আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

 width=
 
শিরোনাম: কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর      

 width=
 

যে মেয়েরা বাধ্য হয়ে এ পথে আসে

বৃহস্পতিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১২, রাত ১২:২৮

মাহতাব হোসেন, সিনিয়র সাব-এডিটর,

আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত আগ্রহসহকারে শুনলাম, মোটেও বিস্মিত হইনি। গতকাল সে কোন এক রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল তার শরীরের খুব কাছ দিয়ে একটি সুদর্শনা মেয়ে হেটে যাচ্ছিলো, মেয়েটি যথেষ্ট স্মার্ট, মার্জিত এবং চেহারায় মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা মাঝারি গোছের মেয়েই মনে হচ্ছিলো। আমার সেই বন্ধুটি মেয়েটির আচরণে কিছুটা অবাক হচ্ছিলো আবার এটাও ভাবছিল যে তার মনের ভুল। কিন্তু শেষমেশ সে এই বিষয়ে পরিষ্কার হলো যে মেয়েটা তার সাথে তাল রেখে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছিলো কিন্তু সাথে সে এটাও ধরে নিলো যে মেয়েটি হয়তো তার গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছার জন্য তার সাথে তাল রেখে হেঁটে যাচ্ছিলো। যেহেতু সময়টা সন্ধ্যা সেহেতু এটা কোন কোন মেয়ের ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক হতে পারে। যাহোক পথের তুলনামূলক কিছুটা নির্জন এলাকায় আমার ওই বন্ধুটিকে মেয়েটি থামায় এবং তাকে সরাসরি সেক্সের প্রস্তাব দেয় এবং একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে। আমার বন্ধুটি এবার সত্যিই বিস্মিত হয়। হয়তো বিস্মিত হওয়ার যথেষ্ট কারণও তার কাছে ছিল। তার বর্ণনা অনুযায়ী সেই মেয়েটির সাথে তার পেশাদারিত্ব মোটেও মানানসই নয়। তার সাথে কথা বলার জন্য আমার বন্ধুটি তাকে একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে বসায়। চা খেতে খেতে মেয়েটির সাথে কথা বলছিলো সে। মেয়েটির কাছ থেকে সে যা তথ্য উদ্ধার করে তা হচ্ছে মেয়েটি এই লাইনে প্রায় একবছর হলো এসেছে। তার সাঁজ এবং মুখের কমনীয়তায় কখনো তাকে এই লাইনের মেয়ে হিসেবে ইঙ্গিত করে না। তবে মেয়েটির পরিবার তার এই পেশা জানে না। পরিবার জানে তাদের মেয়ে বড় শহরের এক হাসপাতালে ভালো চাকুরি করে, ভালো বেতন পায় এবং বেতনের সিংহভাগ বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

মেয়েটি যখন নতুন শহরে এসেছিলো তখন ভুল পথ দিয়ে ভুল মানুষের হাত ধরে এসেছিলো। আমার বন্ধু তার মহানুভবতার পরিচয় দিয়ে তাকে এই পথ থেকে সরে আসতে বলে। মেয়েটি প্রতি উত্তরে জানায় যদি কেউ তার পরিবার চালানো, ছোটবোন, ভাইয়ের পড়ালেখার এবং বিয়ের দায়িত্ব নেয় তাহলে সে এই পথ থেকে সরে আসতে পারে। প্রসঙ্গত: মেয়েটির বাবা অসুস্থ এবং কর্ম অক্ষম। আমার বন্ধুটি এই কথা শোনার পর তার ওয়ালেটে থাকা ২হাজার টাকা থেকে সতের'শ টাকা মেয়েটিকে দেয় এবং মেয়েটির মুঠোফোন নাম্বার নেয় এবং নিজেরটাও দেয়। এরপর থেকে সে সেই মেয়ের জন্য কি করা যায় তা নিয়ে দিনরাত মনের মধ্যে ঘনমেঘ জমিয়ে চিন্তা ভাবনা শুরু করেছে।

