শনিবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত রংপুর নগরের সাতমাথা, মর্ডান মোড়, শাপলা চত্বর, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ বেশকিছু এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কারো মধ্যে তেমন করোনা ভীতি নেই। নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা গুণতে হবে, এমন ভাবনাটাও কাজ করছে না। বরং বাহিরে বের হওয়া মানুষদের মধ্যে একধরণের উদাসীনতা লক্ষ্য করা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরের বাজার সংলগ্ন এলাকা ও মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। বিভিন্ন স্থানে দোকানপাট খোলা নিয়ে চলছে লুকোচুরি। গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসের চলাচল বেড়েছে। বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। পরিবারের খাদ্যাভাব মেটানোর অযুহাতে বের হওয়া মানুষই বেশি। তাদের কেউ পায়ে হেঁটে বা আবার কেউ বের হয়েছেন অটোবাইক ও রিকশা নিয়ে।
নগরের পার্কের মোড়ে দেখা হয় বাদাম বিক্রেতা মোহাম্মদ হাফিজের সাথে। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের কারণে আগের মতো বিক্রি নাই। শুক্রবার মানুষ কম বের হয়েছিল। আজ একটু বেশি মনে হচ্ছে। যত মানুষ রাস্তাঘাটে বের হবে, তত ব্যবসা ভালো। মানুষ শহরে না আসলে কার কাছে বাদাম বিক্রি করব। আমাদেরও তো পেট আছে।’
সকাল থেকে প্রশাসনের তেমন তৎপরতা চোখে পড়েনি। তবে বেলা গড়িয়ে যেতেই দেখা যায় সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনীর তৎপরতা। বিধিনিষেধ কার্যকর করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাথে নিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে কাজ করছে। যানবাহনের অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় চলাচল নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ করছে জরিমানা। চেকপোস্টে যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে বাড়ির পথে ফিরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ।
যারা বিনা কারণে বাইরে বের হয়েছে, তাদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে চেকপোস্টে দায়িত্বে থাকা এক ট্রাফিক পুলিশ। নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি জানান, যারা মাস্ক পরেনি, এমন অনেককে জরিমানা করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মাঝেমধ্যে রিকশা আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মূলত বিধিনিষেধ মেনে চলার ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) ৬ থানা, ট্রাফিক বিভাগ ও ডিবির ২৫টি টহল টিম মাঠে কাজ করছে। বিধি-বহির্ভূতভাবে বিভিন্ন যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণে নগরীতে ২০টি চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এছাড়াও বিধিনিষেধ কার্যকর করতে রংপুর জেলা প্রশাসনের সাথে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দল যৌথভাবে কাজ করছে।
আরপিএমপির সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. ফারুক আহমেদ (ডিবি এন্ড মিডিয়া) জানান, বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি, আনসার বাহিনীর ২টি করে টহল দল কাজ করছে। শুক্রবার বিধিনিষেধের প্রথম দিনে তিন লাখ বাইশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শতাধিকের বেশি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
রংপুর জেলায় করোনা প্রতিরোধে গঠিত নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ করোনার এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও উদাসীন ও অসচেতন। এজন্য জনগণকে বিধিনিষেধ মানাতে প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে। তা না হলে অতীতের মত এটিও ব্যর্থ লকডাউনে পরিণত হবে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা. আবু মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, করোনার বিস্তার রোধে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। জনগণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণের হার অনেকাংশে কমে যাবে।