ডেস্ক : সারা দেশে কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে মাদক বিক্রেতাদের মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের বাঁচানোর পথ খুঁজছে চট্টগ্রামের মাদক ব্যবসায়ীরা। যাদের অধিকাংশই এখন গা-ঢাকা দিয়েছে। কেউ কেউ বিদেশে পাড়ি দিয়েছে। অনেকে পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করছে। আর এ বিষয়টি নজরে আসেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামরুজ্জামান এই সত্যতা স্বীকারও করেছেন।
তবে তিনি বলেন, প্রথমে আসেনি এখন পুরোটাই নজরে। গা-ঢাকা দেয়া মাদক ব্যবসায়ীদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। এদের অধিকাংশই ইতিমধ্যে গা-ঢাকা দিয়েছে। তাদের মধ্যে ইয়াবা পাচার করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়া মাদক ব্যবসায়ীরা কেউ কেউ বিদেশে পাড়িও জমিয়েছে। তবে তা সংখ্যায় কম। মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিমান ও স্থলপথে বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।
এরপর গত কয়েকদিনে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে আরো কয়েকজনের মৃত্যু ঘটে। আর এতেই মাদক বিক্রেতাদের কাছে মেসেজ পৌঁছে যায়। ফলে তাদের বুকে কাঁপন ধরে। তারা এখন মাদক পাচার ও বিক্রির চেয়ে নিজেকে বাঁচাতে গা-ঢাকা দিয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা পুলিশের তৈরি মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী মাদক ব্যবসায়ীদের কোনো ছাড় দিতে নারাজ। র্যাব প্রধানও বলেছেন মাদক থাকলে তা র্যাব কার্যালয়ের সামনে রেখে যেতে। কিন্তু কোনো কিছুতেই কান দেয়নি মাদক ব্যবসায়ীরা।
ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে নামে। চট্টগ্রাম পুলিশ সুপার নুরে আলম মিনা বলেন, ইয়াবা পাচারকারীদের তালিকা তৈরি করতে গিয়ে চট্টগ্রামে রাতারাতি গজে উঠা শতশত কোটিপতির সন্ধান মিলেছে। এ নিয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। যেখান থেকে নির্দেশনা পেয়ে আমরা অভিযানে নেমেছি।
তিনি বলেন, ২০০৬ সাল থেকেই মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে ইয়াবার চালান আসতে থাকে এ দেশে। অবস্থা এমন যে কয়েকবছর আগেও টেকনাফে পেশা হিসেবে যারা জেলে, রিকশাচালক, বেকার যুবক, পিঠা বিক্রেতা, কৃষক বা ক্ষুদ্র লবণচাষি ছিলেন, তাদের অধিকাংশই এখন কোটিপতি, গাড়ি হাঁকিয়ে চলে। গ্রামের রাস্তার দু’পাশে সব সুরম্য বাড়িঘর। এর মধ্যে অন্যতম টেকনাফের নাজিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা এজাহার মিয়ার ছেলে নূরুল হক ওরফে ভুট্টো। একটি রিকশা কেনার সামর্থ্য ছিল না নূরুল হকের। বসতবাড়ি বলতে ছিল গোলপাতার একটি ঘর। সেই নূরুল হক এখন নাজিরপাড়ায় দুটি বাড়ির মালিক। নূরুল হক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত। তিনি একা নন, তাঁর সঙ্গে আছেন তাঁর পিতা এজাহার মিয়া, ভাই নুর মোহাম্মদ ওরফে মংগ্রী, ভগ্নিপতি নূরুল আলম, ভাগিনা জালাল উদ্দিন, বেলাল, আবছার উদ্দিন, হেলাল, হোছেন কামাল ও নুরুল আমিন ওরফে খোকন। তাঁরা সবাই ইয়াবা মামলার আসামি। আনোয়ারা গহিরায় ইয়াবা সিন্ডিকেটের প্রধান মোজাহের আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর এলাকার চান মিয়ার ছেলে।
ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে তিনি ইয়াবা পাচার করতেন। র্যাবের হাতে ধরা পড়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। নগরীতে মোজাহেরের আছে ছয়তলা বাড়ি। ইয়াবা ব্যবসায়ী জিয়াউর রহমান নয়-দশ বছর আগেও ছিলেন বেকার। টেকনাফ মৌলভীপাড়ার চোরাচালানের ঘাট নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পর ইয়াবা পাচার শুরু করেন। এখন দুটি মাইক্রোবাস ও চারটি ভারতীয় বিভিন্ন মডেলের দ্রুতগামী মোটরসাইকেলের মালিক। একটি আলিশান বাড়িও বানিয়েছেন। তাঁর ছোট ভাই আবদুর রহমান ও কামাল হোসেন ইয়াবা ব্যবসায় সক্রিয়। ৪ঠা মে শুক্রবার চট্টগ্রাম হালিশহরের শ্যামলী হাউজিং সোসাইটির একটি ফ্লাটে ধরা পড়ে ইয়াবার সবচেয়ে বড় চালান। এই অভিযানে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ মো. আশরাফ (৩৪) ও হাসান (২৪) নামে দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে আশরাফ ছিলেন সৌদি আরব প্রবাসী। তাদের বাড়ি বান্দরবান পার্বত্য জেলায়।
আশরাফের শ্যামলী হাউজিং সোসাইটির ওই ফ্লাট ছাড়াও নাসিরাবাদে একটি ফ্লাট ও বাকলিয়ায় একটি প্লট আছে। রয়েছে দুটি গাড়িও। গত বছর ৩১শে আগস্ট সিদ্দ