বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট ২০১৩, রাত ০১:০৩
রাত পোহালেই ১৫ আগস্ট, জাতীয় শোক দিবস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৮তম শাহাদত বার্ষিকী। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জাতি যে সূর্যস্নাত অধ্যায়ের সূচনা করেছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর, তা রক্তস্নাত অধ্যায়ে পরিণত হলো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। আজন্ম ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের অধীনে থাকা একটি জাতিকে যিনি ঐক্যবদ্ধ করলেন, স্বপ্ন দেখতে শেখালেন, দিলেন নতুন পরিচয়-নতুন মানচিত্র, বুকে আশ্রয় দিলেন প্রতিটি মানুষকে, তারই রক্তে রঞ্জিত হলো দেশ। সূচিত হলো একটি কলঙ্কিত যুগের। বঙ্গবন্ধু হত্যার সেই বিয়োগব্যথা রক্তের অক্ষরে লিখেও কোনো দিন শেষ করা যাবে না। তারপরও বাঙালি জাতি প্রতি দিন, প্রতি রাতে অপেক্ষায় থাকে নিরন্তর- ‘যদি রাত পোহালেই শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু কেবল একজন নেতাই নন, তিনি এই ভূখণ্ডের নাগরিকদের জন্য একটি যুগের স্বপ্নদ্রষ্টা ও বাস্তব রুপদাতা। মহাপুরুষরা ইতিহাস রচনা করেন, আবার কাপুরুষরাও ইতিহাস রচনা করেন। মহাপুরুষদের রচিত ইতিহাস একটি দেশ বা কালের মানুষের জন্য খুলে দেয় নতুন দ্বার। মানুষকে পথ দেখায় আলোর। জাতিকে করে ঐক্যবদ্ধ, আত্মবিশ্বাসী ও ভবিষ্যতমুখী। আর কাপুরুষদের রচিত ইতিহাস সেই পথকে করে অবরুদ্ধ। ভবিষ্যতের পথে নির্মাণ করে এক অপ্রতিরোধ্য দেয়াল। কিন্তু তারপরও তা ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ যেমন অবিচ্ছিন্ন, ১৫ই আগস্টও এ জাতি ও রাষ্ট্রের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য। এ কলঙ্ক কোনো দিনই মুছে ফেলা যাবেনা। ১৪ আগস্ট তিমিরান্তে যে হত্যাযজ্ঞের সূচনা হয়েছিল তার ফলে জাতি হিসেবে আমরা এক চির অমানিশায় নিক্ষিপ্ত হলাম। সে অন্ধকার আজও দূর হয়নি। বঙ্গবন্ধু ভুল করেছিলেন। তিনি ভুলে গিয়েছিলেন যে, ২১৪ বছর আগের লর্ডক্লাইভ-মীর জাফরের বংশধর ও প্রেতাত্মারা তখনো জীবিত ছিলেন। তাইতো কিসিঞ্জার-আথারটন বলুন আর ফারুক-রশিদ-ডালিমই বলুন, সিরাজউদ্দৌলার উত্তরসূরীদের তারা মুখোশ পরে নগ্ন ছুড়ি নিয়ে খুঁজে বেড়াবেন, এটাই স্বাভাবিক। সেটা দুশ’ বছর কেন, হাজার বছর পরের ইতিহাসও এভাবেই রচিত হবে। কিন্তু ইতিহাসের পরম শিক্ষাতো এই যে, আমরা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেই না। তাই জাতির জনককে খুন করেও সে জাতির রাষ্ট্রদূত হওয়া যায়! বুক ফুলিয়ে বলা যায় আমিই খুনি! শুধু তাই নয়, জাতীয় রাজনীতিতেও তাদের ঠাই হয়। ঘাতকচক্র তাদের পুরোনো সেই নীল নকশার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ইতিহাসের গায়ে যে কলঙ্ক লেপন করেছিল ১৫ই আগস্ট, তারই ধারাবাহিকতায় জাতির জনকের নাম-নিশানাও মুছে ফেলার চক্রান্ত চলে দীর্ঘ দুই দশক ধরে। কিন্তু ইতিহাসতো একবারই রচিত হয়। কালের গর্ভে তা কখনো হারিয়ে যায় না। সময়ের আবর্তে যা হারিয়ে যায়, তার নাম ইতিহাস নয়- ঘটনামাত্র। সব ঘটনাই ইতিহাস নয়। কিছু কিছু ইতিহাস। স্বাধীনতার মহানায়কদের কখনো মৃত্যু হয় না। ইতিহাসের অমোঘ সত্যকে এতো সহজে মুছে ফেলা যায় না। টুঙ্গিপাড়ার যে রাখাল রাজা বাঙালি জাতিকে মুক্তির গান শোনালেন, স্বাধীনতার কবিতা শোনালেন, উপহার দিলেন শান্তির পায়রা, দিলেন নতুন মানচিত্র- তার বজ্রবাণী আজও জাতিকে পথ দেখায়, হৃদয়কে আন্দোলিত করে। মহানায়করা বুঝি এমনই হন। বঙ্গবন্ধু হত্যা নিছক একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়। পৃথিবীর ইতিহাসে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড এটি। একসঙ্গে কোনো পরিবারের এতো সংখ্যক সদস্যকে এর আগে এতো নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়নি। নারী-পুরুষ-শিশু কাউকেই সেদিন রেহাই দেয়নি হত্যাকারীরা। বছর দুই আগে শেখ রাসেলের গৃহ শিক্ষিকা গণমাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। রাসেল নিহত হওয়ার দুই-একদিন আগে ওই শিক্ষিকা ওকে পড়াতে গিয়েছেন। রাসেন সেদিন একটি অংক ভুল করেছিল। শিক্ষিকা ছোট্ট করে ওকে দিলেন একটি কান মলা। ঘটনাটি অতি নগণ্য। কিন্তু সেই শিক্ষিকা আজো সেই স্মৃতি মনে করে অশ্রু ধরে রাখতে পারেন না। রাসেলকে নিয়ে এদেশের মানুষের তেমন কোনো স্মৃতি নেই। খাওয়ার টেবিলে বাবার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট রাসেল অথবা পারিবারিক গ্রুপ ছবিতে বাবার কোলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রাসেলই আমাদের স্মৃতি! কী নিদারুণ শিশু হত্যা! বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট রাজনৈতিক কবিতার (৭ মার্চের ভাষণ) রচয়িতা ও তার বাস্তব রূপকার (বাংলাদেশ)। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের সেই ভাষণের মাধ্যমে তিনি জাতিকে স্বাধীনতার যে আহবান জানালেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন জাতি-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার করে তারই বাস্তবায়ন করলেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হত্যার মধ্য দিয়ে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা কোনো দিনই পূরণ হবার নয়। শুনেছি সেদিন আকাশে ছিল শ্রাবণের মেঘ। ৩২ নম্বরে রক্তের যে ধারা সেদিন বইছিল, শ্রাবণের বৃষ্টির সঙ্গে মিশে তা প্রবাহিত হলো পদ্মা-মেঘনা-গৌরির স্রোতধারায়। বঙ্গবন্ধু তাই একটি অবিরাম শোকের নাম।
এরশাদুল আলম প্রিন্স, বাংলানিউজ
মন্তব্য করুন
টপ নিউজ’র আরো খবর
সংশ্লিষ্ট
ভারত থেকে ৩ দিনের মধ্যে পেঁয়াজ আসবে: বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী
পেঁয়াজ রপ্তানি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করল ভারত
মালিকপক্ষকে জলদস্যুদের ফোন, যে কথা হলো
কমলো সোনার দাম