সমতলের আদিবাসীদের জন্য ভ’মি কমিশন গঠন খুবই জরুরী। ভূমির জন্য সাঁওতাল বিদ্রোহ থেকে আরফ্রেড সরেন থেকে এখনো পর্যন্ত আদিবাসীদের লড়াই অব্যাহত রয়েছ্।ে ভূমির জন্য বা ভূমি রক্ষার লড়াই করেও হতে হচ্ছে ভূমির অধিকার বঞ্চিত। আদিবাসীদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ ও জোরপূর্বক ভূমি দখল করছে প্রভাবশালী ভূমিদস্যূরা। প্রতিবাদ করলেই ঘটে নির্যাতন, লুটপাট, ঘরবাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা। হতে হয় হত্যার শিকার। ভূমির অধিকার রক্ষার জন্য সংঘটিত হয়েছিল মহান সাঁওতাল বিদ্রোহ (১৮৫৫ সাল), খুন হতে হয়েছে নওগাঁ জেলার আদিবাসী নেতা আলফ্রেড সরেন (২৮ আগষ্ট, ২০০০ সাল), টাঙ্গাইল জেলার গীদিতা রেমা (২০ মার্চ, ২০০১ সাল), এবং নাম না জানা আরো অনেক আদিবাসীকেই প্রাণ দিতে হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভূমির জন্য আদিবাসীদের হত্যা, নির্যাতন এখনো চলছেই। সম্প্রতি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার বুলাকিপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর দিঘিপাড়া, ভালাইন, সিংগানালা আদিবাসী গ্রামগুলো ৬ জুন ২০১৩ তারিখে বাঙ্গালিরা হামলা চালায়। ৮ জুন রঘুনাথপুর দিঘিপাড়ার নিকোলাস মুরমুসহ তিনটি আদিবাসী ঘরবাড়ি সন্ত্রাসীরা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়। এছাড়াও ২২ জুন, ২০১৩ তারিখে নওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলার খেলনা ইউনিয়নের ভগবানপুর গ্রামের কৃষ্ণ মাহাতোকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২০০৯ সালের ১২ জুন তারিখে নওগাঁ জেলার পোরশা উপজেলাধীন খাতিরপুর(সোনাডাঙ্গা) গ্রামের আদিবাসীদের ৭৩টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও নির্যাতন এবং ২০১০ সালের ১২ জুলাই একই জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার নাকইল বাড়ামবাড়ী গ্রামের ৭২ বিঘা জমি দখলের জন্য আদিবাসীদের বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ, লুটপাট, মারধর ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকার গড়ে তোলা হচ্ছে ইকোপার্ক, শিল্প-কারখানা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান। এসব কারণেই প্রতিনিয়তই বেহাত হচ্ছে বা হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসীদের ভূমি এবং ভূমির অধিকার।
আদিবাসীরা দীর্ঘদিন থেকে আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনসহ অন্যান্য অধিকার সমূহের দাবি করে আসছে। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের আদিবাসী পরিপন্থী আইন প্রণয়নসহ অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্র সবসময়ই আদিবাসীদের প্রতি কার্বনকপি মনস্তত্ত্ব প্রকাশ করে আসছে।
লেখক: সহ-সভাপতি, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটি।