আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

যদি শেখ হাসিনা সেদিন বেঁচে না যেতেন

সোমবার, ১৯ আগস্ট ২০১৯, সকাল ০৯:৪৮

জয়দেব নন্দী

আগস্ট মাসটির নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে বাঙালি-হৃদয় যন্ত্রণাদগ্ধ হয়, শোকে মুহ্যমান হয় বাঙালি-আত্মা। হৃদয়পটে ভেসে ওঠে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মর্মন্তুদ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে সপরিবারে হত্যা করা হয়।

যে কারণে আগস্ট মাস মানে বাঙালির হৃদয় জুড়ে শোকের আঁধার। আগস্ট এলেই শ্রাবণের এক অনিঃশেষ করুণ-ধারা যেনো ছুঁয়ে যায় বাঙালি-আত্মাকে। এ-মাসের বেদনার্ত আর্তি কালকে ছাপিয়ে মহাকাল, সীমানার গণ্ডি পেরিয়ে গোটা বিশ্ব বিবেককে স্তম্ভিত করেছে! সেই আগস্ট মাসকেই বাংলাদেশ-বিরোধী ঘাতকরা তাদের নিষ্ঠুর টার্গেটের মাস হিসেবে বেছে নিয়েছে বারবার।

১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে যেমন বাঙালি হারিয়েছে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তেমনি ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট খালেদা-তারেকের প্রত্যক্ষ নির্দেশে গ্রেনেড ছুঁড়ে হত্যা-চেষ্টা করা হয়েছিল জাতির জনকের কন্যা, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ভাগ্যক্রমে সেদিন তিনি বেঁচে গেলেও এই ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী, আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হন।

সেদিন পিতা শেখ মুজিবের মতো শেখ হাসিনাকেও ওই পঁচাত্তরের প্রেতাত্মারা নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল। পারেনি। এ পর্যন্ত ১৯ বারের অধিক তাকে হত্যা-চেষ্টা করা হয়েছে। বিধাতার কৃপা আর জনগণের অকৃত্রিম ভালবাসায় তিনি আমাদের মাঝে বারবার ফিরে এসেছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট, শেখ হাসিনা ছিলেন মৃত্যু থেকে এক সেকেন্ড দূরে। দলের নেতাকর্মীরা নিজেদের প্রাণকে তুচ্ছ জ্ঞান করে সেদিন মানববর্ম রচনা করে বঙ্গবন্ধু-কন্যার প্রাণ বাঁচান। কারণ সেইসব নেতাকর্মীরা বিশ্বাস করতেন, ‘শেখ হাসিনা বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে’। প্রকৃত অর্থেই সেদিন শেখ হাসিনার দৈবক্রমে বেঁচে যাওয়া ছিল বাংলাদেশের জীবন ফিরে পাওয়া…

বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে ভাবুন তো, সেদিন যদি শেখ হাসিনাকে আমরা হারিয়ে ফেলতাম, কী অবস্থা হত প্রিয় এ স্বদেশ ভূমির? কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো বাংলাদেশ?

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শত কণ্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে সব সূচকে অগ্রগতি, সাফল্য আর উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়! শেখ হাসিনা বেঁচে না থাকলে তা সত্যিই আজ অধরা থেকে যেত।

দেশি-বিদেশি রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করে শেখ হাসিনা প্রমাণ করেছেন খুনি সে যত শক্তিশালীই হোক না কেন, অপরাধ করলে তার বিচার এ মাটিতেই হবে। বঙ্গবন্ধু-কন্যাকে সেদিন যদি আমরা হারিয়ে ফেলতাম, আজও কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে লাল-সবুজের পতাকা উড়তো, তাদের আস্ফালন দেখতে হতো, জাতির পিতার হত্যাকারীদের দূষিত নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসে ভারি হয়ে যেত বাংলার আকাশ-বাতাস। সেদিন শেখ হাসিনা দৈবক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই প্রিয় বাংলাদেশ আজ কলঙ্কমুক্ত।

যদি শেখ হাসিনা আজ বেঁচে না থাকতেন; আবারও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হাজার হাজার পূর্ণিমা-শেফালি-মাহিমা-ফাহিমাদের নিদারুণ আর্তনাদে বাংলার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হতো, তবুও রাষ্ট্রযন্ত্র থাকতো নির্বিকার। আবারও নির্বিবাদে হত্যা করা হতো শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবী, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, আবারও হত্যা করা হতো প্রগতিশীলতাকে। যদি শেখ হাসিনা সেদিন বেঁচে না যেতেন; আজকের যে বাংলাদেশকে আপনি দেখছেন, গোটা বিশ্ব দেখছে, সেই বাংলাদেশ হয়তো পাকিস্তান আদলের কোন রাষ্ট্রে পরিণত হত।

গোটা বিশ্ব আজ জঙ্গিবাদ ভয়াবহতায় আক্রান্ত; একমাত্র শেখ হাসিনা-ই বিশ্বে জঙ্গিবাদ নির্মূলে রেখেছেন দৃষ্টান্তমূলক ভূমিকা। বিএনপি-জামাত রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যেভাবে জঙ্গি লালন-পালন ও তোষণ এবং জঙ্গিবাদ বিস্তারে ভূমিকা রেখেছিল- তখন বাংলাদেশ ছিল পাকিস্তানের আরেক রূপ। আজ থেকে প্রায় ১৪ বছর আগে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশে ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা করেছিল বিএনপি-জামাতের মদদপুষ্ট জঙ্গি সংগঠন জেএমবি। শেখ হাসিনা আজ বেঁচে না থাকলে তার চেয়েও ভয়াবহ বাংলাদেশে আমাদেরকে আজ বসবাস করতে হতো।

