আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

করোনা মহামারীঃ নীলফামারীতে কারিগরি শিক্ষায় সংকট॥দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিরূপ প্রভাব

বুধবার, ৩০ জুন ২০২১, দুপুর ০৪:৪৬

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী॥ অতি পুরাতন কথা “শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড”। বর্তমানকালে এখন বলা হচ্ছে, আধুনিক তথা কর্মমুখী (কারিগরি) শিক্ষা ছাড়া শিক্ষা মূল্যহীন। এর সাথে নৈতিকতা ও মানকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সহ বেশিরভাগ দেশ এসবের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তবে, এতে সব দেশই যে সমান সফল হয়েছে, তা নয়। তথাপিও যতটুকু উন্নতি করেছে, তাও সারা বাংলাদেশের ন্যায় উত্তরের জেলা নীলফামারীকেও করোনা মহামারি থমকে দিয়েছে। লক-ডাউন আর স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নিয়ম মেনে চলার কারণে শিক্ষাখাতও বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। একদিকে নিয়মিত শিক্ষিত বেকার জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি করোনার কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক মন্দায় কারিগরি শ্রমশক্তি বেকারত্বের তালিকা দীর্ঘ করছে, অন্যদিকে আমাদের দেশে বিভিন্ন শিল্পে দক্ষ শ্রমশক্তি পূরণ হচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ২০০৮ সাল থেকে দেশের ৬৪টি জেলায় সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সরকারি ইনস্টিটিউট অব মেরিন টেকনোলজি ও কম্পিউটার প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপন করেছে ও করছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর এর বিশ্বায়ন হয়েছে খুব দ্রুত। যা মোকাবেলার জন্য একে একে প্রায় সব দেশ লকডাউন করেছে। ফলে সব খাতের মতো কারিগরি শিক্ষাও গতি হারিয়ে ফেলেছে। এতে দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারিভাবে কারিগরি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২০২০ সালের মধ্যে ২০ শতাংশে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার ল্যক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকারিভাবে বলা হয় দেশের ১৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় পড়াশোনা করছে। কিন্তু বিশ্নেষকরা বলছেন, দেশে মানহীন হয়ে পড়েছে কারিগরি শিক্ষা। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও শিক্ষার্থীদের কাছে এ শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়নি। এ শিক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের পরিসংখ্যানেও রয়েছে গোঁজামিল। পরিসংখ্যানে কারিগরির শিক্ষার্থী হিসেবে তিন মাস ও ছয় মাস স্বল্পমেয়াদি বিভিন্ন শর্টকোর্স এবং ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা শিক্ষার্থীদেরও যুক্ত করা হয়- যা যৌক্তিক নয়। এর পাশাপাশি মহামারি করোনার কারণে ২০২০ সালের এ ল্যক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। দফায় দফায় লকডাউন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কারিগরি ও যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে ২০২০ সালের চালু করা কোর্স ও সেশনগুলি শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানগুলি। “করোনাকালিন সময় উত্তরের জেলা নীলফামারী জেলার কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বর্তমান অবস্থান” নিয়ে খোঁজ করতে গিয়ে একটি চিত্র পাওয়া যায়। নীলফামারী জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের এক হিসেবে দেখা যায়, এ জেলায় এসএসসি ভোকেশনাল ৪১টি, দাখিল ভোকেশনাল ৫টি, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ পাঁচটি এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ ৩১টি রয়েছে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ হতে করোনাকালিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে এই সকল কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কাশ হয়নি। এতে এই খাতেও পিছিয়ে গেছে। অপর দিকে নীলফামারী সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ(টিএসসি) ও নীলফামারী যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (ইউডিটিসি) রয়েছে। ২০২১ সালে জানুয়ারীতে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও তাদের কাস ও সেশন শুরু করা সম্ভব হয় নি। পাশাপাশি পূর্বে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা নিজেদের কোর্স কিভাবে সম্পূর্ণ করবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা। ২০১৬ সালে নীলফামারী জেলা সদরের কুখাপাড়া (দক্ষিণ হাড়োয়া) এলাকায় ৬টি ট্রেডের ও ২টি এসএসসি ভকেশনাল প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষতা উন্নয়নে কার্যক্রম চালু হয় সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র(টিটিসি)তে। পরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয় থেকে নীলফামারী টিটিসিতে ১৭টি বিভিন্ন মেয়াদী শর্টকোর্স ট্রেড ও ৩টি ভাষা শিক্ষণ কোর্স চালু করা হয়। সূত্র মতে, ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দো-ভাষা ও বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ নিয়ে কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের সহযোগীতায় বিদেশে গিয়ে কাজ করছেন ১ হাজার ১৪৮ জন। পাশাপাশি দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছেন ৮৭৭ জন। এ বিষয়ে নীলফামারী সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অধ্যক্ষ মোঃ জিয়াউর রহমান উত্তরবাংলাডটকমের এই প্রতিবেদককে জানান, ২০১৬ সালে থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৩ মাস ও ৬ মাস মেয়াদী ১৭টি ট্রেড ও ৩টি ভাষা শিক্ষণ প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৪ হাজার ৩৯৪ জন। যার মধ্যে প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষা দিয়েছে ২ হাজার ৯৯০ জন। এরমধ্যে নারী ৫৬৩ জন ও পুরুষ ২ হাজার ৪২৭ জন। তিনি জানান, মহামারি করোনার প্রার্দভাবের পূর্বে ২০১৬ সালে নীলফামারী টিটিসির কার্যক্রম শুরু হলেও ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ট্রেডে দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে ৪ হাজার ২৫১ জনকে। এরমধ্যে দেশে ৮৭৭ জনের ও বিদেশে ১ হাজার ১৪৮ কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২১ সালে আমরা ৪৭৩ জনকে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম হয়েছি। শুধুমাত্র ১৫জনকে দেশে ও ১০০ জনকে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা গিয়েছে। তবে করোনার প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক বিমান বন্ধ থাকায় ১০০ জনকে বিদেশে পাঠানো সম্ভব হয়নি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই তাদের বিদেশে পাঠানো হবে। তিনি আরও জানান, করোনায় ফলে দেশে ও বিদেশে যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থান ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সরকারিভাবে প্রতি বছর গড়ে দেশে ২০০ ও বিদেশে ৫০০ জনের মতো যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছিল। সেখানে করোনার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেশে হয়েছে ২০ ও বিদেশে হয়েছে ১০২ জনকে। কর্মক্ষেত্রে বেকাদের যে বৈশিক চাহিদা, আজ তা করোনার কারণে সব থেকে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছে। জাপানে যাওয়ার জন্য চূড়ান্ত তালিকায় থাকা জেলা শহরের গাছবাড়ি এলাকার গোলাম আযম সাজু বলেন, আমি অনার্স শেষ করে অনেক চেষ্টা করেও সরকারি চাকরী পাইনি। টিটিসিতে ছয় মাসের ভাষা প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানে জাপান যাওয়ার তালিকায় রয়েছি। ২০২০ সালে আমি সহ জেলার আরো ৭জনের যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে জাপানে পারি দিতে পারিনি আমরা এখন। জেলা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী এস.এম শফিকুল আলম বলেন, অদক্ষ হয়ে দালালের মাধ্যমে বিদেশে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বেকাররা। টিটিসি একটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। সেখানে প্রশিক্ষণ প্রদান করে দক্ষ জনশক্তি বিদেশে পাঠানো হচ্ছে, জেলার জন্য এটি সুখবর। তবে কেন্দ্রটিতে গতি বাড়াতে পূর্ণ জনবলের দাবি জানাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, যে সকল প্রশিক্ষনার্থী টিটিসিতে ভর্তি হয়েছে করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিজেদের স্বল্পমেয়াদি কোর্সগুলি সম্পূর্ণ করতে পারছে না। এটা কারিগরি শিক্ষাকে পিছিয়ে দিয়েছে ও দিচ্ছে। অপর দিকে কারিগরি শিক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষনে নীলফামারী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের অগ্রগতির সমন্বিত প্রতিবেদনে একটি গজামিলের হিসাব পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে দেখা যায় ১৩ কোর্সের মধ্যে রয়েছে পোষাক তৈরী, মৎস চাষ,কম্পিটার বেসিক, ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউজওয়্যারিং, ইলেকট্রনিক্স, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং, মোবাইল সার্ভিসিং এন্ড রিপেয়ারিং কোর্স, ফ্রিল্যান্সিং, ফ্রিল্যান্সিং রিফ্রেসার্স, বিউটিফিকেশন, আত্মকর্মী থেকে উদ্যোক্তা, সামাজিক জনসচেতনতা বিষয়ক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ এবং গবাদি পশু,হাঁস-মুরগী পালন, প্রাথমিক চিকিৎসা, মৎস্য ও কৃষি চাষ। সেখানে উল্লেখ করা হয়, করোনারকালিন পূর্বে ১৩টি কোর্সে মধ্যে ১২টি কোর্সে মোট প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১০ হাজার ৬২০ জন। কারোনাকালিন সময় প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ১ হাজার ৭৮ জন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য কোর্স- পোষাক তৈরিতে করোনা পূর্বকালিন ১ হাজার ৯৬৫ জন নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। করোনাকালিন ২০২০-২১ অর্থ বছরের জুন মাস পর্যন্ত ১০০ জন নারীকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। যেখানে করোনাকালিন সময় সংক্রমন প্রতিরোধে সকল দপ্তর বন্ধ ছিলো সেখানে এই ১০০ জন নারীকে কিভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। করোনার সময় তারা দুইজন প্রশিক্ষককে দিয়ে ১০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেন। এদিকে কম্পিউটার বেসিকে দেখা যায়, একইভাবে করোনার পূর্বকালিন সময় ২ হাজার ৪৮৫ জনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। করোনাকালিন সময় তারা এই বেসিকে দেখিয়েছে ১৪০ জনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। সেখানে প্রশিক্ষক দেখানো হয়েছে একজনকে। একইভাবে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড হাউসওয়্যারিং কোর্সে কারোনার পূর্বে দেখিয়েছে ৭০৩ জনকে ও করোনার সময় ৫৫ জনকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এগুলির পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিং এন্ড রিপিয়্যারিং কোর্সে কোনো প্রশিক্ষকেই নেই। কিন্তু তারা প্রশিক্ষিত দেখিয়েছে করোনাকালিন পূর্বে ৪০ জন ও করোনাকালিন সময় ৪০ জন। একইভাবে ফ্রিল্যান্সিং কোর্সে করোনাকালিন পূর্বে দেখিয়ে ২০ জনকে ও করোনাকালিন সময় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ৬০ জন। ফ্রিল্যান্সিং রিফেসার্স কোর্সে বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা দেখিয়েছে ৩০ জনের। কিন্তু এই কোর্সটি সম্পন্ন হয়নি। করোনাকালিন এই তিনটি কোর্সে যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে তাদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য ঠিকানা চাইতে গেলে সেটিও তারা দিতে পারেনি। ফলে প্রশিক্ষিতদের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। এই বিষয়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দিলগীর আলমের সাথে কথা বললে তিনি জানান, করোনাকালিন সময় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে স্বপ্লঋণ প্রশিক্ষণ যেমন: পোষক তৈরি, মৎস্য চাষ, কম্পিউটার বেসিক সহ বিভিন্ন ট্রেডের প্রশিক্ষণগুলি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্পূর্ণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। স্বাস্থ্যদপ্তরের নির্দেশনা মেনেই আমরা কিছু প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করি। কয়েকটি ট্রেডে প্রশিক্ষক না থাকার বিষয়ে তিনি জানান, জেলা যুব উন্নয়ন দপ্তরের কয়েকটি কোর্সে যুব মন্ত্রনালয় থেকে প্রশিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। সেই কোর্সগুলিতে প্রশিক্ষণার্থীদের ভর্তির সংখ্যার উপর ভিত্তি করে যুব মন্ত্রনালয়ে বিষয়টি অবগত করলে তারা ঢাকা থেকে প্রশিক্ষক পাঠিয়ে দেন। ফ্রিল্যান্সিং রিফেসার্স কোর্সে প্রশিক্ষনার্থী না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কম্পিউটার বেসিক ও ফ্রিল্যান্সিং কোর্সে ভর্তি হয়ে প্রশিক্ষন নিয়ে প্রশিক্ষণার্থী চলে যায়। তাদেরকে এই কোর্সটির সম্পর্কে অবগতও করা হয়। কিন্তু তাদের আগ্রহ না থাকায় এই কোর্সটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। এই কোর্সটি সহযোগীতায় প্রশিক্ষনার্থীরা আরো দক্ষভাবে ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবে। এই কোর্সে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন, গ্রাফিকস ডিজাইন, গেইম এন্ড এনিমেশন সহ অন্যান্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে যেকোনো দপ্তরে একজন প্রশিক্ষক হিসেবে আবেদন করতে পারবে। তিনি আরো জানান, প্রধানমন্ত্রী ও যুব উন্নয়ন দপ্তরের নিদের্শনায় ২০১৮ সাল থেকে আমরা সামাজিক জনসচেতনতা ও জঙ্গিবাদ,সন্ত্রাসবাদ কোর্স চালু করেছি। এই দুইটি কোর্সে মোট ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যারা জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রামে গ্রামে সপ্তাহে দুইদিন প্রচার ও উঠান বৈঠক করে সাধারণ জনগণকে সচেতন করছে। কারিগরি শিক্ষার্থী এমন এক যুবক। বাড়ি নীলফামারীর কুন্দপুকুর এলাকায়। তার সাথে কথা বলতে গিয়ে তার বাস্তবতার কথাগুলো অনেকটা গল্প বা সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায়। তার কথা গুলো হুবাহু তুলে ধরা হলো-সম্রাট নামটা কে রেখেছিল এখনো জানি না। অনেকবার ভেবেছিলাম আম্মাকে জিজ্ঞেস করব, কিন্তু বাসায় ঢুকলেই মন মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। বাবাতো নেই অনেক কাল ধরে। বাবা পৃথিবী ছাড়ার ৫ বছর হয়েছে। তাই মনে হয়, এই বুঝি মা এসে চাকরির কথা জানতে চাইবে। বাবা হারানোর পর মা আমাকে যথেষ্ট সুযোগ দিয়েছেন নিজের মত করে চলার। তবে নিজের কাছেই নিজেকে অপরাধী লাগে। এখনো একটা চাকরি খুজে পেলাম না; কারিগরি শিক্ষা নিতে গিয়ে পরলাম মহামারী করোনার কবলে। যেখানে যাই টাকা আর অভিজ্ঞতা ছাড়া চাকুরী পাইনা। আমার আশে পাশে অনেক বেকার। বেকার বন্ধুদের সাথে থেকে থেকে এখনো প্রচন্ডভাবে চাকরির অভাবটা অনুভব করতে পারি। কারন বেকার বন্ধুরাও করোনার থাবায় একাকার। বিশেষ করে বাবার রেখে যাওয়া এক খন্ড জমির ফসলের উপর চালাতে হয় বৃদ্ধা মা ও আমার খরচ। ভাগ্যটা এমন খারাপ যে মাকে ছেড়ে বিদেশে যাবো সেটাও সম্ভব না। কারিগরি প্রশিক্ষনটা করতে পারলে হয়তো উত্তরা ইপিজেডে একটা ছোটমতো ইদানীং চাকরিওয়ালা বনে যেতাম। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছা করে অনেক দূরে কোথাও গিয়ে পরে থাকি। কেউ যেন আমাকে খুজে না পায়। বৃদ্ধা মা আমাকে নিয়ে চিন্তা করবে, নানান যায়গায় আমার খোজ করবে। তারপর একদিন ফিরে আসব। আর তখন তিনি চাকরির জন্য আমাকে পেরা দিবে না। তবে চাইলেই সব কিছু মনের মত করে পাওয়া যায় না। আজকাল আমাকে নেশা আর রাজনীতির দিকে টানতে চাচ্ছে অনেকে। সবাই কি মনে করে আমাকে নিয়ে! বেকার বলে পচে গেছি! বন্ধুবান্ধবের সঙ্গ ভালো লাগে বলে না করতে পারি না। তবে রাজনীতির মাঠে এই পিছন পিছন ঘুরে করে ভাইভাই করতে একদম ভালোলাগে না। জ্বী হুজুর ধরনের স্বভাব হলে তো কবেই যেকোন একটা চাকরিতে ঢুকে যেতাম। নেশা কিছুন সব হতাশা ভুলিয়ে দেয় বলে এটাকে মন থেকে না করতে পারি না। এই বন্ধুগুলাও কেমন আজব কিসিমের। দুইটাকা ধার চাইলে সব গুলার গলা শুকিয়ে যায়; কিন্তু গাজা চাইলে মাগনা খাওয়ায়। প্রকৃতপে এদের আমাকে দরকার নেই, এদের দরকার সঙ্গ। আর বেকার মানুষের সঙ্গের চাইতে নেশাখোরদের কাছে আর কি ভালো হতে পারে! চাকরি বাকরির কথা মুখে বললেও, এরা আসলে মন থেকে চায় আমি যেন বেকার ই থাকি। জানিনা মহামারী করোনা থেকে পরিত্রান পেয়ে কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করে শ্রমিকের চাকরীটা কবে পাবো। আমার চাপা এই কান্নার রহস্য কেউ বুঝে না। হয়ত এইসব মোহগ্রস্ত মুহূর্তে সবাই ই ডুবে যেতে চায়। এ বিষয়ে নীলফামারী সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ডাঃ মজিবুল হাসান চৌধুরী শাহিন বলেন, করোনা কারনে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কারিগরি শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার জন্য কারিগরি শিক্ষা খাতে সংস্কার, বিনিয়োগ বাড়ানো ও আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রশিক্ষণের উদ্যোগ অপরিহার্য। মহামারী করোনায় আমাদের কারিগরি শিক্ষাকে বিকল্প চিন্তায় এনে এর গতিধারা চলমান রাখতে হবে। তিনি জানান, আমরা যেটা দেখছি কারিগরি শিক্ষায় সরকার গুরুত্ব দিলেও তা বড় বড় বিল্ডিং নির্মান করে কারিগরি প্রতিষ্ঠান তৈরী করা হচ্ছে। তার পরের ধাপে দেখছি সবি আছে কিন্তু নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। তার ওপর বহু পুরনো সিলেবাস ও প্রচারের অভাবে বহু আসন খালি রেখে শিক্ষাবর্ষ চালিয়ে নিচ্ছে কারিগরি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। দেশের ন্যায় নীলফামারীতেও যে হারে বেকার ও জনসংখ্যা বাড়ছে, তাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও পুনর্গঠন করে কার্যকর ও আকর্ষণীয় কারিগরি শিক্ষা চালুর বিকল্প নেই। অন্যদিকে, লকডাউনের কারণে দীর্ঘদিন বাড়িতে বন্দি থাকার কারণে কারিগরি শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। খাওয়া-দাওয়া করছে না ঠিকভাবে। তার উপর বয়স বাড়ছে,বেকারত্ব নিয়ে ধুকছে যুবক যুবারা। সরকারকে এর বিকল্প ধারা খুঁজে এনে কারিগরি শিক্ষাকে বেগবানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

(উক্ত প্রতিবেদনটি ইউএসএস,নীলফামারী কর্তৃক একটি ফেলোসিপে অংশগ্রহণে প্রকাশিত করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি কপি করে অন্য কোথাও প্রকাশিত করলে সেই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

মন্তব্য করুন


 

Link copied