আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

শ্যামাসুন্দরী খাল সুস্থ হলেই রংপুর হবে আদর্শ নগরী

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই ২০২১, সকাল ০৯:২২

মো. শহিদুল ইসলাম

বর্তমান বিশ্বে নগরীয় হিট আইল্যান্ড একটি তাৎপর্যপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। হিট আইল্যান্ড হলো সেসব নগর অঞ্চল যেখানে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করে; নগরের বিভিন্ন কাঠামো যেমন বিল্ডিং, রাস্তা এবং অন্যান্য অবকাঠামো প্রাকৃতিক ভূদৃর্শ্য যেমন বন, জলাশয় ইত্যাদির চেয়ে সূর্য থেকে বেশি তাপ শোষণ করে এবং পুনরায় নির্গত করে।নগরের ঘনত্ব ও পরিসর বৃদ্ধির সাথে সাথে হিট আইল্যান্ড এর পরিধি ও প্রভাব বৃদ্ধি পায়। হিট আইল্যান্ড এর প্রভাবে নগরীয় তাপমাত্রা অত্যাধিক বেড়ে যায় ফলে নগরবাসী অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্য দিয়ে জীবন নির্বাহ করে থাকে। এবং অত্যাধিক তাপমাত্রা মানুষ ছাড়াও জীববৈচিত্রের অন্যান্য উপাদানের উপর বিরুপ প্রভাব সৃষ্টি করে থাকে। গত কয়েক বছরে পাশের দেশ ভারতেই অত্যাধিক তাপমাত্রার কারণে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নগরে ব্যবহূত উপাদানসমূহ সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত সহায়ক। নগরীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক জৈবিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কোন জলাশয়ের কার্যকারিতা ব্যাখ্যা করে শেষ করা সম্ভব নয়।

রংপুর নগর দেশের অন্যান্য নগরের চেয়ে অনেক বেশি আশীর্বাদপ্রাপ্ত শ্যামাসুন্দরী খালের কারণে। নগরের বুকচিরে প্রবাহিত হয়েছে শ্যামাসুন্দরী খাল। খালটি সৃষ্টির ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, রংপুরের জমিদার চৌধুরাণী শ্যামা সুন্দরী দেবীর (দেবী চৌধুরাণী) পুত্র তৎকালীন পৌরসভার চেয়ারম্যান রাজা জানকীবল্লভ সেন নগরে মশার উপদ্রব ঠেকাতে ও ম্যালেরিয়ার প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৮৯০ সালে শ্যামাসুন্দরী খালটি খনন করেন। যেটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ১৫.৮০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ছিল স্থানভেদে ২৩ ফুট থেকে ৯০ ফুট (সূত্র: সমকাল) । তবে বর্তমানে খালটির প্রশস্ততা ও নাব্যতা একেবারে কমে গেছে। অবৈধ দখল, বর্জ্য নিক্ষেপসহ নানামুখী কারণে খালটি নগরবাসীর জন্য আশীর্বাদের স্থলে নগরীয় জীবনধারাকে মারাত্নক হুমকিতে ফেলছে।

প্রায় হিমালয়ের পাদদেশে এবং সমুদ্র থেকে ৩৪ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই রংপুর নগর গত কয়েক বছরে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হয়েছেন। নগরবাসীর তথ্যমতে ২০২০ সালের জলাবদ্ধতায় স্থানভেদে ১.৫ থেকে ৬ ফুট বা আরো বেশি পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল এবং জলাবদ্ধতা প্রায় ৫ থেকে ৮ দিন এবং কিছু কিছু স্থানে আরো বেশি দিন স্থায়ী হয়েছিল।

বিশেষজ্ঞগণের মতে শ্যামাসুন্দরী খাল এর অব্যবস্থাপনাই নগরটিতে আকস্মিক বন্যা ও জলাবদ্ধতার জন্য দায়ী। প্রতিনিয়ত বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে খালটি যেন ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে্ ফলে নগরবাসী মশা মাছির উপদ্রব ও দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে দিন দিন। খালটি নানা ধরণের বর্জ্য দ্বারা পরিপূর্ণ হওয়ায় এবং নাব্যতা কমে যাওয়ার ফলে নগরীয় তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে।

অথচ শ্যামাসুন্দরী খালটির সঠিক ব্যবস্থাপনা রংপুর নগরীর সার্বিক পরিবেশ বদলে দিতে পারে সুন্দরভাবে। নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, আকস্মিক বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ভূগর্ভস্থ পানির অনুপ্রবেশে শ্যামাসুন্দরী হতে পারে অতুলনীয় উৎস। নগরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাপনায় জলাশয়টি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম। এছাড়া এটি নগরবাসীর চিত্তবিনোদনের জন্যও হতে পারে অনন্য সহায়ক; রংপুর নগরেই অবস্থিত চিকলির বিল এটির অনন্য দৃষ্টান্ত।

নগরীয় জলাশয়ের রয়েছে বহুমাত্রিক উপকারিতা। তাৎক্ষণিক পানির উৎস হিসেবে জলাশয়ের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদে পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজনে জলাভূমি সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধানের কথা বলা হয়েছে।

কাজেই খালটির পুনরুদ্ধার ও পুনর্বিন্যাসের জন্য কার্যক্রম গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। তবে খালটির ব্যবস্থাপনা কেবল নগর কর্তৃপক্ষের একার দ্বারা সম্ভব নয় এজন্য দরকার নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা। মনে রাখা জরুরি, শ্যামাসুন্দরী খালটির স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যদি এখনই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তবে অদূর ভবিষ্যতে রংপুর নগর দেশের অন্যান্য নগরের (ঢাকা, চট্টগ্রাম) মত মলিন হয়ে পড়বে। যাহোক প্রত্যাশা যে খুব দ্রুতই শ্যামাসুন্দরী ফিরে পাবে তার স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য। জলাশয়টির আবেশে রংপুর হবে অপার নান্দনিক নগর; স্বচ্ছ জলে ভরা শ্যামাসুন্দরীর পাশে বসে নগরবাসী উপভোগ করবে এক অনাবিল শান্তির জীবন।

লেখক: প্রভাষক (ভূগোল), রংপুর ক্যাডেট কলেজ, রংপুর ।

Email: sahidulislamges@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied