স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের দলিত পরিবারগুলো পেল কবরস্থানের জায়গা। এতো দিন তারা তাদের সম্প্রদায়ের স্থায়ী কবরস্থানের প্রকট সংকটে ভুগছিল।
জানা যায়, দারোয়ানি রেলস্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রায় ২০০ বছর ধরে রবিদাস, বাশমালী ও হরিজন সম্প্রদায়ের ৬০টি পরিবার বসবাস করে আসছে। এই পরিবারগুলোর নানা বৈষম্যের সঙ্গে সবচেয়ে প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল স্থায়ী কবরস্থানের।তাদের দাফনের জন্য নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় কখনো রেললাইনের ধারে, কখনো রাস্তার ধারে বা বাড়ির আঙিনায় দাফন করা হতো। সমাধির জায়গার জন্য তাদের বিড়াম্বনার শিকার হতে হয়েছে বহুবার। অবশেষে এ বঞ্চনার অবসান ঘটেছে।
নীলফামারী সদর উপজেলা প্রশাসন তাদের সমাধির জন্য ১০ শতক জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া সমাধিস্থলের উন্নয়ন করার জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ টাকা।
নীলফামারী দারোয়ানি রবিদাস সম্প্রদায় উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছবি রানী রবিদাস বলেন, আমাদের সম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে তাকে সমাধিস্থ করার কোনো জমি ছিল না। এই নিয়ে আমাদের ভোগান্তি আর বঞ্চনার শেষ ছিল না। এমনো হয়েছে, আমরা গর্ত করেছি কিন্তু দাফন করতে পারিনি।
তিনি আরও বলেন, এখানে ৬০-৭০টি পরিবারের প্রায় ৪০০ জন মানুষ বাস করে। আমাদের দাফনের জায়গা ছিল না। তিনি উল্লেখ করে জানান, নীলফামারী জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রত্না সিনহার সহযোগীতায় আমরা উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জমি আর টাকা পেয়েছি। ইউএনও ম্যাডাম বিষয়টি জানামাত্র আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি স্বল্প সময়েই আমাদের জন্য যা করেছেন আমরা আজীবন তাকে স্মরণ করব।
শিপন রবিদাস জানান, রত্নাদির সাথে পরিচয় বেশি দিনের নয়। মাস দুয়েক। ফেসবুকে। মাধ্যম- বিআরএফ এর নীলফামারী জেলা শাখার নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ছবি রানী রবিদাসের মাধ্যমে। ফোনালাপে জানলাম উনি লেপ্রোসিতে কর্মরত ছিলেন। জীবনের বড় একটা অংশ সামাজিক ও মানবিক কর্মকান্ডে নিজেকে নিয়োজিত করে এসেছেন, আসছেন। বর্তমানে আছেন নীলফামারী জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্বে। তিনি সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য ও উৎসাহ বোধ করেন, সেটা প্রথম আলাপচারিতায়ই বুঝেছিলাম। মোটামুটি লম্বা ফোনালাপ হয়েছিলো সেদিন। নীলফামারীর বেশকিছু রবিদাস পল্লীতে রত্নাদি ইতিমধ্যেই উঠান বৈঠক ও মতবিনিময় করে তিনি তাদের জন্য কিছু একটা করার চেষ্টায় মশগুল ছিলেন শুরু থেকেই। অনেক চেষ্টার পর নীলফামারী জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে সদর উপজেলার ইএনও পর্যন্ত এই জনগোষ্ঠীর কষ্টের কথা বেশ ভালোভাবেই জানান দিতে সম হয়েছিলেন তিনি। মাঝখানের গল্পটা (তিক্ত/মিষ্টি অভিজ্ঞতায় ভরা) লম্বা হলেও শেষমেষ সফল পরিসমাপ্তি ঘটলো ২৭ জুন। নীলফামারী সদর উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নের জয়চন্ডী দোলাপাড়ায় ১০ শতাংশ জায়গার উপর শ্মশান নির্মানের মাধ্যমে শতাধিক বছরের ভোগান্তির অবসান ঘটলো স্থানীয় রবিদাস, হরিজন ও বাঁশমালী সম্প্রদায়ের।
জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক রত্না সিনহা বলেন, সোনারায় ইউনিয়নের দলিত সম্পদায়ের ওই পরিবারগুলো নানা দিক থেকেই বঞ্চনার শিকার হচ্ছিল। তাদের প্রার্থনা করার জন্য কোনো মন্দির নেই, তাদের সমাধি করার কোনো জমি নেই। আমি বিষয়টি জানতে পেরে জেলা প্রশাসক ও ইউএনও স্যারদের অবগত করি। তাদের প্রত্য মানবিকতায় আজ দলিত সম্প্রদায়ের মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটল।
নীলফামারী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা (ইউএনও) এলিনা আকতার বলেন, আমি বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের জন্য জমির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।এ ছাড়া জমির উন্নয়নে আরও এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।