আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

 width=
 
শিরোনাম: রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর       কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি      

 width=
 

আজ পার্বতীপুর হানাদার মুক্ত দিবস

শনিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১২, দুপুর ০২:৩৩

মাহতাব হোসেন: ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রচন্ড মুক্তিযুদ্ধের পর পার্বতীপুর হানাদার মুক্ত হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের কঠোর প্রতিরোধের মুখে পাকহানাদার বাহিনীর পার্বতীপুর এলাকা থেকে পালিয়ে যায়।

২৩ মার্চ শহরে অবাঙালিদের বৈষম্যমূলক আচরনে ক্ষুদ্ধ হয়ে পার্বতীপুরের গ্রামগঞ্জের সাধারন মানুষ শহর ঘেরাও করে সিদ্দিক মহলায় অগ্নিসংযোগ করে। এসময় অবাঙালিরা নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর ব্যাপক গুলি বর্ষন করলে কালাইঘাটির রইচ উদ্দিন, আটরাই গ্রামের দুখু, বেলাইচন্ডির মোজাম্মেল হক ও শফি প্রমুখ প্রাণ হারায়। ২৪ ও ২৫ মার্চ স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মচারী ইমাম মোলাসহ ১১জন, এম আহাম্মেদসহ ৪ কর্মচারী, পুরাতন বাজার মহলার কুটির শিল্প পরিারের ৪ জন সদস্য, পার্বতীপুর থানার এএসআই গোলাম এর পরিবারের সকল সদস্য, ক্যাপটেন ডাক্তারের পুত্র শামসাদ, হাবড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার আঃ হাকিম মাস্টারসহ অসংখ্য কয়লার বয়লারে জীবন্ত নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ গণহত্যার পর বাঙালিরা ক্রোধে ফেটে পড়ে।

২৮ মার্চ একজন পাঞ্জাবী মেজরের অধীনে কয়েকজন বাঙালি সৈন্য হুগলী পাড়ায় সিও অফিস চত্বরে পাহারা দিচ্ছিল। দ্বিতল ভবনে কামান পেতে মেজর বাঙালিদেরে তৎপরতা লক্ষ্য করেন। ওয়ারলেসে খবর দেয়ার চেষ্টা করলে বাঙালি সৈন্যের সাথে তর্ক বিতর্ক হওয়ায় তাকে গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনা জানতে পেরে প্রতিবাদ করলে হুগলী পাড়ার ছাত্র আব্দুল লতিফকে নির্মমভাবে হত্যার পর জলন্ত বয়লারে পুড়িয়ে ফেল হয়। ২৯মার্চ শহরের পুরাতন বাজারের উপেন চন্দ্রশীল ও সুভাষ চন্দ্র শীলসহ ১৪ জনকে নির্মমমভাবে হত্যাকরে লাশগুলো বাড়ীর একটি কুয়ার (ইন্দিরা)র মধ্যে ফেলে দেয় অবাঙালিরা।

১এপ্রিল সংগ্রামী যুবক দল বৃত্তি পাড়ার নিকট মর্টার বসিয়ে সন্ধায় একযোগে চতুর্মূখী আক্রমনে চালায়। শেষ রাতে হঠাৎ করে কামান গর্জে উঠে ও তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়। পার্বতীপুরে প্রথম শেল নিক্ষিপ্ত হয় শহরের সোয়েব বিল্ডিংয়ের উপর। ২ এপ্রিল পাকসেনা ও অবাঙালিরা হিংস্রতায় উম্মুক্ত হয়ে পার্বতীপুরের ৫ বর্গ কিলোমিটার জনপদে অগ্নিসংযোগ, লুট,হত্যা, ধর্ষন ও নির্যাতন চালায়। তারা রামপুরা গ্রামের একান উদ্দিন, ভেদলু, ব্রক্ষ্মোত্তরের হবিবর রহমান, তাজনগর ডাঙ্গা পাড়ার আঃ আজিজ, হুগলী পাড়ার তালাচাবি তৈরীর মিস্ত্রি আব্দুর রহমান ও সোবহানকে নির্মমভাবে হত্যা করে এবং নারীদের উপর নির্যাতর চালায়। ৮ এপ্রিল সবচেয়ে বৃহৎ গণহত্যার ঘটনা ঘটায় পাকসেনারা। রংপুর থেকে পাকসেনারা ট্রেনে করে এসে বদরগঞ্জে পশ্চিমে ব্রীজের কাছে নামে এবং শত শত মানুষকে একটি বিলে নির্মমভাবে হত্যা করে।

এদিকে পার্বতীপুর শহরের অবাঙালিদের নেতা বাচ্চা খানের নেতৃত্বে একটি সামরিক গাড়ীও যায় খোলাহাটিতে। বিকেল ৩টার দিকে পাকসেনারা আক্রমন চালিয়ে শিশুসহ প্রায় ৩শ’ নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। সংগ্রামী যুবকরা ভারতে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহন করে। প্রশিক্ষণ শেষে পার্বতীপুরের কৃতি সন্তান মোঃ জালাল উদ্দিন ‘ই’ কোম্পানির কমান্ডার হিসেবে ৪০ জনের মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে প্রথম বাংলাদেশে প্রবেশ করেন।

জুলাইয়ের প্রথম দিকে ফুলবাড়ী ভেরম নামক স্থানে ‘বেস’ ক্যাম্প স্থাপন করেন তিন। ভেরমের ৫ কিলোমিটার পূর্বে পাকসেনাদের ‘চিন্তামন ক্যাম্প’ ও ৩ কিলোমিটার উত্তরে পাকসেনাদের জলপাইতলী ক্যাম্পে ঘাটি ছিল। ‘বেস ক্যাম্প’ স্থাপনের ৫ দিনের মাথায় পাক সেনাদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রথম সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ১৭জন পাকসেনা মারা যায়। ৭দিন পরে দু’দফা যুদ্ধ বেঁধে যায়। এবারও ৭জন পাক সেনা মারা যায় এবং চিরিরবন্দরের মোজাফ্ফর হোসেন ও খাগড়াবন্দের তাহের নামে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। খয়রাত হোসেন নামে অপর এক মুক্তিযোদ্ধাকে বন্দি করে পাকসেনারা নিয়ে যায়। এছাড়াও আমজাদ হোসেন নামে এক মুক্তিযোদ্ধা গুলিতে আহত হন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনে দুটি ক্যাম্পের পাক সেনারা একত্রিত হয়ে ৭ দিন পর ৩য় দফা সম্মুখ যুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ যুদ্ধে পাকসেনারা পরাজয় বরন করে সেখান থেকে পালিয়ে যায় কিন্তু তাদের গুলিতে পার্বতীপুরের তাজনগর গ্রামের আব্দুল মজিদ নামের এক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

অন্যেদিকে, ১০ নং হরিরামপুর ইউনিয়নের পূর্ব হোসেনপুর গ্রামের আজিজার রহমান চৌধুরী ও তার ভাই মতিয়ার রহমান চৌধুরীকে একই সাথে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। চাঁেেচয়া গ্রামের সহির উদ্দিন, দলাইকোঠা গ্রামের মোঃ শাহাবুদ্দিনকে বাড়ী থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকসেনারা এবং পরদিন খয়েরপুকুর হাটের কাছে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ‘ই’ কোম্পানি পার্বতীপুরের পাটিকাঘাট আনন্দবাজার নামক স্থানে গ্যারিলা ক্যাম্প স্থাপন করে সে সময়। এখান থেকে মুক্তিযোদ্ধারা ভ্যালাগাছির রেল ব্রীজের কাছে পাহারারত পাকহানাদের উপর আক্রমন চালায়। পরে ভবানীপুর শাহগ্রাম রেল ব্রীজটি আক্রমন করে ১৬ জন রাজাকারকে আটক করে এবং ব্রীজটি ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ায় ৭ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। ক্রমান্নয়ে প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশে এসে পাকসেনাদের উপর বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমন চালাতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পার্বতীপুর এলাকা থেকে ১৫ ডিসেম্বর পাকহানাদার বাহিনী পালিয়ে যায় পার্শবর্তী সৈয়দপুরে এবং এদিন পার্বতীপুর শত্র“ মুক্ত হয়। অনেক দিনে পরে হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি স্বরূপ পার্বতীপুরে রেল স্টেশনের উত্তর দিকে রেল লাইনের ধারে পার্বতীপুরের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলোল কুমার চক্রবর্তীর উদ্যোগে ও স্থানীয় সুধীজনের সহযোগিতায় বধ্যভূমি স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রাহেনুল ইসলাম স্মৃতি সৌধটির চার পাশে উঁচু প্রাচীর নির্মাণের কাজ করছেন।  আজ ১৫ ডিসেম্বর পার্বতীপুরবাসী এখানে পুস্প স্তবক অর্পনের মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় পার্বতীপুর হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে পালন করবে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডসহ বিভিন্ন সংগঠন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied