আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

ধর্ষণের মিছিল থামাবে কে?

বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট ২০১৭, দুপুর ০১:০১

লীনা পারভীন

গোটা দেশ আজ ধর্ষণের মিছিল নিয়ে চিন্তিত। কেন ঘটছে এমন নিষ্ঠুরতা? ভাবতে চাই না তবুও ভাবতে হয়। ভাবি, কারণ আমি মানুষ, আমি একজন নারী। বুঝার চেষ্টা করি পুরুষের মনস্তত্ত্ব, ধর্ষকের মনস্তত্ত্ব। কিন্তু বুঝতে পারি না। মাথা আউলে যায়। হিসাব মিলে না কিছুতেই।

ছোটবেলা থেকে শিখে এসেছি এই জগতে যত প্রাণী সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে মানুষ সেরা। এর একটাই কারণ, মানুষের বিবেক নামক একটি আলাদা বিষয় আছে যা মানুষকে গাইড করে, ভালো মন্দ বুঝতে শিখায়। নিজেকে কেমন করে আরো সেরা করা যায় সে সম্পর্কে তাকে ভাবতে বাধ্য করে। সব শিক্ষাই যেন মিথ্যা হয়ে যাচ্ছে।

প্রতিটা দিন একেকটা ঘটনা পড়ি আর নিজের মনে ভেবে আকুল হই তবে কী প্রকৃতি নারীদেরকে চায় না? তবে কী নারীদের জন্মাতে নেই? যারা আমরা নারী হয়ে জন্মেছি তবে তাদের এখন কী করা উচিত?

জানি অনেকেই বলবেন এসব দূর্বলের আস্ফালন। নারীদেরকে লড়াই করতে হবে, এগিয়ে যেতে হবে, জ্বলে উঠতে হবে আপন শক্তিতে। না এসবে আজকাল আর সাহস পাই না। আমার পাশের পুরুষটিকে বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমার পুরুষ বন্ধুটিকে বিশ্বাস করে ঠকছিনাতো? আদৌ কী কোন পুরুষকে বিশ্বাস করা যায়? সারাক্ষণ মাথার ভেতর কিলবিল করছে এসব প্রশ্ন।

আমার পুরুষ বন্ধুরা হয়ত এতে মন খারাপ করবেন। তারা বলবেন সব পুরুষ এক নয়। সব পুরুষ ধর্ষক নয়। হ্যাঁ, আমিও বিশ্বাস করতে চাই। আমার মত হাজারো লক্ষ নারী বিশ্বাস করতে চায় সব পুরুষ ধর্ষক নয় কিন্তু প্রতিদিনের ঘটনা আমার সেই বিশ্বাসকে নড়বড়ে করে দেয়।

আমি যখন দেখি পিতার হাতে ধর্ষিত হয়েছে কন্যা, যখন দেখি প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রেমিক পুরুষ ধর্ষণ করেছে তার নারী বন্ধুকে, খবর যখন আসে সম্পর্কে চাচা/ মামা/ দাদারা ধর্ষকের রূপে আবির্ভুত হচ্ছে তখন আমার মত নারী হয়ে জন্ম নেয়া মানুষগুলো সমগ্র পুরুষের সাথে সম্পর্ক নিয়ে শঙ্কায় পড়ে। পিতা পুরষ, প্রেমিক পুরুষটিকেও তখন নিরাপদ মনে হয় না। এই যে অবিশ্বাসের সম্পর্ক সে কী কেবল আমার সমস্যা? না, সে আমার চিন্তার সমস্যা নয়। চারপাশের পুরুষ নামক শয়তানগুলো, সেই অবিশ্বাসী ধর্ষক পুরুষগুলো আমার মত নারীদের মধ্যে অবিশ্বাসের বীজ বুনে দিয়েছে, দিচ্ছে।

একদিকে যেমন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে আরেকদিকে, আসামীদের গ্রেফতারের খবরও পাচ্ছি কোথাও কোথাও। খুব অল্প হলেও কিছু কিছু ঘটনার বিচার হচ্ছে। তবে সে হার ধর্ষণের ঘটনার তুলনায় খুবই স্বল্প।

পরিসংখ্যান কী বলে? সম্প্রতি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৭ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই পর্যন্ত অন্তত ২২৯ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছে ৮ জন। ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে আরও ২২ জন শিশুকে। ধর্ষণের শিকার শিশুদের মধ্যে ২২২ জন মেয়ে শিশু।

ওই রিপোর্টে আরো বলা হয়েছে সবচেয়ে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে শিশু নির্যাতন ও শিশু ধর্ষণের ঘটনায় মামলা হলেও এর অগ্রগতি কম। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত অপরাধী বিচারের আওতায় এলেও অধিকাংশই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এত কেবল কন্যা শিশুদের হিসাব। তার বাইরে রয়ে গেছে তনু’র মত আরো শত শত তনুর ধর্ষণের হিসাব। আগষ্ট মাসে পুলিশ সদর দফতরের ত্রৈমাসিক অপরাধ সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে প্রতিদিন গড়ে ১২টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে।

সমাধান কী? চলছে নাগরিক আলোচনা। কেউ বলছে, স্পেশাল ট্রাইবুনাল করে এই ধর্ষণের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। কেউবা বলছে ধর্ষকদের পুরুষাঙ্গ বিকল করে দিতে হবে। কেউ দাবি তুলছেন ধর্ষকদের ফায়ারিং স্কোয়াডে নিতে হবে। সমাজ সচেতন অনেকেই আবার পরামর্শ দিচ্ছেন নারীদের চলাফেরার সময় সাথে ধারালো অস্ত্র রাখার।

ইয়েমেনের একটি নিউজ ফেসবুকে বেশ আলোড়ন তুলেছে। সেখানে তিন বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে আসামীকে প্রকাশ্যে সবার সামনে গুলি করে হত্যা করেছে সেদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। একই শাস্তির দাবিও উঠেছে আমাদের দেশে। বাস্তবে দেশে আইনের শাসন কায়েম ব্যতিত এবং ধর্ষণের মত মানবতা বিরোধী ঘটনাকে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে মোকাবিলা না করলে ধর্ষণের এই হোলি খেলা বন্ধ করা মুশকিল না কেবল, অসম্ভবও বটে।

একদিকে যেমন ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের মত কঠিন করার প্রয়োজনীয়তা আছে ঠিক তেমনি সমাজে নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টানোর লড়াইটাও চালাতে হবে জোরেশোরে। কেউ কেউ যৌনপল্লী উচ্ছেদকেও এই ধর্ষণের হার বাড়ার পিছনে কারণ বলে মনে করছেন। কারণ যাই হোক আমরা এর সমাধান চাই। সেটা যে পথেই হোক আমরা নারী ও কন্যা শিশুদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা চাই। আইন করে শাস্তির বিধান এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানাই সরকারের কাছে।

পাশাপাশি সরকার এবং বেসরকারী পর্যায়ে একটি ডায়ালগ বিশ্লেষণ করে সামাজিকভাবে সমাধানের জন্য কী কী উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন এবং সেখানে কার কী ভুমিকা হবে সেটিও নির্ধারণের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। ১৯৭১ সালের ধর্ষণকে যেমন গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল ঠিক তেমনি সময় এসেছে আজকে আবার ধর্ষণের মত একটি সামাজিক ব্যাধিকে সভ্য সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য হুমকী হিসাবে নিয়ে তার প্রতিকারে সরকারী বেসরকারী উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার।

লেখক : কলাম লেখক ও সাবেক ছাত্রনেতা।

মন্তব্য করুন


 

Link copied