আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুর বিভাগ থেকে ২০ বছরে ২ লাখ ২৭ হাজার কর্মী বিদেশ গেছেন       দিনাজপুরে ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধারসহ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার        জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯      

 width=
 

পরিবহন ধর্মঘটে অচল দেশ

বুধবার, ১ মার্চ ২০১৭, সকাল ০৮:৪৭

 ডেস্ক: গণপরিবহন শ্রমিকদের আকস্মিক কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। কোনো ধরনের আগাম ঘোষণা ছাড়া মঙ্গলবার সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে সাধারণ যাত্রীরা আটকা পড়েছেন। পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ঢাকা ও মানিকগঞ্জের পৃথক আদালতের রায়ে এক চালকের মৃত্যুদণ্ড ও আরেক চালকের যাবজ্জীবন সাজায় ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার থেকে সারা দেশে এ কর্মবিরতি পালন করছেন শ্রমিকরা। এদিকে আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, বিচারিক প্রক্রিয়ায় আদালত দু’জন চালকের সাজা দিয়েছেন। ওই সাজা বাতিলের জন্য যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করতেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন শ্রমিক নামধারীরা। এর আগেও বিভিন্ন দাবিতে এভাবেই গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছেন শ্রমিকরা। অযৌক্তিক এ পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবি না মানা পর্যন্ত ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিক নেতারা। মঙ্গলবার বিকালে গাবতলীতে এক সমাবেশে আন্তঃজেলা ট্রাক চালক শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি তাজুল ইসলাম এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতা শাজাহান খান। তিনি চাইলে দুই মিনিটের মধ্যে এর সমাধান করতে পারেন।’ বিষয়টি নিয়ে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানান তিনি। মানিকগঞ্জে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহতের ঘটনায় জামির হোসেন নামের এক বাসচালকের যাবজ্জীবন সাজা হওয়ায় খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় দু’দিন পরিবহন ধর্মঘট চলার পর সোমবার প্রশাসনের আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা এলেও পরে শ্রমিক নেতারা কর্মসূচি বহাল রাখার কথা বলেন। এর মধ্যে ঢাকার সাভারে ট্রাকচাপা দিয়ে এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার ঢাকার আদালতে ট্রাকচালক মীর হোসেনের ফাঁসির রায় হলে ওই দিন রাতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে চলে যায়। মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালের পাশে পুলিশের একটি র‌্যাকার ভ্যানে আগুন দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দফতরের ডিউটি অফিসার মাহমুদুল হক বলেন, আমরা ৮টা ৫ মিনিটে আগুনের খবর পাই। মিরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। গাবতলী হানিফ বাস কাউন্টারের সামনের পুলিশ বক্সেও আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় আগ্নিনির্বাপণে যাওয়া ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ফিরিয়ে দেয় তারা। এ সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। সরেজমিন দেখা গেছে, পরিবহন ধর্মঘটে মঙ্গলবার ঢাকার মহাখালী, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার গাড়ি ছেড়ে যায়নি। ঢাকার ভেতরে উল্লেখযোগ্য গাড়ি চলাচল করেছে। রাজধানীর গাবতলী, মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দিতে দেখা গেছে। একই চিত্র ছিল সারা দেশে। সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। বাস না পেয়ে যাত্রীরা অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়লে পরিবহন শ্রমিকরা তাদের নামিয়ে দেন। তবে ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।পরিবহন ধর্মঘটে অচল দেশ ধর্মঘটে ফেরিঘাট ও বন্দরে আটকে পড়েছে পণ্যবোঝাই ট্রাক। বেনাপোল ও সোনামসজিদ স্থলবন্দরে পণ্য খালাস হয়নি। কাঁচা পণ্য ও মাছ ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী ট্রাকে পণ্য লোড দিয়ে আবার তা নামিয়ে নেন এবং স্থানীয় বাজারে কম দামে বেচে দিতে বাধ্য হন। বগুড়ায় ধর্মঘটে নাশকতার পরিকল্পনার সময় পাঁচ শিবির নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টঙ্গী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে সংঘর্ষ ও পরিবহন ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন ছয়জন। শ্রমিকদের কর্মবিরতির প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীতে বৈঠক করেছেন মালিক ও শ্রমিক নেতারা। ওই বৈঠকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, বাস মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্ল্যা, শ্রমিক ফেডারেশনের সহসভাপতি আবদুর রহিম