কিছু নব্য সুশীল আজ দেশে একটু-আধটু সংকট দেখলেই বলে, ‘আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?’ সেই সব নব্য সুশীলরা মোটেও স্মরণ করেন না বাংলাদেশের সেই রক্তমাখা অন্ধকার দিনগুলির কথা। প্রফেসর হুমায়ুন আজাদ বিএনপি-জামাতের দুঃশাসন-চিত্র আর রক্তমাখা আঁধারের দিনগুলির কথা তুলে আনেন তাঁর গ্রন্থগুলোতে- ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’, ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?’ ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’! যে উপন্যাসগুলোতে উঠে এসেছিল বিএনপি-জামাতের ভয়ংকর দুঃশাসনের দিনলিপি, উঠে এসেছিল রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় কিভাবে একটি রাষ্ট্রকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল! সেদিন শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গিয়েছিল বলেই ‘জঙ্গিবাদের আখড়া’ থেকে বাংলাদেশ আজ শান্তির দেশ।

দিনবদলের স্লোগানকে অন্তরে ধারণ করে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, দারিদ্র্য বিমোচন, পুষ্টি, মাতৃত্ব এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীসহ বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন এর মাধ্যমে দারিদ্র্যপীড়িত বাংলাদেশকে আজ অন্য বাংলাদেশে রূপান্তরিত করেছেন; যে জন্য শেখ হাসিনা আজ বিশ্বপরিমণ্ডলে ‘আইকনিক লিডার’ হিসেবে পরিগণিত। বিশ্বের বুকে বাংলাদেশ এখন শুধু উন্নয়নের রোল মডেলই নয়, একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবেও প্রশংসিত। শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিতদের কাছে ‘মানবতার জননী’।

কথিত তলাবিহীন ঝুড়ির বাংলাদেশ আজ ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি খাদ্য, বস্ত্র-চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়চেতা ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে। একটু ভাবুন তো, যদি শেখ হাসিনা আজ বেঁচে না থাকতেন, কোথায় থাকতো বাংলাদেশ? বঙ্গবন্ধু-কন্যা সেদিন প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বলেই উন্নয়নের রোল মডেল আজকের বাংলাদেশ।

সেদিন শেখ হাসিনা যদি বেঁচে না থাকতেন; ভারত-মিয়ানমারের সাথে স্থল ও সমুদ্র সীমা সংক্রান্ত সংকটের সমাধান আমাদের অধরা-ই থেকে যেত। শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে কোন রকম যুদ্ধ-সংঘাত বা বৈরিতা ছাড়াই দুই প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের বিপক্ষে সমুদ্র সীমা বিজয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া স্বাধীনতার পরপরই ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে স্থল সীমান্ত চুক্তি হয়েছিল, তা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান করা বাংলাদেশের জন্য এক বিশাল অর্জন।

শেখ হাসিনাকে সেদিন আমরা ফিরে পেয়েছিলাম বলেই; নিজস্ব অর্থে পদ্মার ওপর ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণ করার সাহস দেখিয়েছে বাংলাদেশ, এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩১টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের তালিকায়। খাদ্যে, বিদ্যুতে বাংলাদেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে, বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশের পথে। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন প্রায় ২০০০ মার্কিন ডলার। দেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।

সমুদ্র বিজয়ের পর আমরা করেছি মহাকাশ বিজয়; বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ (প্রথম স্যাটেলাইট ‘বঙ্গবন্ধু-১’ ) মহাকাশে সফলভাবে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঘুরে দাঁড়ানো আজকের বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি নিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা সম্ভব। এসব কিছু সম্ভব হয়েছে বা হচ্ছে শেখ হাসিনা সেদিন আমাদের মাঝে ফিরে এসেছিলেন বলে। যদি শেখ হাসিনা আজ বেঁচে না থাকতেন, কোথায় গিয়ে দাঁড়াতো বাংলাদেশ? ভাবুন তো!

যদি শেখ হাসিনা সেদিন বেঁচে না যেতেন; আমার বিশ্বাস, বিগত দেড় দশক ধরেই আমরা দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতাম, আমরা হতাম জঙ্গিবাদের প্রজনন ক্ষেত্র, আমরা বিশ্বে দারিদ্র্য-পীড়িত মঙ্গাদেশের খেতাব পেতাম, আমরা হতাম সামাজিক-অর্থনৈতিকভাবে কক্ষ-চ্যুত এক পর্যদুস্ত দেশের নাগরিক। যে কারণে আমরা বক্তৃতা-স্লোগানে বলে থাকি, ‘শেখ হাসিনা বাঁচলে, বাংলাদেশ বাঁচবে’। যে কারণে শেখ হাসিনাকে আমরা বলে থাকি-‘অন্ধকারের ভেতর এক হিরণ্ময় দ্যুতি’।

মন্তব্য করুন


 

Link copied