সাইফুর রহমান শামীম, কুড়িগ্রাম: তিস্তা নদী নিয়ে সরকারের মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই ভাঁঙ্গনে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এবারও তীব্র নদী ভাঁঙ্গনে কুড়িগ্রামের রাজারহাটের ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশাম,চরগতিয়াশাম ও বগুড়াপাড়া গ্রামে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ শতাধিক সহ দুই ইউনিয়নের ১০ গ্রাম এক মাসে সহস্রাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছেন ।
কুড়িগ্রাম পাউবো সূত্রে জানা গেছে, স্থায়ী ভাবে ভাঙ্গঁন প্রতিরোধ কল্পে সরকার একটি মেগা প্রকল্প গ্রহন করেছে। যা বাস্তবায়ন হলে ভাঁঙ্গন প্রতিরোধ সহ নদী পাড়ের বাসিন্দাদের জীবন যাত্রার মনোনয়নে আমূল পরিবর্তন আসবে। তবে দীর্ঘদিনেও ওই প্রকল্পের কাজ শুরু না হওয়ায় প্রতিনিয়ত নদী ভাঁঙ্গনের শিকার হচ্ছেন নদী তীরবর্তীএলাকার বাসিন্দারা।
সরজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঘড়িয়ালডাঁঙ্গা ও বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। ইতিমধ্যে উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখাঁ,বুড়িরহাট,গতিয়াশাম,চরগতিয়াশাম,শরিষাবাড়ি বগুড়াপাড়া এবং বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রামহরি,কালির মেলা,চতুরা,গাবুর হেলান,রতি,তৈয়বখঁা,চর বিদ্যানন্দ সহ ১০টি গ্রামের বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক মানুষ গৃহহারা হয়েছে। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গতিয়াশাম,চরগতিয়াশাম ও বগুড়াপাড়া গ্রামে নদী গর্ভে ৫ শতাধিক মানুষের বসত ভিটা, স্থাপনা,দুই শতাধিক একর ফসলী জমি,আড়াই কিলোমিটার রাস্তা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অব্যাহত ভাঁঙ্গন আতঙ্কে দিন কাটছে নদী পাড়ের মানুষদের।
এছাড়া তীব্র ভাঁঙ্গনের কারনে হুমকীর সম্মুখীন হয় পরেছে তৈয়বখঁা বাজার,কালিরহাট বাজার,বুড়িরহাট বাজার,তৈয়বখঁা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ২০টি প্রতিষ্ঠান,নানা স্থাপনা ও ফসলী জমি। দিনের পর দিন ভাঁঙ্গনে হারিয়ে যাচ্ছে দু’টি ইউনিয়নের মানচিত্র । এলাকাবাসীর জানান,জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে যেকান মুহুর্তে নদী গর্ভে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে এসব প্রতিষ্ঠান। ভঁাঙ্গন আতঙ্কে অনেকে গ্রাম ছেড়েও চলে যাচ্ছেন অন্যত্র। এমতাবস্থায় তারা স্ায়ীভাবে ভাঁঙ্গন রোধে সরকারের মহা-পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবী জানান।
এদিকে ভঁাঙ্গনের শিকার পরিবার গুলো খোলা আকাশের নীচে মানবেতর দিনাতিপাত করলেও এখন পর্যনত তারা সরকারি বা বেসরকারি কোন সাহায্য-সহযোগীতা পাননি বলে জানান।
চরগতিয়াশাম বগুড়াপাড়া গ্রামে দেখা যায়,ওই গ্রামের মানিক মিয়া (৬৫) এর আধাঁপাকা বিল্ডিং বাড়িটি নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। এখন তারা নিজেরই বাড়িটি ভেঙ্গে টিন,ইট,রড সহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে ফেলার কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।
মানিক মিয়া বলেন,“ ২০/২৫দিনে পনের ষোল দোন মাটি (জমি) নদীতে বিলীন হয়েছে। ১৫/২০লাখ টাকা খরচে বাড়ি করেছিলাম,তাও চলে গেল।
উক্ত গ্রামের শাহিনা বেগম বলেন“তিস্তা নদী ভাংতে ভাংতে আমাদের ঘরের কাছে এসে গেছে,কখন যে ঘর ভেঙ্গে পড়ে এই আশংকায় আমরা ঘর ভেঙ্গে নিয়েছি ”।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নুরে তাসনিম জানান,ভঁাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ১লক্ষ টাকা ও ১ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ পেয়েছি,তালিকা হছ,দু-একদিনের মধ্যে দেয়া হবে।
কুড়িগ্রাম পাউবোর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদুল হাসান সাংবাদিককে বলেন,গতিয়াশাম,চরগতিয়াশাম গ্রামে গত জুলাই মাসে টানা ৫ দিন ভঁাঙ্গন প্রতিরোধে কাজ করার পর ওই এলাকার লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকদের বেঁধে মারধারের হুমকী দেয়ায় পর আর কাজ করা হয়নি।