স্টাফ রিপোর্টার,নীলফামারী॥ অমানবিক চিত্রের একটি পোস্ট ঘিরে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়া। পোস্টটিতে দেখা যাচ্ছে তিনজন যুবক পদ্মবিলে গিয়ে পানিতে নেমে প্রকৃতিকে সুন্দরময় করে ফুটে উঠা পদ্মফুলগুলি ছিড়ছে।
আজ শনিবার(২৪ জুলাই/২০২১) বিকালে মুহাইমিনুল ইসলাম মুরাদ নামে এক ব্যক্তির ফেসবুক আইডিতে এমন একটি পোস্ট দেখা যায়। সেই পোস্টের ছবিতে দেখা যায় তিন যুবক পদ্মবিলে নিমে সেখানে ফুল ছিড়ছে। মুহাইমিনুল ইসলাম মুরাদ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পেস্টে করে লিখেছেন “সিংদই পদ্ম বিল। ফুল আমাদের লাগবেই, নৌকা না চলায় নিজেরাই বুক পানিতে নেমে পড়লাম। মজার বেপার হলো জোক কিন্তু ধরতে পারে নি”।
ফেসবুকে পোস্ট করার কয়েক মিনিটে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়। যা বিকালে থেকেই নীলফামারী জেলায় "টক অব দ্যা ডে" তে পরিনত হয়।
জানা যায়, গত তিন সপ্তাহ ধরে নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই গ্রামের সিংদই বিল পদ্ম বিলে পরিনত হয়েছে। দূর দুরান্ত থেকে মানুষ পরিবার সহ ছুটে যাচ্ছে এই বিলটি দেখার জন্য। দীর্ঘক্ষণ সময়ও পার করছে সেখানে গিয়ে। সেই বিলের আগ্রত দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বসার আসন ও বিলে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকা ও মাঝি। পদ্ম ফুলের কাছে যাওয়া মাত্রই মাঝিরা দর্শনার্থীদের ফুল না ছেড়ার জন্য অনুরোধ করেন। ঈদুল আজহার দিনেরও সেখানে প্রচুর দর্শনার্থীদের ভিড় জমে।
কিন্তু আজকে এমন এক অমানবিক দৃশ্য দেখে সেখানে যাওয়া অনেকের মন খারাপ হয়ে গিয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যা থেকে মুহাইমিনুল ইসলাম মুরাদ’এর ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি গিয়ে দেখা যায় তিনি পোস্টটি ডিলেট করে দেন। এমন কাজ করার কারণ জানার জন্য মুহাইমিনুল ইসলাম মুরা ‘এর ফেসবুক মেসেঞ্জার অনেকবার চেষ্টা করলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
পদ্ম বিলের সার্বিক দায়িত্বে থাকা তানজিম ওয়াসতি টিটু বলেন, প্রতি বছরের বর্ষায় সময় এই বিলটি পদ্মফুলে ভরে যায়। কয়েকদিনে এখানে প্রর্যটকদের অনেক ভিড় হয়েছে। ঈদুল আযহার পরে আবারও কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় পদ্ম বিলে জনসাধারনের প্রবেশ নিষেধ রাখা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরের দিকে সকলের অনুপুস্থিতে কে বা কারা বিলে এসে অধিকাংশ পদ্ম ফুল ছিড়ে নিয়ে যায়। বিকাল ৫টায় আমার এক পরিচিত বন্ধু ফেসবুকে একটি ছবি পাঠিয়ে দিলে জানতে পারি কারা এমন কাজ করেছে। পদ্ম ফুল রক্ষা এবং এমন অমানবিক কাজ যে করেছে তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য থানায় অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
নীলফামারী সরকারি কলেজের রাষ্টবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোঃ নুরুল করিম বলেন, আমি যেদিন থেকে পদ্ম বিলের খবর পেয়েছি সেদিন থেকে পদ্মবিলে গিয়ে সময় পার করি। ঈদের পরে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ ধাকায় যাওয়া সম্ভব হয় নি। আজকে বিকালে ফেসবুকে পদ্মফুল ছিড়ার পোস্ট দেখে মনটি অনেক খারাপ হয়ে যায়।
জেলা শহরের উকিলপাড়া বাসিন্দা সুজন প্রধান বলেন, নীলফামারীর মানুষ হচ্ছে ভ্রমণপ্রিয়। মানুষ সিংদই বিলে শুধু পদ্মফুলগুলি দেখার জন্যই যাচ্ছে। আজকে যারা এই অমানবিক কাজ করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যটাকে নষ্ট করেছে তাদের আইনের আওতায় এসে শাস্তি দেয়া হউক।
‘নীলফামারী পদ্মবিল’ ফেসবুক গ্রুপের এডমিন মাসুদ পারভেজ জানান, যে এমন অমানবিক কাজ করেছে সে কখনই মানুষ হতে পারে না। এভাবে পদ্ম বিল থেকে ফুল ছিড়ে সেখানকার সৌন্দর্যটাকে নষ্ট করে আবার ফেসবুকে ছবি সহ পোস্ট করে ‘ফুল আমাদের লাগবেই’ তারা মানষিক রোগী ছাড়া কিছুই না। আমরা এটির দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবি করছি।
এ বিষয়ে সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদ-উন নবী জানান, আমি নিজে সেখানে গিয়েছিলাম পরিবার সহ। সেখানকার পরিবেশটি অনেক সুন্দর। বিকালে ফুল ছিড়ার বিষয়টি আমিও জানতে পারে। তবে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইটাখোলা ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রশিদ মঞ্জু জানান, বিষয়টি শুনেছি। পদ্মবিলে দায়িত্বে থাকা লোকদের ডেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।