আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নির্বাচনে ৩৫ জনের প্রার্থীতা বৈধ ॥ চেয়ারম্যান পদে ১২ জনের মধ্যে আওয়ামীলীগের ৭ জন প্রার্থী       নীলফামারীতে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালন       নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু       কিশোরীগঞ্জে পাঁচতলা ভবন থেকে পড়ে এক ব্যাক্তির রহস্যজনক মৃত্যু       উপজেলা নির্বাচনে জাপার প্রার্থী হতে চান না কেউ      

 width=
 

বীরপ্রতীক তারামন বিবির আজ দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী

মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর ২০২০, দুপুর ০৩:০১

তখন সময়টা ছিল চৈত্র মাস। দেশে তখন যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।। পাক হানাদার বাহিনী নির্বিচারে বাঙালিদের হত্যা করছে, জ্বালিয়ে দিচ্ছে বাড়িঘর। নারীদের উপর শারীরিক নির্যানত করেছিল তারা, আতঙ্ক ছিলো চারদিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় তখন তারামন বিবি অনেক ছোট। বয়স আনুমানিক হবে ১৪-১৫। তারামন বিবির মাকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে মুহিব হাবিলদার ধর্ম মেয়ে করে নেন তাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকটা সহায়তা করেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আজিজ মাস্টার। এরপর তারামন বিবি চলে যায় কোদালকাঠির দশঘরিয়া মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। সেখানে রান্না করা, খাবার ডেক পরিষ্কার আর অস্ত্র পরিষ্কার করার কাজ শুরু করেন। এটি ছিল ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি যুদ্ধ ক্যাম্প। শুরু হয় তার যুদ্ধের জীবন। তারামন বিবি ১১ নং সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১ নং সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের। মুহিব হাবিলদার নামে এক মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবিকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন। যিনি তারামনের গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন। তিনি তারামনকে ক্যাম্পে রান্না-বান্নার জন্য নিয়ে আসেন। তখন তারামনের বয়স ছিলো মাত্র ১৩ কিংবা ১৪ বছর। কিন্তু পরবর্তীতে তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে অস্ত্র চালনো শেখান। পরবর্তীতে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সাথে অনেক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারামন বিবি গোয়েন্দা তথ্য আনতে বেরোলে মাথায় গোবর লাগিয়ে, মুখে কালি দিয়ে উপুড় হয়ে গড়াতে গড়াতে শত্রুর কাছাকাছি চলে যেতেন তারামন বিবি। কোথায় শুত্রুর অস্ত্র আছে, কোথায় অপারেশন চালাতে হবে, এসব তথ্য এনে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে, তারামন বিবির কথার সুত্র ধরে তারপর শুরু করতেন পরিকল্পনা মাফিক অপারেশন। এই ভাবে কাজ করতেন তিনি। তারামন বিবি সহ অনেক বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশকে স্বাধীন করে। পরে ১৯৭১ সালে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে।

তার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪। গেজেটে নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি। ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি'দে প্রথম তার সন্ধান পান। এ কাজে বিমল কান্তিকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী। এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ কার কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে।সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯শে ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার এক অনাড়ম্বর পরিবেশে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তার হাতে তুলে দেন।তারামন বিবিকে নিয়ে আনিসুল হকের লেখা ‘বীর প্রতীকের খোঁজে’ নামক একটি বই রয়েছে। আনিসুল হক রচিত ‘করিমন বেওয়া’ নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন তারামন বিবি।

তার পর দীর্ঘদিন ধরে বক্ষব্যাধিসহ নানা রোগে ভুগছিলেন তারামন বিবি। গত ৮ নভেম্বর রাজীবপুর থেকে নিয়ে ময়মনসিংহ সিএমএইচে (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) ভর্তি করা হয় তাকে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয় তারামন বিবিকে। সেখানে চিকিৎসা শেষে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে সপ্তাহখানেক পর তাকে কুড়িগ্রামের রাজীবপুরের বাড়িতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। তবে স্বজনদের সুত্র অনুযায়ী, (৩০ নভেম্বর) শুক্রবার রাত ১০টার দিকে তারামন বিবির শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি হয়। তখন তাকে রাজীবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: দেলোয়ার হোসেন বাড়িতেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। কিন্তু শনিবার ২০১৮ সালে (১ ডিসেম্বর) রাত দেড়টার দিকে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন তারামন বিবি। পরে বীরকন্যা তারামন বিবির জানাজার দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হয় ও তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বীরকন্যা বীরপ্রতীক তারামন বিবির বয়স হয়েছিল ৬১ বছর।

মন্তব্য করুন


 

Link copied