আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: রংপুর বিভাগ থেকে ২০ বছরে ২ লাখ ২৭ হাজার কর্মী বিদেশ গেছেন       দিনাজপুরে ছিনতাইকৃত মালামাল উদ্ধারসহ ছিনতাইকারী চক্রের দুই সদস্য গ্রেপ্তার        জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯      

 width=
 

সেই নির্যাতিত ‘মা’ কে বাড়ি তৈরি করে দিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের ডিসি!

শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বিকাল ০৬:৪১

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ও বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় “বড় ছেলে” নাটক নিয়ে অনেকেই আলোচনা-সমালোচনাও করেছেন। নাটকটি সকলের মনে নাড়া দিয়েছে যা পত্র-পত্রিকায় খবর হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে। একটি পরিবারের বড় ছেলেদের দায়িত্ব কতটুকু ও পরিস্থিতি কিভাবে সামলাতে হয় তা লেখক সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন নাটকের মাধ্যমে।

আর ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ‘বড় ছেলে’ হিসেবে একটি পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কতটুকু তা নির্যাতিত শতবর্ষী বৃদ্ধা মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার পর এবার ‘মা’ এর জন্য বাড়ি তৈরি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। তিনি বুঝিয়ে দিলেন সকলকে একটি জেলার জন্য একজন জেলা প্রশাসককে “বড় ছেলের” মত দায়িত্ব পালন করতে হয়।

বর্তমানে হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গীপাড়া এলাকার নির্যাতিত বৃদ্ধা মা তাসলেমা খাতুন ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বৃদ্ধা বাড়ি ফিরতে পারবেন বলে হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা: আবু মো: খায়রুল কবির জানিয়েছেন।

হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া এলাকার স্থানীয় সমাজকর্মী আনোয়ার হোসেন জানান, ভাত খেতে চাওয়ায় নিজ বড় ছেলে বদিরউদ্দীন বৃদ্ধ মা’কে নির্যাতিত করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। পরে খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক ওই বৃদ্ধা ‘মা’ কে ৭০ কি:মি: জেলা সদর থেকে এসে একটি পরিত্যক্ত ঝুপড়ি ঘর থেকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এখন আবার ওই বৃদ্ধা ‘মা’ এর জন্য একটি বাড়ি তৈরি করে “বড় ছেলের” দায়িত্ব পালন করলেন আমাদের ডিসি স্যার।

হরিপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ বেগ জানান, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল স্যারের নির্দেশে ছেলের হাতে নির্যাতিত বৃদ্ধা মায়ের জন্য একটি টিনের ঘর, নলকূল ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃদ্ধা মা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরলে নতুন বাড়িতে উঠবে বলে তিনি জানান।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শতবর্ষী বৃদ্ধা তসলিমা খাতুনকে নতুন বাড়ি তৈরির খবর জানানোর পরে তার অনুভুতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, হামার ডিসি মোর বড় ছুয়া (আমার বড় ছেলে)। হাসপাতালত মোর প্রতিদিন খবর নিছে (প্রতিনিয়ত খোজখবর নিয়েছে)। শুনিছু এলা নতুন বাড়ি তৈরি করে দিছে (এখন নতুন বাড়ি তৈরি করে দিয়েছে)। বাড়ি গেলে নতুন বাড়িত থাকিম আর বড় ছেলের তানে দোয়া করিম (বাসায় গিয়ে নতুন বাসায় ডিসির জন্য দোয়া করবো)।

ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, ১৫ আগষ্ট গভীর রাতে বৃদ্ধা মাকে মারধরের বিষয়টি জানতে পেরে খুবই ব্যাথিত হয়েছি। তাই পরদিন সকালে বৃদ্ধা ‘মা’ কে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহন করি। যেহেতু বৃদ্ধা ‘মা’ এর থাকার ঘর নিয়ে সমস্যা তাই মায়ের জন্য সন্তান হিসেবে একটি টিনের ঘর ও বাথরুম তৈরি করে দিয়েছি। যেন শেষ জীবন পর্যন্ত নিরাপদে থাকতে পারেন তিনি। শীঘ্রই হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বৃদ্ধা ‘মা’ কে নতুন বাড়িটি উপহার দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গ, গত ১৫ আগস্ট দুপুরে ছেলের বউয়ের কাছে ভাত চেয়েছিলেন ঠাকুরগাঁও হরিপুর উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের শতর্বষী তসলিমা খাতুন। এ কথা ছেলে দবির উদ্দিন জানতে পেরে লাঠি দিয়ে মাকে মারধর করেন। লাঠির আঘাতে তসলিমার বাম চোখ থেঁতলে যায়। পরদিন সকালে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল ওই বৃদ্ধা ‘মা’ কে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

‘মা’ কে নির্যাতনের অভিযোগে ছেলে দবির উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই রাতে উপজেলার ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে বৃদ্ধা ‘মা’ তার সন্তানের প্রতি কোন অভিযোগ নেই জানায় ও ছেলেকে দেখার আকুতি করলে আদালত নির্যাতনকারী বড় ছেলে দবির উদ্দিনের জামিন মঞ্জুর করেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied