আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: জমি রেজিস্ট্রি করে না দেয়ায় বাবাকে কবর দিতে ছেলের বাঁধা ॥ পুলিশের হস্তক্ষেপে দাফন সম্পন্ন       নীলফামারীতে স্বামীর প্রথম বিয়ের খবরে নববধূ দ্বিতীয় স্ত্রীর আত্মহত্যা ॥ স্বামী গ্রেপ্তার       রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা      

 width=
 

এই লকডাউনের মর্মকথা কী?

বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল ২০২০, দুপুর ১১:৩৯

ড. সুলতান মাহমুদ রানা

আসলে আমি নিজে বাইরের পরিবেশ দেখে কিছুটা অবাক হয়েছি। কারণ ভেবেছিলাম, কাউকেই স্বাভাবিক চলাফেরা করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য ধরেই নিয়েছিলাম, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেন বাইরে এসেছি—এমন কৈফিয়ত দিতে হবে। কিন্তু খুব দুঃখজনক হলেও সত্য, আমি একবারও কোনো ক্ষেত্রে কোনো কৈফিয়তের মুখোমুখি হইনি। এটি নিশ্চয়ই এই সময়ের লকডাউনের যথাযথ মর্মকথা নয়। তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে এই লকডাউনের মানে কী? অবশ্য এটি সত্য, অনেকেই বাইরে গিয়ে বিভিন্ন কৈফিয়তের মুখোমুখি হচ্ছেন।

কাঁচাবাজার, মাছের বাজার, মুদিখানা, ওষুধের দোকানে আমি নিজে যেমন লোকসমাগম দেখতে পেলাম সেটা সত্যিই করোনা সংক্রমণের জন্য ভয়াবহ। করোনা সংক্রমণ রোধে যেসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা, সেটি তাঁদের অনেকেই মানছেন না। আর ব্যাংকিং কার্যক্রমে তো করোনাঝুঁকি রয়েই গেছে।

এমন অবস্থায় দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, প্রকৃতভাবে লকডাউন করতে না পারলে এটি শুধু খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যই প্রযোজ্য হচ্ছে। করোনা সংক্রমণ রোধে যে লকডাউন করার কথা ছিল সেটি আসলে হচ্ছে না। এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, যারা চাকরিজীবী তারা আরো অনেক দিন লকডাউন কিংবা সাধারণ ছুটি পেলেও প্রকৃত অর্থে কোনো ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। কিন্তু যারা পরিবহন শ্রমিক, রিকশাচালক, দিনমজুর, নির্মাণশ্রমিক, হোটেল-রেস্তোরাঁকর্মী, ছোট দোকানদার, ছোট ব্যবসায়ী তাদের যে পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হতে চলেছে তা আসলেই অবর্ণনীয়।

এই মুহূর্তে আমার যেটি মনে হচ্ছে, সেটি হলো, করোনাভাইরাসের এই সংকটকালে একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির মানুষ যারা নিজেদের বেঁচে থাকার রাস্তাটাও ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে। সরকারের বরাদ্দকৃত ত্রাণের ওপর নির্ভর করে তাদের জীবন চলা দিনে দিনে কঠিন হয়ে পড়ছে। কারণ এই ত্রাণ সংগ্রহ করতেও তাদের এক ধরনের প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, যারা রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের কাছাকাছি কিংবা পরিচিত, তাদের ত্রাণ পাওয়া কিছুটা সহজ হলেও অন্য অসহায়দের জন্য অতটা সহজ হচ্ছে না। আমার বাসার আশপাশের অনেকেই এমন অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে আমাকে জানিয়েছেন। অবশ্য এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুটা অনুধাবন করে কিংবা প্রকৃত তথ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে প্রধানমন্ত্রী এরই মধ্যেই বলেছেন, শুধু দলীয় ভোটারদের ত্রাণ দিলে হবে না। তিনি সবাইকে সমানভাবে ত্রাণের আওতায় আনতে নির্দেশ দিয়েছেন। ওএমএসে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি, নগদ আর্থিক সহায়তার মতো জনকল্যাণমুখী কর্মসূচি সরকার হাতে নিলেও এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় কোথাও কোথাও ভেসে উঠেছে লুটপাট কিংবা আত্মসাতের চিত্র। এরই মধ্যে শত শত বস্তা চাল দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

গত মাসে করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হওয়ার পর দেশজুড়ে আতঙ্ক দেখা দেয়। করোনার বিস্তার ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। দফায় দফায় বাড়িয়ে এ ছুটি আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়েছে। এতে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়েছেন। আর নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের অনেকেই রয়েছেন চাকরি হারানোর শঙ্কায়। আবার অনেকেই রয়েছেন, যারা মুখ ফুটে বলতে পারছেন না তাদের প্রকৃত অবস্থার কথা। অনেকেই প্রাইভেট টিউশনি করে জীবন চালাতেন, তাঁদের অবস্থাও এখন সংকটাপন্ন। কারণ তাঁরা ত্রাণের সামগ্রীও নিতে পারছেন না আবার প্রাইভেট টিউশনির বেতনও বন্ধ হয়ে গেছে। এ রকম হাজারও সমস্যা নিয়ে দিনাতিপাত করছেন সাধারণদের অনেকই।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ২০১৯ সাল শেষে বাংলাদেশের জাতীয় দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ২০ শতাংশ। অতি দারিদ্র্যের হার সাড়ে ১০ শতাংশ। দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৬ লাখ। সেই হিসাবে দেশে তিন কোটি ৪০ লাখ গরিব মানুষ আছে। তাদের মধ্যে পৌনে দুই কোটি মানুষ হতদরিদ্র। করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ বছরে আরো বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাবে। তা ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই নাজুক হয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে যে ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থানের সংকট দেখা দেবে। বেকারত্ব বেড়ে যাবে ভয়াবহভাবে।

দেশটির আয়ের প্রধান খাত পোশাকশিল্পে রপ্তানি কমেছে ৮৩ শতাংশ। ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা মহামারি রূপ নিয়েছে। এতে একের পর এক বাতিল হচ্ছে পোশাকের ক্রয় আদেশ। নতুন আদেশও আসছে না। চলতি মাসের প্রথম ১৫ দিনে ১৯ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৩.৭৪ শতাংশ কম। সর্বশেষ গত ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতের এক হাজার ১৪০টি কারখানার প্রায় ২৭ হাজার কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বাতিল ও স্থগিত হয়ে গেছে।

বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিতেই দেশ এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। একদিকে মানুষের জীবন বাঁচানো, অন্যদিকে অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখা। এ লড়াইয়ে সম্ভাব্য নানা কৌশল হাতে নেওয়া হলেও বিভিন্ন কারণে তা যথাযথ রূপ পাচ্ছে না। এমনকি যে উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে লকডাউন রাখা হয়েছে কিংবা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে সে উদ্দেশ্য যথাযথভাবে কাজে আসছে না। কাজেই এই মুহূর্তে বিশেষভাবে ভেবে দেখতে হবে, কিভাবে করোনা সংক্রমণ রোধে যথাযথ লকডাউন মেনে চলার ব্যবস্থা করা যায়, আবার খেটে খাওয়া দিনমজুরদের জীবনও বাঁচানো যায়।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

মন্তব্য করুন


 

Link copied