আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

রংপুরে ভন্ডপীরের নবী দাবী নিয়ে তোলপাড়; মুসল্লীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ

শনিবার, ২৭ জুলাই ২০১৩, বিকাল ০৫:২১

বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, র‌্যাব, ডিসি ও এসপির কাছে লিখিত অভিযোগে শাহানশাহ কবিরিয়া দরবার শরীফের সভাপতি হাফিজুল ইসলাম হাফিজ, সাধারণ সম্পাদদক জিয়াউল হায়দার খান টিপু ও সদস্য সাদেকুল আলম স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে বলা হয়, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা ইউনিয়নের জনৈক তৈয়ুবুর রহমানের পুত্র ফিরোজ কবীর(৪১) বিমানবাহিনী থেকে চাকুরীচ্যুত হয়ে প্রথমে লালমনিরহাটের হারাটি ইউনিয়নের শাহ আহমেদ কবির(র) এর মাজারের নামে শহরের মিশন মোড়ে বাসা নিয়ে নিজেকে পীর বলে দাবী করে। এবং ভক্তদের অগ্নিপূজা, পানি পড়া, দোয়া, তাবিজ, অলৌকিক চিকিৎসা ও মাজার সংস্কারের নামে ভক্তদের কাছ থেকে প্রচুর অর্থ আত্মসাত করে। এলাকাবাসী বিষয়টি টের পেয়ে ২০১০ সালে উক্তভন্ড পীরকে স্থানীয় সাবেক কাউন্সিলর মোস্তফার নেতৃত্বে আটক করে গনধোলাই দিয়ে থানায় দেয়। পরবর্তীতে রাঘোববোয়ালদের তদবিরে থানা থেকে বের হয়ে রাতারাতি লালমনিরহাট ত্যাগ করে ফিরোজ কবীর দয়ালবাবা। এভাবে লালমনিরহাট থেকে বিতাড়িত হয়ে রংপুর মহানগরীর শালবনে এসে বসবাস শুরু করে। সেখান থেকে রংপুর মহানগরীর স্টেশন রোডের শাহী মসজিদের পাশে একটি তিনতলা ভবনের তৃতীয় তলায় আস্তানা গেড়ে  আবারও পীরগিরি শুরু করে। এসময় তিনি নিজের নাম পরিবর্তণ করে হযরত শাহ ফিরোজ কবির(রহ) ওরফে দয়াল বাবা রাখেন। এবং তার নিজস্ব কিছু লোকজনের মাধ্যমে কিছুদিনের মধ্যেই শহরের নামী দামী বিভিন্ন স্তরের লোকজন তার ভক্ত হয়ে যায়।

বিভাগীয় কমিশনার, ডিআইজি, এসপি, ডিসি ও র‌্যাবের কাছে দেয়া লিখিত অভিযোগে ভক্তদের পক্ষে শাহনশাহ কবীরিয়া দরবার শরীফের সভাপতি হাফিজুর রহমান হাফিজ ও সেক্রেটারী জিয়াউল হায়দার খান টিপু ও সদস্য সাদেকুল আলম বলেন,  স্টেশন রোড থেকে  ২০১২ সালের ১ লা মে তিনি রংপুর মহানগরীর সেন্ট্রাল রোডের ৯৬ নম্বর বাসা ভাড়া নিয়ে শাহান শাহ কবিরিয়া দরবার শরীফের কার্যক্রম শুরু করে। সেখানে আসা যাওয়া শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের লোকজনের। এক পর্যায়ে তার বাহিনী দ্বারা প্রলুব্ধ হয়ে আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগনও তার ভক্ত হয়ে দরবারে আসা যাওয়া শুরু করি এবং তার শীষ্যত্ব গ্রহন করি। এসময় তিনি একটি স্থায়ী দরবার শরীফ নির্মাণের জন্য আমরাসহ ভক্তদের কাছে প্রস্তাব দেন এবং আমাদেরকে সেই দরবার শরীফের সভাপতি ও সেক্রেটারী মৌখিক ভাবে নির্বাচিত করেন( উল্লেখ্য এই তার দরবার শরীফে কোন কিছুই লিখিতভাবে করা হয় না)। এরপরই শুরু হয় দরবার শরীফ নির্মাণের জন্য অর্থ সংগ্রহ। আমরাসহ বিভিন্ন জনের ভক্তের কাছ থেকে ঋণ ও অনুদান সংগ্রহ করে দয়াল বাবার হাতে তুলে দেই। এরপর তিনি  মাহিগঞ্জের বড় হাজরায় স্থায়ী দরবার নির্মানের জন্য ২৪ শতক জমি ক্রয় করে স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। এসময় দয়ালবাবা আমাদেরকে বলেন, এই দরবার শরীফ নির্মাণের জন্য টাকা দিলে আমাদের ৩০ বছরের আয়ু বৃদ্ধি হবে। নির্বাচনে জিতবে। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।  আর না দিলে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যনসহ পরিবার ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা তার শেষোক্ত নির্দেশ নামায় ভতি হয়ে প্রায় ১৯ লাখ টাকা সেখানে ঋণ হিসেবে প্রদান করি। স্থাপনা নির্মাণের পর ২০১৩ সালের ১১ মার্চ দরবারটি সর্বসাধারণের জন্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেখানে প্রচুর পরিমান ভক্ত নিয়মিতভাবে আসা যাওয়া শুরু করে। দয়ালবাবা ভন্ডপীর ফিরোজ অগ্নিপূজার মাধ্যমে ভক্তদের বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধীর চিকিৎসা দেয়া এবং অর্থ কালেকশন করতে থাকেন। পাশাপাশি দরবার শরীফে  প্রতিদিন ধর্মীয় আলোচনা ও নিয়মকানুনের শেখানোর নামে প্রথমে গুরু দক্ষিণা হিসেবে মাথা নীচু করে হাতজোড় করে গুরুকে সম্মান জানাতে হয়। এবং ভক্তরা যতক্ষণ গুরুর কাছে থাকবেন ততক্ষনই তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। এই নির্দেশ অমান্য করলে ভক্তদের মারাত্বক ধরনের ক্ষতি এমনকি প্রাণনাশের সম্ভাবনার কথাও বলেন দয়ালবাবা। দয়াল বাবা প্রতিদিন নিয়মকানুন শেখানোর নামে বরনতে থাকেন তার নির্দেশ মানলে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ছাড়াই মানুষ বেহেশতে যেতে পারবে। পায়ে সেজদা দিলেই পরকালের আজাব থেকে মুক্তি মিলবে, আয়ু বাড়বে। এমনকি যাকে খুশি ওই দয়ালবাবা আয়ু বৃদ্ধি ও হরণ করতে পারেন।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতিদিনের আলোচনায় তিনি(ফিরোজ কবীর) নিজেকে ভক্তদের মাঝে বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য নবী রাসুল দাবী করেন (নাউজুবিল্লাহ)। তিনি পবিত্র কোরআন শরীফকে আরবী ভাষার একটি বই হিসেবে দাবী করে ভক্তদের বলেন, এই বইয়ে অনেক ভুল তথ্য আছে। সুতরাং কোরআনকে শ্রদ্ধাভক্তি  করার কোন যুক্তি নেই। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, এই কোরআনে সব ভাষাভাষিদের জন্য দয়াল একজন নবী ও রাসুল তৈরি করেছেন। বাংলাভাষাভাষিদের জন্যও একজন নবী ও রাসুল অবশ্যই আছেন। তিনি হচ্ছেন সেই নবী ও রাসুল।  আজ থেকে ১৩০০ বছর আগে লালমনিরহাটের শাহ আহমেদ কবির এবং বর্তমানে ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় রাহাত আলী শাহ এবং কুমিল্লার হোমনায় কালুশাহ এই তিন পীরের রুহানী সন্তান বলে দাবী করেন। তিনি আমাদের সহ ভক্তদের বলেন, দয়ালবাবা তাদের উপরই কেতাব নাজিল করেছেন, তাদের রুহানী সন্তান হিসেবে তিনি(ফিরোজ কবির) এখন বাংলাভাষাভাষিদের নবী বা রাসুল। এই আস্তানায় আগত ভক্তদের মধ্যে প্রশাসনের বেশ কিছু কর্মকর্তা, সাধারণ জনগন এবং অসংখ্য তরুন তরুনীও রয়েছেন। প্রথমে কেউ আসলে ভন্ড পীর ফিরোজ কবিরের নিজস্ব বাহিনী তাকে বিভিন্ন রোগ ব্যাধী ভালো হওয়া, প্রেমসহ মনোস্কামানা পুর্ন হওয়া, সম্পদ বৃদ্ধি, আয়ুস্কাল বৃদ্ধি এবং পরকালের আজাব থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের উদাহরণ দিয়ে প্রলুব্ধ করেন। এবং আদেশ অমান্যকারীদের উপর থেকে দয়ালবাবা (ফিরোজ কবির) দৃষ্টি সরিয়ে নিয়েল মৃত্যু হয় বলেও ভীতি প্রদর্শণ করা হয়। এভাবে তরুনী এবং নারীদের প্রেম, সন্তান জন্মানো, স্বামী বশে আনাসহ মনোষ্কামনা পূরণের নামে দয়ালবাবা ফিরোজ কবির প্রক্রিয়া হিসেবে তাদেরকে শারীরিকভাবে ভোগ করেন।  এইকথা বাইরে বললে তরুনীদের অপমৃত্যু হবেও দয়াল বাবা  তাদের হুশিয়ার করে দেন। এছাড়াও দরবারে একবার প্রবেশ করলে সে ভক্ত হয়ে যায়। যদি দয়াল বাবার কথা না শোনা হয় বা সমালোচনা করা হয়, তাহলে সেই ভক্তের নিজেরসহ পারিবারিক ক্ষতি হয়। এক পর্যায়ে আমরা জানতে পারি, আমাদেরসহ ভক্তদের দেয়া অনুদান ও ঋণ প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত দরবার শরীফটির ২৪ শতক জমিও ও স্থাপনা নিজের নামে করে নিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, মাহিগঞ্জে বড় হাজরায় বৃহৎ পরিসরে দরবার শুরু হওয়ার পর এসব বিষয় আরও ব্যাপক ভাবে চলতে থাকে। বিশেষ করে গুরু ফিরোজ কবীর কর্তৃক নিজেকে নবী রাসুল, স্বয়ং স্বত্তা হিসেবে দাবী এবং পবিত্র কোরআন শরীফ অবমাননা করে আয়াতের বিকৃত উপস্থাপনার বিষয়ে আমাদের মধ্যে আত্মোপলব্ধি হয়। এবং এসব বিষয় নিয়ে আমরা রংপুর মহানগরীর বিখ্যাত আলেমদের সাথে কথা বলি। তারা এসব শুনে হতবম্ব হন। এবং এসব চুড়ান্ত ভন্ডামী ও শিরিকী বলে আমাদেরকে জানান। বিষয়গুলো নিয়ে আমরা গুরুর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এবং আমাদেরকে বশ করতে না পেরে বিভিন্ন ধরনের কুৎসা রটান। এরপ্রেক্ষিতে আমরা আমাদের নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তওবা তাছির করে তার মুরীত্ব ত্যাগ করি। এরপরই তিনি আমাদের উপর ভীষনভাবে ক্ষুব্ধ হন। আমাদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি ঋণ হিসেবে দেয়া ১৯ লাখ টাকা ফেরত চাইলে তিনি আরও ক্ষুব্ধ হয়ে অভিশাপ দিতে থাকেন। এবং আমাদেরকে বলেন, তোরা ধ্বংস হয়ে যাবি। তোদের নামে অপহরণসহ বিভিন্ন মামলা হবে। নারী কেলেংকারীর মামলায় পড়বি। অপমৃত্যু হতে পারে। এখনও সময় আছে তোরা আমার চরণে সব অর্পণ করে ফিরে আয় ।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরে তার দরাবর ও মুরীদ্ব থেকে ফিরে আসি।  আমরা জানতে পেরেছি ওই ভন্ড দয়ালবাবা নামধারী অর্থ ও নারীলিপ্সু ফিরোজ কবির  দরবার শরীফে এভাবে নবী রাসুল ও কোরআনের বিরুদ্ধে কথা বলা ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখায় এলাকাবাসীও ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। অবিলম্বে বিষয়গুলো তদন্ত করে ভন্ড গুরু ফিরোজ কবিরকে গ্রেফতার ও  প্রতারিত ভক্তদের অর্থ ফেরতসহ আরও অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করতে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করা হয় লিখিত অভিযোগে।

এ ব্যপারে র‌্যাব-৫ রংপুর ক্যাম্পের এক কর্মকর্তা জানান, অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অভিযোগের ব্যপারে শাহানশাহ কবিরিয়া মাজার শরীফের পীর হযরত শাহ ফিরোজ কবির(র) জানান, আমি কোরআন ও নবীকে অবমাননা করিনি। তবে তিনি বাংলাভাষাভাষিদের জন্য একজন রসুল আছেন দাবী করে বলেন, তিনিই সেই রুহানী সন্তান।

মন্তব্য করুন


 

Link copied