শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর থেকে: করোনা সংক্রমণ ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা দিনাজপুর সদরে সপ্তাহব্যাপী লক-ডাউনের আজ দ্বিতীয় দিন চলছে। লক-ডাউনে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও তা বাস্তবায়নে হিমসিম খাচ্ছে প্রশাসন।
লক-ডাউন বাস্তবায়নে মাঠ কাজ করছে,পুলিশ,র্যাব,বিজিবিসহ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী। কিন্তু, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের খামখেয়ালিপনায় ভেস্তে যাচ্ছে,প্রশাসনের কঠোর বিধিনিষেধ। ১৩ জুন রাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির বৈঠক শেষে জারিকৃত এক গণ-বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী এ এ লক-ডাউন ঘোষণা করেছেন।
প্রথম দিনের সকাল থেকে শহরের পাঁচটি প্রবেশ মুখে পুলিশ-আনসার-বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা তল্লাশি চৌকি বসালেও আজ তেমন তৎপর নয় তারা। লক-ডাউনের নির্দেশনায় জরুরি পণ্য সেবার দোকান ছাড়া অন্য সব দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার ঘোষণা থাকলেও বেশ কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানের অর্ধেক খোলা রেখে ব্যবসা চালু রয়েছে। অকারণে মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে, মুখের মাস্ক থুতনিতে আটকে রেখে ঘুরছে, শহরের রাস্তা-মোড় এবং অলিগলিতে। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় লক-ডাউন পালনে প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের নেতারা মাঠে থাকার কথা থাকলেও পুলিশ,র্যাব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়া কাউকে চোখে পড়েনি।
আজ সকালে শহরের প্রাণ কেন্দ্র লিলি মোড় ও রেল স্টেশনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মর্তুজা-আল-মুঈদের নেতৃত্বে পুলিশ এবং র্যাব সদস্যদের তৎপরতা দেখা গেছে। তাঁরা ইজি-বাইক ও মোটরসাইকেল আটকিয়ে যাত্রী এবং রেল স্টেশনে বসে থাকা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। হাসপাতালে যাওয়ার কথা শুনলে দেখে নিচ্ছেন চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র। উপযুক্ত প্রমাণ দিতে না পারলে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন।শহরের লিলি মোড়,জেল রোড,কালিতলা, মডার্ন মোড়, চারুবাবুর মোড় এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও শহরের প্রবেশ পথ এবং প্রধান রাস্তায় মানুষ ও ইজি-বাইকের চলাচল রয়েছে।
দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা.আব্দুল কুদ্দুস জানান, দিনাজপুরে চলতি মাসের ১৩ দিনে করোনায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত জেলায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে, ১৪৪ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৭৬ জন। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৪৪৩ জন।এর মধ্যে সুস্থ হয়েছে ৫৬৯৫ জন। বর্তমানে শনাক্তের হার ৩৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ। বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত রোগী ৬০৪ জন।এর মধ্যে ৮৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে ২৩০ জন এবং হোম আইসোলেশনে রয়েছে, ৫৬৭ জন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি জেলায় করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০। এরপর প্রায় দেড় মাস ধরে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ২০ মার্চ জেলায় একজনের মৃত্যু হয়। চলতি জুনের প্রথম থেকে জেলায় আশঙ্কাজনক ভাবে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। ২ জুন জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ১ জন, ৪ জুন ২ জন, ৫ জুন ৩ জন, ৬ জুন ২ জন, ৭ জুন ১ জন, ১১ জুন ১ জন এবং ১২ ও ১৩ জুন ৪৮ ঘণ্টায় মারাযান ৫ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১ জন সহ মোট ১৪৪ জন মারা যায়।
দিনাজপুর সিভিলসার্জন ডা: আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী। বিশেষ করে দিনাজপুর সদর উপজেলায় সংক্রমণ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।