আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

‘সইমু না আর সইমু না, অন্য কথা কইমু না, যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান’

শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪, সকাল ০৯:০৩

এবার একুশ ফিরেছে স্বমহিমায়। স্মৃতি জাগানিয়া এই মাসে তারুণ্যের স্ফুরণে জেগে উঠেছে সারা বাংলাদেশ। এটা ইতিহাসে তারুণ্যের জয়যাত্রার নতুন ফলক। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার প্রত্যয়ে নিশিদিন জাগ্রত তরুণ প্রজন্ম। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি আর তাদের দল জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে গণজাগরণ কর্মসূচি চলছে অবিরাম। সেই আগুন ছড়িয়ে পড়েছে দেশময়, সারা বিশ্বে; যেখানে বাঙালি আছে সেখানেই। নতুন প্রজন্মের এ মুক্তিযুদ্ধে দেশ এবার পৌঁছে যাবে আপন গন্তব্যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়- এ আশা জেগেছে সবার মনে। এ প্রেক্ষাপটে নতুন আঙ্গিক ও মাত্রায় এবার পালিত হবে মহান একুশে।

আজ দেশমাতৃকার প্রয়োজনে আত্মোৎসর্গ করার শপথ নতুন করে নেবে জাতি। একই সঙ্গে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে ভাষাশহীদদের। আজ কোটি কণ্ঠে উচ্চারিত হবে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর লেখা ও শহীদ আলতাফ মাহমুদের সুর করা কালজয়ী গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…।’

ভাষাশহীদদের স্মরণে ‘জাতীয় শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বাংলাদেশ ও সারা বিশ্বে পালিত হবে নানা আনুষ্ঠানিকতায়। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে একুশের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসংলগ্ন একুশের স্মৃতিবিজড়িত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে। এরই সঙ্গে মধ্যরাতে জেগে উঠবে দেশ-বিদেশের সব শহীদ মিনার। বীর ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে ভোরের শিশির মাড়িয়ে নাঙা পায়ে এগিয়ে যাবে অগণিত মানুষ। ফুলে ফুলে ভরে উঠবে সব শহীদ মিনার।

বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার আন্দোলনে সৃষ্টি হয়েছিল একুশে ফেব্রুয়ারির রক্তাক্ত অধ্যায়। শুরুটা ১৯৪৮ সালে। সে বছর ২১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অনুষ্ঠিত সমাবর্তনে পাকিস্তানের তদানীন্তন গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দম্ভভরে উচ্চারণ করেন, ‘উর্দু, কেবল উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা।’ এ ঘোষণা উপস্থিত ছাত্রদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। তাঁরা প্রকাশ্যে এ ঘোষণার প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদে ফেটে পড়ে বাংলার মানুষ। সে বছরই গঠিত হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। শুরু হয় মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য বাঙালির প্রাণপণ সংগ্রাম। বায়ান্ন সালে আন্দোলন তীব্রতর হয়ে উঠলে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আন্দোলন কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল-মিটিং, সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ছাত্র আন্দোলন তখন তীব্র হয়ে ওঠে। ১৪৪ ধারা ভাঙা উচিত হবে কি না, এ নিয়ে ছাত্রনেতাদের মধ্যে সাময়িক মতপার্থক্যের সৃষ্টি হলেও সাধারণ ছাত্ররা আন্দোলনের দাবিতে অনড় থাকেন।

দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলার সভা থেকে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তখন মিছিল বের হয় ১০ জন, ১০ জন করে। এই শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। গুলিবর্ষণ করে পুলিশ; নিহত হন আবুল বরকত, রফিকউদ্দিন আহমদ ও আবদুল জব্বার। পরদিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন সফিউর রহমান, রিকশাচালক আবদুল আউয়াল, অহিউল্লাহ এবং কয়েকজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। একুশে ফেব্রুয়ারিতে আহত আবদুস সালাম মারা যান পরে, ৭ এপ্রিলে। রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের কাছে নতিস্বীকার করে পাকিস্তান সরকার। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট সরকার ক্ষমতায় এলে একুশে ফেব্রুয়ারিকে শোক দিবস হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনের রীতি চালু হয়।

একুশের ঘটনার এক দিন পর গড়ে ওঠে শহীদ মিনার। একুশের পথ ধরে শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের সংগ্রাম। জন্ম নেয় স্বাধীন রাষ্ট্র। একুশে পালিত হয় বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের, চেতনা বিকাশের অনন্য দিন হিসেবে। এ দিনটিই বাঙালিকে নতুন করে বেঁধেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বন্ধনে।

জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা ইউনেসকো ১৯৯৯ সালে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করে। এর পর থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনা এখন জেনে গেছে সারা বিশ্ব।

জাতীয় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণী দিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা।

আজ সরকারি ছুটির দিন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। এ উপলক্ষে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা একুশের প্রথম প্রহরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাবলয়।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উদ্‌যাপন করবে।

মন্তব্য করুন


 

Link copied