আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

ঝন্টু নগর পিতা: উত্তরবাংলার বিশ্লেষণ সত্যি হলো

শুক্রবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১২, সকাল ০৯:১৬

বিশ্লেষণ: কে হচ্ছে প্রথম নগর পিতা প্রকাশিত: ০১.১২.১২  মুরাদ মাহমুদ, সিইও, উত্তরবাংলা ডটকম রংপুরে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসীল ঘোষণার পর থেকেই চলছে নানা সমীকরণ। কে হচ্ছে প্রথম নগর-পিতা তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা কল্পনা। দলীয় কোন্দলের কারণে দুর্গ হারানোর আশংকায় দলীয় প্রার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছে জাতীয় পার্টী। যার ফলে এখন চলছে নতুন সমীকরণ। নির্বাচনে ত্রি-মুখী লড়াই হবে বলে ধারণা করছে সাধারণ ভোটাররা। ধারণা করা হচ্ছে মূল লড়াই হবে নাগরিক কমিটির ব্যানারের প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য শরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু, সদ্য-বিলুপ্ত রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র মেয়র আবদুর রউফ মানিক এবং সদ্য সাবেক রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার মধ্যে। আ’লীগ এখন পর্যন্ত দলীয় ভাবে কোন প্রার্থী মনোনয়ন না দিলেও মনোনয়ন সংগ্রহ করে নির্বাচনের প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে সাবেক ছাত্রনেতা ও রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিয়ার রহমান সফি। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নাগরিক কমিটির ব্যানারে আওয়ামী লীগ নেতা শরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টুর পক্ষে কাজ করবে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আ’লীগ নেতা জানান। জাপার ঘরে জ্বলছে আগুন। আর এ সুযোগে উৎফুল্ল ঝন্টুর সমর্থকরা। তাদের মতে নগর পিতা হতে সামনে কোন বাধা মনে করছেন না শরফুদ্দিন আহম্মেদ ঝন্টু। রাঙ্গা মনোনয়ন প্রত্যাহার করায় গঙ্গাচড়ার লক্ষাধিক ভোটের বড় অংশ এখন তার পকেটে। কারণ ঝন্টু এই আসনের সাবেক এমপি ছিল। ঝন্টুর সমর্থকদের দাবী এই ১ লক্ষ ভোটার রংপুর সদরের কোন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন না। যদি তাই হয় তবে ঝন্টু অনেকটাই এগিয়ে যাবেন। এছাড়া সিটি করপোরেশন আন্দোলনে বাস্তবায়ন আন্দোলনে তার মুখ্য ভূমিকা রয়েছে। ঝন্টু ছিলেন সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সভাপতি। সেই সময় তিনি ২০৩ বর্গকিঃমিঃ লংমার্চে সদ্য যুক্ত হওয়া রংপুরের ইউনিয়নগুলোতে সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেকে বিস্তৃত করতে পেরেছিলেন। এদিকে সাবেক পৌর মেয়র আবদুর রউফ মানিক এর সমর্থকরা নিজেদের এগিয়ে থাকার কথা দাবী করেছেন। তাদের দাবী পৌর মেয়র থাকাকালীন মানিকের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অন্য কোন মেয়রের সময় হয়নি। এছাড়া জাপা থেকে বহিষ্কার হলেও জাপার ভোট মানিকের পক্ষেই যাবে বলে তাদের ধারণা। তবে পৌর মেয়র থাকা অবস্থায় তার অনেক কাজেই অখুশি হয়েছে নগরবাসী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক এক ব্যবসায়ী বলেছেন, শ্যামাসুন্দরী খালের বাজেট অনুযায়ী শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়ন হয়নি, তড়িঘড়ি করে ল্যাম্পপোস্ট বসাতে গিয়ে দুর্বল মানের ল্যাম্পপোস্ট বসানো সহ বিভিন্ন অনিয়ম এর অভিযোগ রয়েছে তার দিকে। জাতীয় পার্টী থেকে বহিষ্কৃত, সদ্য সাবেক রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার অবস্থান বেশ শক্তিশালী বলে দাবী করেছে তার সমর্থকরা। তাদের দাবী বার জন প্রার্থীর মধ্যে নগরবাসীর কাছে মোস্তফার গ্রহণযোগ্যতা সব থেকে বেশী। সরে জমিনে গিয়ে তার প্রমাণও পাওয়া গেছে। তৃনমূল ভোটাররা চায় নগর পিতা হোক নীট এন্ড ক্লিন চরিত্রের মোস্তফা। তবে দুই বিত্তশালী প্রার্থীর মাঝে তার আর্থিক সঙ্গতি তাকে পিছিয়ে দিচ্ছে। বিগত নির্বাচনগুলোর পরিসংখ্যানে দেখা গেছে এখানে জামায়াতের ১৩ থেকে ১৫ শতাংশ আর বিএনপির ৭ থেকে ৮ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। অন্যদিকে জাতীয় পার্টির ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ আর আওয়ামী লীগের রয়েছে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ সমর্থন। সে হিসেবে জাপার ভোট দুই ভাগ হলে আর আ’লীগের ভোট ঝন্টু পেলে গেলে বদলে যেতে পারে দৃশ্যপট। এ ক্ষেত্রে গঙ্গাচড়ার ভোট কে ট্রাম-কার্ড করে এগিয়ে যেতে পারে ঝন্টু। তবে জটিল এ সমীকরণের ফলাফলের জন্য ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত যে নগরবাসীকে অপেক্ষায় থাকতে হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