উপরের আংশিক ঘটনা হয়তো অনেকেই শুনেছেন। আমিও আমার এক ছোটভাইয়ের এক লেখায় পড়েছিলাম ঠিক একই রকম ঘটনা। একটি উপন্যাসেও পড়েছিলাম কলকাতায় গিয়ে মেয়ে বাধ্য হয়ে বৃদ্ধ বাবা মা কে টাকা পাঠাত। এই রকম ঘটনা কিংবা গল্প অনেকেই শুনেছেন কিংবা দেখেছেন। এর আগে আমি একবার দৌলতদিয়া যৌন-পল্লী নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলাম, যেখানে উল্লেখ করা হয়েছিলো যে অনেক মেয়েকে এইসব পল্লীতে বিভিন্ন ভাবে ফুঁসলিয়ে এনে বিক্রি করে দেয়া হয়। এখান থেকে খুব কমসংখ্যক মেয়ে উদ্ধার পায়। আর যারা উদ্ধার পায় তারা আর তাদের সেই সমাজে, তার পরিবারে ফিরে যেতে পারে না। এইসব পথে অনেক মেয়েই বিভিন্ন কারণেই আসে, বাধ্য হয়েই আসে। কেউ ছোটবেলায় নিশ্চয় এমন স্বপ্ন দেখে না যে সে বড় হয়ে ..... হবে। তাই অনেকেই কিংবা অধিকাংশই বাধ্য হয়েই এই পথে আসে। এদের জন্য আমাদের করণীয় কি? হয়তো এদের জন্য, এইসব মেয়েদের জন্য আমার বাম বুকে সামান্য কিংবা অসামান্য কষ্ট অনুভূত হবে। তবে এই সমাজে এদের জন্য অনেকেরই করণীয় রয়েছে অথবা কিছু করার ক্ষমতা রয়েছে । আমার বন্ধুটির মনখারাপ কিংবা তার মেয়েটির জন্য কিছু একটা করার তাগিদ আমাকেও দারুণ ভাবে আহত করেছে। আমি পারিনি কিন্তু এই লেখা তাদের জন্যই যারা এই ভুল পথে চলে এসেছে তাদের আবার নতুন করে পথ দেখাতে পারবে, নতুন পৃথিবীর আলো বাতাস তাদের নিকট পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করবে। কেউ নিশ্চয় স্কুল জীবনের Aim in Life বা আমার জীবনের লক্ষ্য রচনায় লিখে না বড় হয়ে আমি একজন পতিতা হবো। জীবনে ছোট খাট কিংবা যে কোন ধরনের একটা ধাক্কা তাকে এই পথে আসতে বাধ্য করে। অনেকেই বলেন ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়। হয়তো কথাটা সত্য কিন্তু তাকে ফেরানোটা যে কষ্টসাধ্য। হয়তো চরম গ্লানি কিংবা গার্মেন্টসের বেতন আর প্রয়োজনীয়তার সমন্বয়তার অভাব তাকে এই পথে রেখে দেয়। এই লাইনের প্রতিটি মেয়েই হয়তো জীবনের প্রথম পাটি ভুল জায়গা রাখে। এর পর দ্বিতীয় পা চলে আসে। তবে এর মধ্যে একটা শ্রেণি একেবারেই নিরুপায় হয়ে এই পথে চলে আসে। একেবারে বাধ্য হয়ে এই পথে চলে আসে। আমার বন্ধুর একটি বাস্তব ঘটনার উদাহরণ আমাকে ব্যাপারটি নিয়ে অনেক ভাবিয়েছে। হোটেল কিংবা পথে ঘাটে দেখা এইসব সোনামুখদের হয়তো দুঃখ আছে, কষ্ট আছে, বুকে চাঁপা কথা আছে। আছে অনুভূতি, আছে গ্লানি। শুধু হয়তো স্বপ্ন নেই। হয়তো অর্থের জন্য, নিজের পরিবারের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার জন্য, অথবা একটু সাময়িক ভালো জীবন যাপনের জন্য নিজেদের 'স্বপ্ন' বিসর্জন দেয়। আমার চোখে এটাও কম বড় আত্মত্যাগ নয়। উপরের ছবিতে চমৎকার একটি মেয়ের ছবি দেখেছেন। ছবিটি আলাদা ভাবে দেখলে বোঝার উপায় নেই যে ছবিটি দৌলতদিয়া যৌন-পল্লী থেকে নেয়া। সমাজচ্যুত এইসব মেয়েদের বিরুদ্ধে বলার লোকের অভাব হয় না। অভাব হয় তাদের কথা চিন্তা করার। তাদের পুনর্বাসন করার মত লোকদের। ঢাকা কিংবা বড় নগরীতে এই পেশার মেয়েরা মানুষকে ইমোশনালই ব্ল্যাক-মেইল করে অনেক অর্থ আদায় করে নয়।

ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে খদ্দের ডেকে নিয়ে তারা সর্বস্ব কেড়ে নেয়। তখন আমরা এইসব পতিতাদের বিরুদ্ধে গালিগালাজ সহকারে সোচ্চার হয়ে উঠি। এটা চিন্তা করি না যে ওই লোকটি কেন পতিতাটির কাছে গিয়েছিল? আমার এই লেখার মুল উদ্দেশ্য যারা পেশাদারের পর্যায়ে যায় নি , একান্ত বাধ্য হয়ে কিছু কিছু মেয়ে এই পথে গিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনে সরকারি বেসরকারি সংস্থা, এনজিওগুলোর কাজ করা উচিত্‍।

মন্তব্য করুন


 

Link copied