বক্স দুদু, সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীসহ পরিবহন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা দাবি আদায় ও কর্মবিরতি প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট প্রত্যাহারের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে যুগান্তরকে জানান মশিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, শ্রমিকরা নিয়োগপত্র ফেরত দিতে শুরু করেছেন। তারা গাড়ি চালানো ছেড়ে দিয়ে মাঠে কাজ করতে চান। শ্রমিকরা কাজ না করলে গাড়ি চলবে কীভাবে? এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার নিয়ে আলোচনা চলছে। দেখা যাক কী হয়। এদিকে চালকের সাজা বাতিলের দাবিতে শ্রমিকদের কর্মবিরতি আদালত অবমাননার শামিল মন্তব্য করে এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে সংগঠনটি বলেছে, খ্যাতিমান চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ ৫ জনকে সড়ক দুর্ঘটনায় হত্যার দায়ে ঘাতক বাসচালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের আদালতের দেয়া রায়ের প্রতিবাদে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চুয়াডাঙ্গায়, গত রোববার থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এবং সাভারে ট্রাকচাপায় এক নারীকে হত্যার দায়ে সোমবার ঢাকার এক আদালত ট্রাকচালক মীর হোসেনের ফাঁসির রায় দেয়ার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে সারা দেশে আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘট পালন করছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। দেশের কোটি কোটি যাত্রীকে জিম্মি করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে ডাকা এ ধর্মঘট আদালত অবমাননার শামিল, অযৌক্তিক ও গণবিরোধী। নিন্ম আদালতের রায়ে সংক্ষুব্ধ হলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার পরিবর্তে ডাকা এ পরিবহন ধর্মঘট পেশিশক্তি প্রদর্শন করে জনগণকে জিম্মি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার একটি সুগভীর নীলনকশা। এতে আরও বলা হয়, সরকার যখন জনস্বার্থে তথা যাত্রীর স্বার্থে বা সড়ক নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু ভালো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চায় তখনই কিছু স্বার্থান্বেষী মালিক-শ্রমিক নেতা এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান। তারা ধর্মঘটের নামে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে সরকারের নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়নের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। সরেজমিন আরও দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর গাবতলী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালের সামনে গরুর হাট ক্রসিংয়ে ও দারুসসালামে সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে দু-একটা প্রাইভেট কার ও লেগুনা ছাড়া ওই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকদের আন্দোলনের কারণে সাভার, বাইপাইল, চন্দ্রা ও মানিকগঞ্জ থেকেও ঢাকায় গাড়ি ঢুকতে দেখা যায়নি। এ ছাড়া পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার ও বংশাল এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা যান চলাচলে বাধা দেন। মিরপুরে অনেক গাড়ি থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেন পরিবহন শ্রমিকরা। কোনো কোনো গাড়ি চলাচলের চেষ্টা করলে সেগুলোতে ভাংচুর চালান শ্রমিকরা। এর ফলে নগরীতে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা কমে যায়। এতে বিপাকে পড়েন অফিসগামীরা। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও পড়তে হয় চরম ভোগান্তিতে। কিছুসংখ্যক গাড়ি চলাচল করায় সেগুলোতে যাত্রীদের হুমড়ি খেয়ে উঠতে দেখা যায়। অনেকেই বিকল্প পথে সিএনজি, রিকশা ও ভ্যানে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছেন। শ্রমিকদের কর্মবিরতির যৌক্তিকতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাংলাদেশ শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, যৌক্তিক না হলে শ্রমিকরা আন্দোলন করত না। তিনি বলেন, মানিকগঞ্জে চালককে যে ধারায় বিচার করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ঢাকায় চালকের বিরুদ্ধে কখন হত্যা মামলার বিচার শুরু হল সে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। এভাবে সাজার খড়গ নিয়ে চালকরা গাড়ি চালাবে কীভাবে- প্রশ্ন রাখেন তিনি। এদিকে পরিবহন শ্রমিকদের কর্মবিরতির বিষয়ে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার পদক্ষেপ জানতে চাইলে বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শ্রমিকরা আন্দোলনে গেছেন আদালতের সাজার বিরুদ্ধে। সেখানে বিআরটিএ’র কিছুই করার নেই। বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার।

মন্তব্য করুন


 

Link copied