স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ আগামী ১৬ জানুয়ারী দ্বিতীয় ধপে নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর পৌরসভায় মেয়র পদের নির্বাচন বাতিল ও অন্যন্য পদের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার মৃত্যুতে আজ বৃহস্পতিবার(১৪ জানুয়ারী/২০২১) দুপুরে ওই আদেশ জারী করে নির্বাচন কমিশন।
বিকাল ৩টায় বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল করিম জানান, ওই নির্বাচনে মেয়র পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে নারিকেল গাছ প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান মেয়র অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার ঢাকাস্থ্য বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মৃত্যুতে এই দিন দুপুরে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০ এর বিধি ২০ অনুসারে উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রে মেয়র পদের নির্বাচন বাতিল ও অন্যান্য পদের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোঃ ফজলুল করিম বলেন, নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মেয়র পদের নির্বাচন বাতিল এবং সকল কাউন্সিলর পদের নির্বাচন স্থগিতের আদেশ নির্বাচনী এলাকায় জারি করা হয়েছে। পুনরায় তফসিল ঘোষনা শীঘ্রই করা হবে। তবে যে প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দিতায় রয়েছে তাদের আর মনোনয়নপত্র দাখিল করতে হবেনা। নতুন করে কেউ প্রার্থী হতে চাইলে পুনরায় তফসিল ঘোষনার পর তারা মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারবেন।
পারিববারিক সূত্র জানায়, আগামীকাল শুক্রবার (১৫ জানুয়ারী) বাদ জুম্মা সৈয়দপুর শহরের পাটোয়ারীপাড়াস্থ তাঁর প্রতিষ্ঠিত মকবুল হোসেন বিএম কলেজ প্রাঙ্গনে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
উল্লেখ যে, আমজাদ হোসেন সরকার সৈয়দপুর পৌরসভার চার বারের নির্বাচিত মেয়র, অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নীলফামারী-৪ (সৈয়দপুর-কিশোরীগঞ্জ) আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি সর্বশেষ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। মৃত্যুকালে তার বসয় ছিল ৬৩ বছর। মৃত্যুকালে স্ত্রী, এক ছেলে, দুই ভাই, এক বোন সহ অসংখ্য আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু ও গুণগাহি রেখে গেছেন।
জানা গেছে, ইতোপূর্বে আমজাদ হোসেন সরকার দুই দফায় করোনায় আক্রান্ত হন। সুস্থ্য হবার পর গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর তিনি পুনরায় অসুস্থ্য হয়ে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত চিকিৎসা চলছিল। গত ১৫ দিন আগে উক্ত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার তৃতীয় দফায় করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে। এরপর তাকে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এক সপ্তাহ যাবত তিনি সেখানে নিবিড় পরিচর্যায় ছিলেন। তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতি হওয়ায় লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই তিনি অসুস্থ্য হয়ে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে নির্বাচনের কোন কার্যক্রমই স্ব-শরীরে উপস্থিত থাকতে পারেন নি।
সুত্র মতে, দ্বিতীয় ধাপে এই পৌরসভার আগামী শনিবার (১৬ জানুয়ারী) ভোটগ্রহন হওয়ার কথা ছিল। ২৯ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষ দিন বিএনপির ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী এ্যাডঃ এসএম ওবায়দুর রহমান তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে প্রতিদ্বন্দি প্রার্থী হিসাবে মেয়র পদে ৫ জন, ১৫টি ওয়াডে সাধারণ সদস্য (কাউন্সিলার) পদে ৯৩জন এবং ৫টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ডের ২১ জন।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক সৈয়দপুর বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ আমজাদ হোসেন সরকার দলীয়ভাবে মেয়র পদে মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোট করছিলেন নারিকেল গাছ প্রতিক নিয়ে। এ ছাড়া অন্যান্য মেয়র পদে প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের রাফিকা আকতার জাহান বেবী (নৌকা), জাতীয় পার্টির সিদ্দিকুল আলম (লাঙল), জেলা ইসলামী আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মো. নুরুল হুদা (হাতপাখা) এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী রবিউল আউয়াল রবি (মোবাইল ফোন)।
সৈয়দপুর পৌর মেয়র আমজাদ হোসেনের মৃত্যু