আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে রাশেদুলের বাড়ি!

সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১, দুপুর ১০:২৯

প্রতিদিন দলে দলে লোক আসছে কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নওদাবাস গ্রামের এ বাড়িটি দেখতে। বাড়িটি শুধু যে বসবাসযোগ্য তাই নয়, অন্যান্য পাকা বাড়ির চেয়ে শক্তপোক্ত এবং নিরাপদ।

এ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ যারা নিয়েছেন, সেই রাশেদুল আলম ও তার স্ত্রী আসমা খাতুন দুজনে ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে পরিবেশ বিজ্ঞান বিষয়ে লেখাপড়া করেন। পরে তারা সেখানে খণ্ডকালীন শিক্ষকতাও করেন কিছুদিন।

এই দম্পতির দুই ছেলের মধ্যে বড় ছেলে রাফিদুল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। ছোট ছেলেটিরও বাকপ্রতিবন্ধিতা আছে। তাদের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে রাখতে বাবা-মাকে পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য শহর ছেড়ে শান্ত পরিবেশে পারিবারিক ভিটায় সন্তানদের নিয়ে এসেছেন ওই শিক্ষক দম্পত্তি।

বাড়িতে এসে তারা ভাবতে থাকেন কী ধরনের বাড়ি করবেন। ইন্টারনেট থেকে স্ত্রী আসমা খাতুন জানতে পারেন পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ইকো-হাউস নামে পরিবেশবান্ধব বাড়ি তৈরি করছেন জাপানিরা। এতে উৎসাহিত হয়ে এ দম্পত্তি প্লাস্টিকের বাড়ি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। দুজন মিলে রপ্ত করতে থাকেন বাড়ি তৈরির কলাকৌশল। সেই সঙ্গে তারা বোতল সংগ্রহ করা শুরু করেন।

শুরুর দিকে অনেকে উপহাস করেছেন। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা বাধা দিয়েছেন। বলেছেন, এ রকম বাড়ি টেকসই হবে না। কিন্তু কারও কথাই কান দেননি এ দম্পতি।

এমন বাড়ি নির্মাণের খবর গণমাধ্যমে প্রচার হলে এটি দেখতে অনেক মানুষ ভিড় করতে থাকে। ইতোমধ্যে বাড়িটি ‘বোতল হাউজ’ হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বাড়িটিতে চার রুমের থাকার ঘর আছে। আছে দুটি বাথরুম, রান্নাঘর ও বারান্দা। ১৭০০ বর্গফুটের বাড়িটি নির্মাণে বিভিন্ন আকৃতির প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি বাথরুমের সেপটিক ট্যাংক ও মেঝেতেও ব্যবহার করা হয়েছে বোতল। বাড়ির ভিত্তিমূলে এক লিটার এবং দেয়ালে ব্যবহার করা হয়েছে আধা লিটারের প্লাস্টিকের বোতল।

বোতলগুলো বালুতে ভর্তি করার পর সিমেন্ট দিয়ে তা দেয়ালে গাঁথা হয়। বোতলে বালু দেয়ায় স্বাভাবিক ইটের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি শক্ত হয় বলে জানান রাশেদুল। এ ছাড়া বালু গরমে তাপ শোষণ করে ঘরকে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা রাখে বলে জানান তিনি।

রাশেদুল জানায়, পরিবেশ রক্ষার দায়বদ্ধতা থেকে অভিনব এই বাড়ির কাজে হাত দিয়েছেন তিনি। স্ত্রী আসমা খাতুন তাকে সার্বক্ষণিক সাহস জোগাচ্ছেন। পরিবেশবান্ধব, তাপ শোষক, অগ্নিনিরোধক, ভূমিকম্পসহ বাড়িটি নির্মাণে ইটের তৈরি বাড়ি থেকে ৪০ শতাংশ কম ব্যয় হয়েছে।

নির্মাণকাজ পুরোটা আগামী এক মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। এখনও অনেক লোকজন দেখতে আসছে বলে বোতল ঢাকতে দেয়াল প্লাস্টার করা হয়নি।

রাশেদুল বলেন, ‘আমরা বাড়ি তৈরি করব, কিন্তু ইট দিয়ে নয়। কারণ, ইট তৈরিই হয় পরিবেশের ক্ষতি করে। বোতলের মধ্যে যদি বালু ভরাট করা হয়, তাহলে দুটি বোতল একটি ইটের কাজ করবে।’

বাড়িটি তৈরি করতে ৮০ হাজার প্লাস্টিকের বোতল লেগেছে। ওজনে তারা ৬০ মণ বোতল কিনেছিলেন। প্রতি কেজি বোতল প্রকারভেদে কিনতে হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। টিনের চালা বাদে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার মধ্যে বাড়ির পুরো কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন তারা।

বাড়ির নির্মাণ শুরু হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এ পর্যন্ত ৮০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু প্লাস্টার করা বাকি। এখনই বাড়িতে বসবাস শুরু করেছেন তারা।

রাশেদুল বলেন, ‘প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি করলে আগুন সহজে লাগবে না। এটি শক্তিশালী ফায়ার প্রুফ হিসেবে কাজ করবে। আগুন লাগলে প্লাস্টিকের বোতল গলে যাবে, তখন ভেতরের বালু ঝরে পড়বে, ফলে আগুন নিভে যাবে।’

প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভরাট করায় এটি ভূমিকম্পসহও হবে। গবেষণাগারে পরীক্ষায় দেখা গেছে, বোতল দিয়ে বানানো বাড়ি রিখটার স্কেলে আট মাত্রার ভূমিকম্প প্রতিরোধ করতে পারে। তা ছাড়া ইটের তৈরি বাড়ির চেয়ে এটি অনেক শক্ত ও টেকসই।

রাশেদুল আরও বলেন, সীমান্ত এলাকার ক্যাম্পগুলোতে বালু দিয়ে বস্তা ভর্তি করে বাংকার তৈরি করে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ (বিজিবি)। সে ক্ষেত্রে খালি বোতলে বালু ভরাট করে বাংকার তৈরি করলে তা আরও শক্তিশালী হবে। ইট দিয়ে এ বাড়ি তৈরি করলে চার লাখের মতো টাকা ব্যয় হতো। বোতলের বাড়ি নির্মাণে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।

এ গ্রামের বাসিন্দা প্রবীণ সাংবাদিক শেখ আব্দুল আলিম বলেন, ‘ফেলনা বোতল দিয়ে যে বাড়ি করা যায়, তা রাশেদুলের এই বাড়ি না দেখলে কারও বিশ্বাস হতো না। তার এই বাড়ি দেখে এলাকার অনেকে উদ্বুব্ধ হচ্ছেন। অনেকে তাদের কাছ থেকে বাড়ির নকশা করে নিয়ে যাচ্ছেন।’

গ্রামের বাসিন্দা রহিম উদ্দিন বলেন, ‘এত কম ট্যাকায় মজবুত বাড়ি হয়, এটা আগোত জানলে হামরাও প্লাস্টিকের বোতল কুড়ায় বাড়ি কইরবার পানু হয়।’

পরিবেশবান্ধব হলেও বাড়ি নির্মাণে প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন হওয়া উচিত বলে মনে করেন কালীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মো. শামছুজ্জামান।

তিনি বলেন, ‘এটি পরিবেশবান্ধব হতে পারে। কারণ ইট দিয়ে বাড়ি পরিবেশের জন্য হুমকি। এটি ট্রায়াল দিয়ে দেখা যেতে পারে। আরও কিছু বাড়ি হলে বোঝা যাবে, এটি কতটা শক্তিশালী। তবে এটি যে তাপ শোষণ করার ক্ষেত্রে ভালো কাজ করবে, এতে সন্দেহ নেই। গরমকালে শীতল থাকবে বাড়িটি।’

মন্তব্য করুন


 

Link copied