রসিক নিবার্চনঃ যে কারনে এগিয়ে আছেন

ঝন্টু

মাহতাব হোসেনঃ যতই দিন ঘনিয়ে আসছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ততই তোড়জোড় বেড়েই চলেছে প্রার্থীদের। সাধারণ মানুষের ধারণা রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রতিযোগিতা হবে মূলত ৪ জনের মধ্যে। তারা হলেন, এরশাদ সমর্থিত জাপার প্রার্থী মশিউর রহমান রাঙ্গা, জাপার বিদ্রোহী প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, অপর বিদ্রোহী প্রার্থী একে এম আব্দুর রউফ মানিক এবং নাগরিক কমিটির ব্যানারে শরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু। ভোটারদের নিজের করে নিতে সব প্রার্থীরাই চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে।
জাপার দুর্গ হিসেবে পরিচিত রংপুরে জাপার প্রার্থীকেই এগিয়ে রাখবেন সকলেই এটাই স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে মশিউর রহমান রাঙ্গারই এগিয়ে আছে। রাঙ্গা পরিবহণ মালিক সমিতির নেতা হওয়ার ফলে পরিবহণ মালিক ও শ্রমিক সংগঠন এর বেশ কিছু ভোট তার পক্ষে যাবে। এছাড়া তিনি গঙ্গাচড়ার সাবেক সাংসদ হওয়ায় এই এলাকার ভোট তার পক্ষেই যাবে বলে সবার ধারণা। তবে বিভিন্ন সমীকরণে বাস্তব চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। জাপার ভোট ব্যাংকে সরাসরি ভাগ বসাবেন অপর দুই হেভি-ওয়েট প্রার্থী জাপা থেকে নির্বাচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং জাপার সাবেক নেতা ও সদ্য বিলুপ্ত পৌর মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক। রংপুরের তৃনমূল ভোটাররা দ্বিধার মাঝে রয়েছেন ভোট কাকে দেবেন? তৃনমূল পর্যায়ে সর্বাধিক ব্যক্তিগত গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার। তার দাবী জনগণ দলকে নয় ব্যক্তিকেই চায়। এদিকে লালবাগ হাটে আসা কয়েকজন হাটুরের সাথে কথা হলে তারা জানান গরীব মানুষের নেতা মোস্তফা তাই তারা তাকেই ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে এরশাদের দুর্গে তার ব্যক্তিগত ইমেজে যে ফাটল ধরেছে তা সুস্পষ্ট। ধাপ এলাকার বাসিন্দা জোবায়ের জানান, এরশাদ যাকে মনোনয়ন দেবেন শেষ পর্যন্ত তারপক্ষেই ভোট পড়বে। তিনি আরও জানান, নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এরশাদ রংপুরে আসলে রংপুরের জনগণের দ্বিধা দূর হয়ে যাবে। এরশাদই হচ্ছে রংপুরের মানুষের শেষ কথা। অপরদিকে আব্দুর রউফ মানিকের সমর্থকদের দাবী মানিক অতি পরিচিত এবং সফল পৌর মেয়র অতএব মানিকই মেয়র নির্বাচিত হবেন। সমর্থকদের দাবী পৌর মেয়র থাকাকালীন মানিকের আমলে যে উন্নয়ন হয়েছে তা অন্য কোন মেয়রের সময় হয়নি। তবে এ কথা মানতে নারাজ কেরানি পাড়ার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন শ্যামাসুন্দরী খালের বাজেট অনুযায়ী শ্যামাসুন্দরী খালের উন্নয়ন হয়নি, তড়িঘড়ি করে ল্যাম্পপোস্ট বসাতে গিয়ে দুর্বল মানের ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে নগর-জুড়ে, যার অনেক বাতিই এখন নষ্ট। এদিকে স্বতন্ত্র অবস্থানে রয়েছেন শরফুদ্দীন আহমেদ ঝন্টু। তার ধারনা পৌর মেয়র থাকা অবস্থায় রংপুরের ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। এছাড়াও তিনি গঙ্গাচড়ার সাংসদ ছিলেন। বর্তমানে গঙ্গাচড়ার ৩ টি ইউনিয়ন উত্তম, পরশুরাম, হরিদেবপুর ইউনিয়ন অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে ভোটার রয়েছে ১লক্ষ। ঝন্টুর সমর্থকদের দাবী এই ১ লক্ষ ভোটার ঝন্টুকেই ভোট দেবেন কারণ তারা রংপুর সদরের কোন প্রার্থীকেই ভোট দেবেন না। যদি তাই হয় তবে ঝন্টু অনেকটাই এগিয়ে যাবেন। তবে রাঙ্গাও এই আসনের সাংসদ ছিলেন তাই তিনি এখানে ঝন্টুর পথের কাটা হয়ে দাঁড়াবেন। আর একটি দিক দিয়ে ঝন্টু এগিয়ে আছেন, সেটা হলো সিটি করপোরেশন আন্দোলনে কোন নেতাই তার মত মুখ্য ভূমিকা পালন করেন নি। ঝন্টু ছিলেন সিটি করপোরেশন বাস্তবায়ন আন্দোলন কমিটির সভাপতি। সেই সময় তিনি ২০৩ বর্গকিঃমিঃ লংমার্চে সদ্য যুক্ত হওয়া রংপুরের ইউনিয়নগুলোতে সাধারণ মানুষের মাঝে নিজেকে বিস্তৃত করতে পেরেছিলেন। ঝন্টু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনসভা গুলোতে বলেছিলেন এই আন্দোলনের মধ্য যদি বুলেট বর্ষণ করা হয় তাহলে সেই বুলেট সর্বপ্রথম তিনিই বুকে নেবেন। এই ধরনের বক্তব্য তখন সাধারণ জনগণের মাঝে ব্যাপক আলোড়িত হয়েছিল। অপরদিকে ঝন্টু নাগরিক কমিটির ব্যানারে নির্বাচন করলেও তিনিও যেহেতু আওয়ামীলীগ নেতা সেহেতু আওয়ামীলীগের ভোট তিনিই পাবেন। তবে এ কথা সর্বজননভাবে গৃহীত হচ্ছে যে জাপার মধ্যে ঐক্য না আসলে কিংবা একক প্রার্থী না দেয়া হলে সে ক্ষেত্রে জাপার পরাজয়ের সম্ভাবনা থেকে যাবে। আর তাই যদি হয় তবে শেষ হাসিটি ঝন্টুই হাসবেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied