কুরবান আলী, দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি ॥ ড্রেন-নর্দমা, টয়লেট পরিস্কারের যে চাকুরীটা হরিজন-সুইপারদের হওয়ার কথা দিনাজপুরে তা হচ্ছে না। হরিজনদের চাকুরী পেয়ে যাচ্ছে অন্য কেউ, অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা।
এমন ঘটনা দিনাজপুর জেলার প্রায় সব সরকারী অফিসেই। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুর সদর হাসপাতালে সুইপার, ঝারুদারের পদে চাকুরী করছেন মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন। অথচ এটা হওয়া উচিত হরিজনদের।দিনাজপুরের বাসফর ও হেলা সম্প্রদায়সহ প্রাপ্ত বয়সী হরিজনদের সংখ্যা এক হাজারেরও বেশি। সুইপার-ঝারুদারের কাজ তাদেরই করার কথা। কিন্তু তারা এই পদে চাকুরী পাচ্ছে না। হরিজন বাসফর কল্যাণ সমিতির সভাপতি দিলীপ বাসফর বলেন, চাকুরী নিতে ৪/৫ লাখ টাকা দিতে হয়। আমরা টাকা দিতে পারিনা। তাই চাকুরী হয়না। আমাদের চাকুরী মুসলমানরা লাখ লাখ টাকায় কিনে নিচ্ছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাজকুমার বাসফর বললেন, আমাদের মধ্যে মাত্র ১২/১৩ জন আছে, যারা সরকারী চাকুরী করছেন। আমাদের চাকুরী টাকার বিনিময়ে অন্য জাতির লোকেরা নিয়ে নিচ্ছে। ফলে আমাদের বেশির ভাগ লোক বেকার জীবন-যাপন করছে। অর্থ কষ্টে দিন পার করছে।
স্থানীয় নাগরিক উদ্যোগ এর আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ হরিজনদের চাকুরী অন্য সম্প্রদায়ের লোকজনের হাতে চলে যাওয়াটাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দিনাজপুর সদর হাসপাতালে সুইপার-ঝারুদারের ১২টি পদে মুসলিমরা চাকুরী পেয়েছে। অথচ তারা কোন কাজ করে না। তারা ৫০০/১০০০ টাকা মাসে ১ জন করে সুইপার রেখে দিয়েছেন। ঐ সুইপাররা দিনে ১/২ বার কাজ করে চলে যায়। তারা কাজের বিনিময়ে পাচ্ছে সামান্য টাকা। অথচ কাজ না করেই বেতন নিয়ে নিচ্ছে চাকুরীপ্রাপ্তরা।
আবুল কালাম আজাদ মনে করেন, সুইপার, ঝারুদার, পদগুলো শুধুমাত্র হরিজনদের জন্যই সংরক্ষিত রাখা উচিত। কেননা ৪/৫ লাখ টাকায় চাকুরী নেওয়া হরিজনদের পক্ষে সম্ভব নয়।
যে চাকুরী হরিজনদের হওয়া উচিত, তা অন্যের দখলে চলে যাওয়ায় দিনাজপুরের হরিজন সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। চাকুরী তাদেরকে না দিয়ে অন্যদেরকে দেয়ার কারণে হরিজনরা একাধিকবার দিনাজপুরের সিভিল সার্জন কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারী দফতরের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। মল ঠিটিয়ে দিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটিয়েছে। তারপরেও পরিস্থিতির উন্নতি হয় নাই। সরকারী চাকুরী থেকে বঞ্চিত, আবার বাইরেও কর্মের অভাব। সব মিলিয়ে দিনাজপুরের হরিজনদের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। বঞ্চনা ও প্রতারণার শিকার হওয়ায় তাদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।