আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস আজ

রবিবার, ২৮ মার্চ ২০২১, বিকাল ০৫:১৮

জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিন ভাষণের পর দেশের মানুষ প্রস্তুতি গ্রহণ করে সশস্ত্র সংগ্রামের। এরই অংশ হিসেবে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও এর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্বাধীনতাকামী মানুষ। দিনক্ষন ঠিক হয় ২৮ মার্চ। ঘেরাও অভিযানে যোগ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে রংপুরের বিভিন্ন হাটে-বাজারে ঢোল পিটানো হয়। আর এ আহ্বানে অর্ভূতপূর্ব সারা মেলে। সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারিদিকে। যার যা আছে তাই নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের জন্য প্রস্তুতি নেয় এ অঞ্চলের ধর্ম বর্ন নির্বিশেষে ছাত্র, কৃষক, দীনমজুরসহ সকল পেশার সংগ্রামী মানুষ। রংপুরের আদিবাসীরাও তীর-ধনুক নিয়ে প্রস্তুতি নিতে থাকে। এক্ষেত্রে মিঠাপুকুর উপজেলার ওরাঁও সম্প্রদায়ের তীরন্দাজ সাঁওতালদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। তীর-ধনুক, বল্লম, দা, বর্শা নিয়ে তারা যোগ দিয়েছিল ঘেরাও অভিযানে।

২৮ মার্চ ৭১ রোববার সকাল থেকে রংপুরের বিভিন্ন এলাকার মানুষ সংগঠিত হতে থাকে। সময় যত এগিয়ে আসে উত্তাপ আর উত্তেজনা যেন ততই বাড়তে থাকে। সকাল ১১টা বাজতে না বাজতেই সাজ সাজ রব পড়ে যায় চারিদিকে। জেলার মিঠাপুকুর, বলদীপুকুর, মানজাই, রানীপুকুর,তামপাট, পাঠিচড়া, বুড়িহাট, গঙ্গাচড়া, শ্যামপুর, দমদমা, লালবাগ, গনেশপুর, দামোদরপুর, পাগলাপীর, সাহেবগঞ্জ সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হতে থাকে। সবার হাতে লাঠি-সোটা, তীর-ধনুক, বর্শা, বল্লম, দা ও কুড়াল।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং সে সময় রংপুর ক্যান্টনমেন্ট কর্মরকত ২৯ ক্যাভেলরী রেজিমেন্টের মেজর নাসির উদ্দিন তার “যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা” গ্রন্থে সে দিনের বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন, যে দৃশ্য আমি দেখলাম তা চমকে যাবার মতোই। দক্ষিণ দিক থেকে হাজার হাজার মানুষ সারি বেঁধে এগিয়ে আসছে সেনা ছাউনির দিকে। তাদের প্রত্যেকের হাতেই দা-কাঁচি, তীর-ধনুক, বর্শা, বল্লমের মতো অতি সাধারন সব অস্ত্র। বেশ বোঝা যাচ্ছিল এরা সবাই স্থানীয়। সার বাঁধা মানুষ পিপঁড়ের মতো লাঠি-সোঠা বল্লম হাতে ক্রমেই এগিয়ে আসছে ক্যান্টনমেন্টের দিকে। এ সময় ক্যান্টনমেন্ট থেকে গোটা দশেক জীপ বেড়িয়ে আসে এবং মিছিল লক্ষ করে শুরু হয় একটানা মেশিনগানের গুলিবর্ষণ। মাত্র ৫ মিনিটে চারিদিক নিস্তব্ধ হয়ে যায়। হাজার হাজার লাশ পরে থাকে মাঠে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মাঠের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে টেনে হিঁচড়ে ্এনে এক জায়গায় জড়ো করা হলো পুড়িয়ে ফেলার জন্য। কিন্তু তখনো যারা বেঁচে ছিল তাদের গোঙ্গানিতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিল পাঞ্জাবী জান্তারা। এ অবস্থাকে আয়ত্বে আনার জন্যে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে চিরতরে তাদের থামিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। আহতদের আর্তনাদে গোটা এলাকার আকাশ বাতাস যেন ভারী হয়ে উঠলো। তার বর্ণনায় আরও বলা হয়েছে “সেদিন সন্ধ্যার আগেই নির্দেশ মতো ৫ থেকে ৬ ’শ মৃতদেহ পেট্রোল ঢেলে জ্বালিয়ে দেয়া হলো। দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো আগুন। এ আগুন অন্য যে কোন আগুনের চেয়ে অনেক বেশি লাল। অনেক বেশি দহন করে এই বহিঃশিখা। আজ খুব কাছ থেকেই সেই আগুন আমি দেখছি। দেখছি কেমন করে জ্বলছে স্বাধীনতাপ্রিয় অসহায় মানব সন্তান। স্বাধীনতাকামী রংপুরের মানুষ ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাওয়ের মধ্যদিয়ে শুরু করেছিল মহান মুক্তিযুদ্ধ। ২৮ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ তথা পাক হানাদার বাহিনীর সাথে এটাই তাদের মুখোমুখি প্রথম যুদ্ধ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেদিনের সেই ত্যাগের স্বীকৃতি, জাতীয় ভাবে আজো মেলেনি।

প্রতি বছর এই দিনে স্থানীয় জনগনের উদ্যোগে নানা অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে পালিত হয় ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস। রংপুরবাসী এই দিনে “রক্ত গৌরব” স্মৃতিস্তম্ভের পাদদেশে ফুল দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করে বীর বাঙালী শহীদদের। রংপুররের মানুষের দীর্ঘ ইতিহাসের ঐতিহ্যবাহী স্বাক্ষরের উল্লেখ রয়েছে এই স্মৃতিস্তম্ভ অর্জনে। কিন্তু সেদিনের শত শত দেশপ্রেমি জনতার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি আজো মিলেনি। প্রতি বছর ২৮ মার্চ এলে কিছু অনুষ্ঠানে মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে এসব বীর শহীদদের আত্মত্যাগ। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় ভাবে শহীদ পরিবারগুলোর কোন স্বীকৃতি মিলেনি।

দিবসটি উপলক্ষে শহরের উপকন্ঠে নিসবেতগঞ্জে শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত রক্তগৌরবে দিনভর বিস্তারিত কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied