবন থেকে কবিতা, গল্প, উপন্যাস লেখা অভ্যেস। কর্মজীবনে এসেও লিখছেন নিয়মিত। তার লেখা আটটি উপন্যাস ও কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। বাজারে এসব বিক্রিও হচ্ছে বেশ। এখান থেকে যে আয় আসছে  তা ব্যয় হচ্ছে জনকল্যাণে।
কবি মাধব রায় জানান, মানবিক মূল্যবোধ থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি এসব করছেন। সমাজের জন্য কিছু একটা করতে পারলে তিনি সানন্দে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন জানিয়ে বলেন, “হতদরিদ্র ও অনাথ পরিবারের শিশুরা একটু ভালোবাসা, সহযোগিতা পেলেই তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।”
আগামী দুই বছর পর চাকরি জীবনে অবসর আসছে। এরপর তিনি তার কাজের পরিধি আরো বাড়াবেন বলে জানালেন কবি মাধব রায়।

মন্তব্য করুন


 

Link copied