স্টাফ রিপোর্টার: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। আইনের তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি বিধি ও জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ওই বিভাগে বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য প্রফেসর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর বিরুদ্ধে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে সর্বশেষ বিভাগীয় প্রধান হিসাবে দায়িত্বরত ছিলেন ওই বিভাগের শিক্ষক শাহীনুর রহমান। তিনমাস আগে তিনি বিভাগীয় প্রধান হিসাবে তার কার্যকাল শেষ করেন। বিধি অনুযায়ী তার কার্যকাল শেষ হওয়ার পরেরদিন জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ওই বিভাগের অন্য কোনো শিক্ষককে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও কাউকেই নিয়োগ না দিয়ে পদটি শুন্য রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে ওই বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে।
সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারি একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ওই বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক মো. আমীর শরীফকে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, আমীর শরীফ জ্যোষ্ঠতার ভিত্তিতে ইতোপূর্বে ওই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।তার কার্যকাল শেষ হওয়ার পর বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ওই বিভাগের আরেক শিক্ষক আপেল মাহমুদ। আপেল মাহমুদের কার্যকাল শেষ হলে ধারাবাহিকভাবে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ পান শাহীনুর রহমান। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী ধারাবাহিকতা ও জ্যোষ্ঠতার ভিত্তিতে শাহীনুর রহমানের পরে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার কথা ওই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুকের। কিন্তু বিশেষ কোনো কারণ ছাড়াই বিধি লঙ্ঘনের মাধ্যমে তাকে বঞ্চিত করে আমীর শরীফকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ প্রথমদিকে উমর ফারুককেই বিভাগীয় প্রধান হিসাবে নিয়োগ দিতে চেয়েছিলেন। এজন্য তিনি গত ২২ জানুয়ারি উমর ফারুকের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। মুঠোফোনে কথা বলার সময় উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ তাকে ঢাকাস্থ লিয়াজো অফিসে এসে নিয়োগপত্র গ্রহণ করতে বলেন। মুঠোফোনে সেই কথোপকথনের অডিও উত্তরবাংলার হাতে এসে পৌছেছে।
কথোপকথন:
উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ: তিন মাস কী শেষ হয়েছে, আপনাকে হিসাব রাখতে বলেছিলাম।
উমর ফারুক: গতকাল শেষ হয়েছে স্যার।
উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ: গতকাল যেহেতু শেষ হয়েছে আপনাকে একটু কষ্ট করে ঢাকায় আসতে হবে। আপনাকে ফরমালি হ্যান্ডওভার করে দেব নিয়োগপত্র দিয়ে।একটু ফটোসেশন করে নেব আমরা।
উমর ফারুক: ঢাকায়…?
উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ: একটু কষ্ট করে আসতে হবে। যেদিনে আসবেন সেদিনে চলে যাবেন।
উমর ফারুক: স্যার, আপনি যদি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে দিতেন স্যার…
উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ: জি, ওটাতো আমি করবো, রোববারে একটু আসতে হবে। কী হবে, একদিনে কী হবে? শনিবারে রাতে রওয়ানা দেবেন, রোববারে আমার সঙ্গে ফটোসেশন করে চলে যাবেন। ঠিক আছে….
উমর ফারুক: স্যার, আমি—ঢাকায় তো—
জানা যায়, উপাচার্যের কথামতো উমর ফারুক ঢাকায় গিয়ে বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানালে উপাচার্য তার পরিবর্তে আমীর শরীফকে নিয়োগ দেন।
এ ঘটনায় গত ২৪ জানুয়ারি ফেসবুকে নিজের আইডিতে একটি পোস্ট করেন একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক উমর ফারুক। তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘ঢাকায় গিয়ে আমি বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নেবো না। অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই, আমি ঢাকায় যেয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব নেবো না। আমি যদি আইনগতভাবে (আমি আবার বলছি আইনগতভাবে) বিভাগীয় প্রধানের জন্য যোগ্য হই তাহলে, কেবল তাহলেই আমাকে দায়িত্ব দেয়া হোক, এবং তা রংপুরেই। আমার ১১বছরের শিক্ষকতা জীবনে কখনো কোনো প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের অভিপ্রায় ব্যক্ত করি নি (সংকটকালীন সময়ে মাত্র ১৪দিনের জন্য শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে বিনাসুবিধায় দায়িত্ব পালন করে পদত্যাগ করেছিলাম)। তাছাড়া বিভাগীয় প্রধান কোনো প্রশাসনিক পদও নয়। অ্যাকাডেমিক পদ। আইনানুযায়ি কাউকে না কাউকে এই দায়িত্ব নিতে হয়। সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে আমার পদোন্নতিতে কোনো চাপ ছিলো না। আমি আশা করবো, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগেও আমাকে কোনো চাপ প্রয়োগ করা হবে না। প্রত্যাশা করি এই সংকটে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও আমার সকল প্রিয়জন নিশ্চই আমার পাশে থাকবেন। আমি আশা করবো এই সংকট ঘনীভূত হওয়ার আগেই সমাধান হবে। আমার নীরবতা আমার শক্তি, দুর্বলতা নয়।’
এবিষয়ে জানতে বেরোবি উপাচার্য প্রফেসর ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।