করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়া ভালো নেই। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াও নানা শারীরিক সমস্যা রয়েছে তার। এর মধ্যেই সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ফুসফুস থেকে দুবার পানি অপসারণ করা হয়েছে। হার্টে সমস্যা আছে। ডায়াবেটিসের মাত্রাও বেশি। এ ছাড়া আর্থ্রাইটিস এবং আরও কিছু সমস্যাও আছে। তার শরীরের অবস্থা যে কোনো সময় ‘খুবই খারাপ’ হয়ে যেতে পারে, এমন শঙ্কাও রয়েছে। এটিই বেশি ভাবাচ্ছে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় ১০ চিকিৎসক নিয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডকে।
এরই মধ্যে গতকাল রাতে সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, বিএনপির এই শীর্ষনেত্রীর শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় তার এনজিওগ্রাম করানো দরকার বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তার শরীরের বর্তমান যে অবস্থা, তাতে সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ হবে বলে মনে করছে মেডিক্যাল বোর্ড। বোর্ডের পক্ষ থেকে বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতা এবং খালেদা জিয়ার পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এমনটিই জানানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে এক চিকিৎসক এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার সুস্থতার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আছেন’ বলেন মির্জা ফখরুল। এর পর তিনি যোগ করেন, ‘আসুন আমরা সবাই মিলে আন্তরিকতার সঙ্গে দোয়া করি তার আশু রোগমুক্তির জন্য।’
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা পর্যালোচনায় ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড মঙ্গলবার প্রায় পৌনে দুই ঘণ্টা বৈঠক করেছে। এ সময় খালেদা জিয়ার রক্ত পরীক্ষার রিপোর্টগুলো নিয়ে তারা পর্যালোচনা করেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, খালেদা জিয়ার ফুসফুস থেকে দুই দফায় পানি অপসারণ করা হয়েছে। দুবারই সফলভাবে এটি সম্পন্ন হয়েছে এবং জটিল কোনো রোগের জীবাণু পাওয়া যায়নি। বর্তমানে স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছেন না খালেদা জিয়া। দুই থেকে চার লিটার অক্সিজেন দিয়ে মাত্রা স্বাভাবিক রাখা হচ্ছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের কোভিড আক্রান্ত হওয়ার কারণে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, একই ধরনের সমস্যার কারণে দ্বিতীয় দফার পরীক্ষায় ফল নেগেটিভ আসার পরও অনেক করোনা রোগীর জীবন ঝুঁকিতে পড়েছে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে এ সমস্যাটা তীব্র হয়ে থাকে। এ বিষয়টি নিয়েই চিকিৎসকদের ভয় বেশি।
বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা বলেছেন, শুধু করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে তাকে নিয়ে যত ‘ভয়’। নইলে তার যে সমস্যাগুলো আছে তা খুব জটিল কিছু নয়। বয়স একটি বড় ফ্যাক্টর। ৭৬ বছর বয়সী বিএনপি চেয়ারপারসনের হিমোগ্লোবিন কমে গেছে, ডায়াবেটিস মাত্রা অনেক বেশি। যার কারণে তিনি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। কারণ এ সমস্যাগুলো করোনার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে তীব্র করতে পারে।
এমন পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকেও তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছিল। বলা হচ্ছিল, এ জন্য সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ চলছে। এরই মধ্যে গতকাল বুধবার রাতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের কাছে এ সংক্রান্ত আবেদন করেন। রাত সাড়ে আটটায় তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় যান। তিনি ফিরে যাওয়ার পর রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই একটি আবেদন দিয়েছেন। সেটা আমি গ্রহণ করেছি। আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের যে নির্দেশনা দেবে, সে অনুযায়ী আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। তিনি আরও বলেন, তার (খালেদা জিয়ার) উন্নত চিকিৎসার প্রয়োাজন হলে বিষয়টি আমরা ইতিবাচকভাবে দেখব।
এর আগে গত সোমবার রাতেও শামীম এস্কাদার ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে টেলিফোনে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলাপ করেন। তারা খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
একটি সূত্র জানায়, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে অনুমতি পেতে সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে খালেদা জিয়ার পরিবার। সরকারের সবুজ সংকেত পাওয়ার পরই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন জমা দেন। আজ-কালের মধ্যে খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার অনুমতির ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যেতে পারে বলে বিএনপির একটি সূত্র জানিয়েছে।
সরকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সরকার অবগত আছে। তাকে দেশের বাইরে নিতে চাইলে সরকার অনুমতি দেবে। কিন্তু যে আদেশে তিনি জেল থেকে বের হয়েছিলেন, সে অনুযায়ী তার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ নেই। তবে খালেদা জিয়ার পরিবার আবেদন করলে আদালত তাকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে পারেন।