আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ● ৫ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ১৮ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: ডোমার ও ডিমলা উপজেলা নির্বাচনে ৩৫ জনের প্রার্থীতা বৈধ ॥ চেয়ারম্যান পদে ১২ জনের মধ্যে আওয়ামীলীগের ৭ জন প্রার্থী       নীলফামারীতে ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবস পালন       নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়ে যুবকের মৃত্যু       কিশোরীগঞ্জে পাঁচতলা ভবন থেকে পড়ে এক ব্যাক্তির রহস্যজনক মৃত্যু       উপজেলা নির্বাচনে জাপার প্রার্থী হতে চান না কেউ      

 width=
 

ঘুরে দাড়াতে চায় শ্যামপুর চিনিকল

বুধবার, ২৫ আগস্ট ২০২১, সকাল ০৯:৫৯

চিনিকলের হিসাব শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ মাড়াই মৌসুমে মিলটির লোকশন হয় ৬৩ কোটি টাকা।গত ২০১৯-২০ মাড়াই মৌসুমে লোকসান হয় প্রায় ৬১ কোটি টাকা। বিগত ১০ মাড়াই মৌসুমে ৩৬৫ কোটি টাকা লোকসানের পর শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি শ্যামপুর সুগার মিল ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের আরও ৫টি চিনিকল বন্ধের সুপারিশ করে। এরই সূত্রধরে, গেলো বছরের ডিসেম্বরে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন।

অবশেষে বন্ধের ৮ মাস পর লোকসান কাটাতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে মিল কতৃপক্ষ। আর সেই আশায় নতুন করে বুক বাধতে শুরু করেছে চিনিকলে শ্রমিক -কর্মচারীরা।

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, চিনিকলটির পরিত্যক্ত জমিতে নতুন করে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও কলটির লাভজনক করতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করেছেন তারা।আর এই প্রস্তাবনা গুলো আকড়ে ধরে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে হাজারো শ্রমিক। কর্তৃপক্ষের নেয়া পরিকল্পনা গুলোর একটি 'কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন'।কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলে উৎপাদিত আলু দিয়েই তারা গড়ে তুলতে চান পটেটো চিপস ও স্বল্প পরিসরে চকলেট তৈরির কারখানা, ভূট্টা দিয়ে হাঁস-মুরগি, মৎস্য ও গবাদিপশুর খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা ও চাহিদার শীর্ষে থাকা এই অঞ্চলের উৎপাদিত হাড়িভাঙ্গা আমের জুস তৈরীর কারখানা।

এছাড়া এই এলাকায় আলুর ব্যাপক চাষ হওয়ায় তা সংরক্ষণে একটি কোল্ড স্টোরেজ স্থাপন করার চিন্তাও রয়েছে তাদের। এই অঞ্চলের পানির হার্ডনেস অনেক কম হওয়ায় মিনারেল ওয়াটার প্ল্যান্ট নির্মান এবং মিলের আয় বাড়াতে গোডাউন ও দোকান নির্মান করে ভাড়া দেয়ার পরিকল্পনার কথাও জানান সংশ্লিষ্টরা। একইসঙ্গে ফিলিং স্টেশন ও এলপিজি স্টেশন নির্মাণের পরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাই করা হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে বিনোদন কেন্দ্র ও রিসোর্ট নির্মাণের প্রস্তাবনা।

এর আগে চিনিকল বন্ধের ঘোষণার পর থেকেই বিভিন্ন সময় মিল পুনরায় চালু অথবা শ্রমিকদের কর্মসংস্থান এর দাবিতে আন্দোলন করে আসছিল শ্যামপুর সুগার মিলস্ এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ। এদিকে চিনিকল ছাড়াও এটির আওতাধীন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাফেজিয়া মাদ্রাসা, জেনারেল ক্লাব, ট্রেনিং কমপ্লেক্স,বীজ বিতরণ কেন্দ্র, অতিথি ভবন এবং মিল ঘিরে গড়ে উঠা একটি বাজার নিয়েও তৈরি হয় অনিশ্চয়তা।

বুধবার(২৫ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিনে শ্যামপুর চিনিকলে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। দাপ্তরিক কাজকর্ম চললেও কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতি খুব কম। একজন কর্মকর্তা জানালেন, দাপ্তরিক কাজকর্ম শুরু হয় সকাল সাড়ে সাতটায়, চলে বেলা তিনটা পর্যন্ত।

চিনিকলটির মূল ফটকের বাইরে চায়ের দোকানে কথা হয় মৌসুমি শ্রমিক মোস্তাহারুল মন্ডলের। তিনি অনেকটা আক্ষেপ করে বলেন, কুশার (আখ) মাড়াই শুরু হওয়ার টাইমে সরকার হামার মিলটা বন্ধ করে দিল।এক পাশে কর্মহীন হইনো অন্য দিকে করোনা চলে দেশোত। হামার দিকে আর কেউ তাকাইলো না।

তিনি আরও বলেন, এখন শুনতোছি মিলের জায়গাত নয়া করি কারখানা করার জন্য প্রস্তাব পাঠাইছে হামার স্যারেরা।তাই নয়া করে স্বপ্ন দেখতোছি বাহে!

কলটির আরেক শ্রমিক (স্থায়ী) ফারুক হোসেন বলেন,লোকসানের কারণ দেখিয়ে সরকার শ্যামপুর চিনিকলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধ করেছে।কিন্তু করোনা মহামারি চলাকালীন সময়েও আমরা আমাদের এখনও পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন পাই নি। প্রতিবার বকেয়া বেতন এর জন্য আন্দোলন করে শুধু এক মাসের বেতন ভাগ্যে মিলে বলেও জানান তিনি।

চিনিকলটির প্রশাসনিক অফিসের সামনে স্থায়ী কর্মচারী নাহিদা আক্তারের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শ্যামপুর চিনিকল নিয়ে নতুন করে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি।উদ্যোগ গুলো বাস্তবায়ন হলে হয়তো আমাদের আর্থ-সামজিক অবস্থার আবার উন্নতি ঘটতো।বেতন -বোনাস ঠিক মতো পেতাম।

শ্যামপুর চিনিকলের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক আবু সুফিয়ান বলেন, গত মৌসুমে দেশের ১৫টি চিনি কলের মধ্যে উৎপাদনে দ্বিতীয় ছিলো শ্যামপুর সুগার মিল।এই মিলটিকে ঘিরে এক হাজার শ্রমিক সহ জীবিকা নির্বাহ করতো অন্তত ৩০ হাজার মানুষ।কিন্তু হঠাৎ চিনিকলটি বন্ধ করে দেয়ায় মৌসুমী শ্রমিকরা সারা বছরের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে স্থায়ী শ্রমিকরাও টানা ৫ মাসের বকেয়া বেতন না পেয়ে করোনা মহামারিতে মানবেতর জীবন পার করছে।

তিনি আরও বলেন,চিনিকলটি ঘিরে কয়েকটি প্রস্তাব বিএসএফআইসির কাছে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে লোকসান কাটিয়ে মিলটি আবার ঘুরে দাড়াবে ।

শ্যামপুর সুগারমিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবিদ মোঃ আহসান হাবিব উত্তর বাংলাকে বলেন, লোকসানে থাকা শ্যামপুর চিনিকলকে লাভজনক করতে আমরা বেশকিছু পরিকল্পনার প্রস্তাবনা দিয়েছি।এতে মিলটিকে একটি লাভ জনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে । মিলটিকে চালু করতে এসব পরিকল্পনার সম্ভাব্যতা যাচাই করে পদক্ষেপ গ্রহন করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন,চিনিকলে কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের অনুমোদিত পদ আছে ১০০৪টি।শূন্য পদ ৫১১ টি আর চিনিকলে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী আছেন ৪৯৩ জন। এর মধ্যে দৈনিক হাজিরা ও মৌসুমভিত্তিক চাকরি করতেন ২২৩ জন।যারা চিনিকলের মাড়াই বন্ধ হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

দেশে উন্নত জাতের আখ উদ্ভাবন না হওয়া এবং উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় বেসরকারি চিনি কল ব্যবসায়ীদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে লোকসানে পড়েছে চিনি কলগুলো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

মন্তব্য করুন


 

Link copied