সোমবার (১২ জুলাই) রাজধানীর গাবতলীর আমিন বাজার ব্রিজের ওপর কথা হয় শামসুল হকের। তিনি জানান, ফরিদপুরে ইট বালু কনস্ট্রাকশনের একটি প্রতিষ্ঠানে বাবুর্চির কাজ করেন তিনি। প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন লোকের রান্না করেন। এভাবেই কেটে যাচ্ছিল তার সময়। সামনে ঈদ, তাই পরিবার সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে শত কষ্ট সহ্য করে বাড়ির দিকে ছুটছেন তিনি।
কিছুটা ভারাক্রান্ত মন নিয়ে শামসুল হক বলেন, ‘গত দুই দিন ভীষণ কষ্ট হয়েছে। পায়ে হেঁটে, রিকশা ও অটোরিকশায় চেপে এখন পর্যন্ত রাজধানীতে এসেছি।’ বাকি পথ কীভাবে যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেখি সামনে যদি কোনও ট্রাক কিংবা কিছু পাই তাহলে সেটাই উঠে পড়বো। তা যদি সম্ভব না হয় তাহলে দুদিন তো কষ্ট করলাম আরও কয়েকদিন কষ্ট করে হেঁটে বা বিভিন্নভাবে কুড়িগ্রাম যাবো। গত দুদিন রাস্তায় রুটি খেয়েছি, আজ গাবতলীতে এসে ভাত খেলাম।’
পরিবারে তার স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদে বাড়ি যাওয়ার জন্য তারা খুব জোরাজুরি করছে। কিছু টাকা আগেই তাদের পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন বাচ্চাদের এবং নিজের আনন্দের জন্যই বাড়ি যাচ্ছি।’
শামসুল হকের সঙ্গে কাজ করা আরও একজন সামাদ। তিনিও পায়ে হেঁটে ও রিকশায় করে ফরিদপুর থেকে ঢাকায় এসেছেন। তিনি বলছিলেন তার অভিজ্ঞতার কথা, ‘ফরিদপুর থেকে মাওয়া ঘাটে এসে নৌকা দিয়ে ঘাট পার হয়েছি। তারপর সেখান থেকে পায়ে হেঁটে এবং রিকশা-অটোরিকশা করে দুই দিনে ঢাকায় এসেছি।’
এত কষ্ট করে এবং এই সংক্রমণ ঝুঁকির মধ্যে কেনইবা বাড়ি যেতে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সামাদ হাসি মুখে বলেন, ‘ঈদ এসে গেছে, বাড়ি যাওয়া লাগবে না। ঈদের জন্যই বাড়ি যাচ্ছি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করবো এটাই অনেক শান্তির। প্রায় দেড় মাস হলো ফরিদপুরে কাজের জন্য এসেছিলাম, এখন কুড়িগ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।’ কী কাজ করতেন এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বালু ও পাথর ট্রাকে লোড-আনলোডের কাজ করতাম।’
ছুটি নিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে ছুটির কোনও বিষয় নেই। যখনই যাবো তখনই কাজ করতে পারবো। এটা একটা স্বাধীন পেশা বলে আমার কাছে মনে হয়। বাকি পথ বাড়ি যেতে রাস্তায় যদি কোনও ট্রাক পায় তবে সেটাতে উঠে যাবো। অটোরিকশা কিংবা পায়ে হেঁটে তো এসেছি, এখন পর্যন্ত কোনও সমস্যা হয়নি। পায়ে হেঁটেই কিংবা ভেঙে-ভেঙে যেভাবেই হোক কুড়িগ্রাম পৌঁছে যাবো ইনশাল্লাহ।’