আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: দিনাজপুরে ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধারসহ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার        জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে      

 width=
 

কুড়িগ্রামে বিচারক সংকট; ২২ হাজার মামলা ঝুলছে

শনিবার, ১২ আগস্ট ২০১৭, দুপুর ০১:০৫

এর মধ্যে জজ আদালতে ১২ হাজার ২৫০ ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ হাজার ৬৫৫টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। মামলাজটে বিচারপ্রার্থীরা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মামলা কাঁধে ঘুরে ঘুরে অনেকেই নিঃস্ব হওয়ার পথে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারকের ৯টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র তিনজন। এর মধ্যে অ্যাডিশনাল চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদটি ফাঁকা রয়েছে প্রায় এক বছর ধরে। মাত্র তিনজন বিচারক দিয়ে আমলি আদালত ও বিচার আদালতের বিচার কার্যক্রম চলছে। এ আদালতে বর্তমানে ৯ হাজার ৬৫৫টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে বিচার ফাইলে মামলার সংখ্যা চার হাজার ৫১৩টি, আমলি আদালতে মামলার সংখ্যা পাঁচ হাজার ১৪২টি।

আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ম্যাজিস্ট্রেট সংকটের কারণে প্রতিদিনের করা মামলা ও জামিন আবেদন নিষ্পত্তি ছাড়া বিচারের অন্য প্রক্রিয়াগুলো স্থবির হয়ে আছে।

এ আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মহব্বত বিন খন্দকার জানান, বিচারাধীন মামলার সাক্ষ্য নেওয়ার কাজ প্রায় বন্ধ আছে। ফলে মামলার জট আরো বাড়ছে। দৈনন্দিন কাজ করতেই বিচারকরা হিমশিম খাচ্ছেন।

একই অবস্থা কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে। এই আদালতে সিনিয়র সহকারী জজের ৯টি পদের মধ্যে চারটি শূন্য। নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকের পদটি শূন্য এক বছর ধরে। ট্রাইব্যুনালে আলাদা নিয়মিত বিচারক নেই। ফলে বাড়ছে মামলার জট। মামলায় সহায়তাকারী পেশকারসহ অন্যান্য ৫০টি পদ শূন্য থাকলেও পূরণের উদ্যোগ নেই।

গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী এ আদালতে ১২ হাজার ২৫০টি মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এর মধ্যে দায়রা মামলা ৮৮১টি, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা ৪৬৬টি, ফৌজদারি আপিল মামলা ১৬৭টি, এসিড দমন অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলা ২০টি, অন্যান্য মামলা ছয় হাজার ১২৫টি, মিস মামলা এক হাজার ৯১৬টি, ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল মামলা এক হাজার ২৩৮টি ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল মামলা রয়েছে ৮৪৮টি।

এ আদালতে কোনো কোনো মামলা ১৫ বছর ধরে চললেও নিষ্পত্তি হচ্ছে না। অনেকেই দিনের পর দিন কারাগারে আছে মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। ২০০২ সালে ঢুষমারা থানায় করা জসিম উদ্দিনের মাদক মামলা ও ২০০৪ সালে রাজারহাট থানায় করা মজনু হত্যা মামলাটি দীর্ঘদিন নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।

আদালতে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দিনের পর দিন মামলায় হাজিরা দিতে গিয়ে অনেকেই নিঃস্ব হওয়ার পথে। উলিপুরের অনন্তপুর গ্রামের সাইদুর রহমান জানান, জমি নিয়ে বিরোধে তাঁদের নামে পাঁচটি মামলা হয়েছে। বিচারকের অভাবে এগুলো নিষ্পত্তি না হওয়ায় আদালতপাড়ায় তাঁদের ঘুরতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে এক বিঘা জমি পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি করে মামলায় খরচ করা হয়েছে।

২০০৯ সালে চিলমারীর রহমান হত্যা মামলার আসামি মনিরুজ্জামান। কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স করছেন তিনি। মনির জানান, মাসে দুই মাসে হাজিরা দিতে হয় আদালতে। সংসারে অভাব দেখা দেওয়ায় চাকরির খোঁজে ঢাকায় যাবেন তারও উপায় নেই।

জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাকারিয়া মিঞা জানান, বিচারক স্বল্পতার কারণে অনেকেই সময়মতো বিচার পাচ্ছেন না। এ কারণে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ন্যায় বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রেও শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

আদালত সূত্র জানায়, বিচারক সংকটের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ১৫ অক্টোবর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন উদ্বোধনের পর এখনো ঠিকাদার ভবনটি হস্তান্তর না করায় এজলাসের অভাবে বিচারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, দিনের পর দিন বিচারকের অভাবে মামলার সংখ্যা বাড়লেও বিচারক পদায়নের ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ নেই। ফলে দরিদ্র এ জনপদের বিচারপ্রার্থীরা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied