আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

০৭ মে, “লাহিড়ীরহাট গণহত্যা” দিবস

বুধবার, ৭ মে ২০১৪, দুপুর ১০:৪০

রিয়াদ আনোয়ার শুভ, বিশেষ প্রতিনিধি:

[caption id="attachment_28768" align="alignleft" width="447"] ফাইল ছবি[/caption]

“জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের নির্বিচারে হত্যা করলো পাক হানাদার বাহিনী”

০৭ মে, রংপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক বেদনা বিধুর দিন, “লাহিড়ীরহাট গণহত্যা” দিবস। ১৯৭১ এর এই দিনে রংপুর শহরতলীর লাহিড়ীরহাটে এক বর্বর হত্যাকাণ্ড চালায় পাক হানাদার বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস সারাদেশের মতো রংপুরেও পাকিস্তানি হানাদাররা তাদের এ দেশীয় দোসর আলবদর, রাজাকারদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় নির্বিচারে হত্যা করেছে নিরীহ সাধারণ মানুষকে। রংপুর জেলার চিহ্নিত গণহত্যার স্থানগুলোতে নিরীহ মানুষকে ধরে এনে হত্যা করা হতো। তেমনই একটি বর্বর গণহত্যা চালানো হয় লাহিড়ীরহাট এলাকায় যা রংপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে “লাহিড়ীরহাট গণহত্যা” নামে পরিচিত। জুম্মার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিদের নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকের দল। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি লাহিড়ীরহাট গণহত্যার শিকার সেই সব বীর শহীদদের। লাহিড়ীরহাট গণহত্যা : ১৯৭১ সালের ৭ মে রংপুরবাসী প্রত্যক্ষ করলো ধর্মের রক্ষক দাবীদার ধর্মরাষ্ট্র পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর এক পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ। দিনটি ছিল শুক্রবার। সময় আনুমানিক দুপুর দুইটা। মাত্রই জুম্মার নামাজ শেষ হয়েছে রংপুর শহর থেকে সামান্য কয়েক কিমি দূরে লাহিড়ীরহাট (স্থানীয়ভাবে বলা হয় নারীরহাট) মসজিদে। এমন সময় মসজিদের সামনে এসে দাঁড়ালো পাক হানাদার বাহিনীর ৪টি ট্রাক। সারা বাংলায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সদস্যরা তখন বাঙালি হত্যায় মরিয়া হয়ে নেমে পড়েছে। তাই পাক বাহিনীর ট্রাক দেখেই মসজিদ থেকে বের হওয়া মুসল্লিরা প্রাণভয়ে ছুটতে থাকলেন যে যে পাশে পারেন। কিন্তু রক্তের হোলি খেলায় মত্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধরে ফেললো ৩২ জন নিরীহ মুসল্লিকে। হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে এলোপাথাড়ি মারধোর করতে করতে মুসল্লিদের নিয়ে যাওয়া হয় লাহিড়ীরহাট পুকুরপাড়ে। দাঁড় করিয়ে দেয়া হয় সারিবদ্ধভাবে। মুহূর্তেই গর্জে উঠলো হানাদারদের অস্ত্র। গুলি করে হত্যা করা হলো সকল মুসল্লিকেই। নিজেদের মুসলমান হিসেবে দাবি করা পাকিস্তানি হানাদারদের এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর পুরো এলাকা জনমানবশূন্য হয়ে যায়। প্রাণভয়ে পালিয়ে যায় এলাকাবাসী। ৩২ জন মুসল্লির লাশ পড়ে থাকে লাহিড়ীরহাট বধ্যভূমিতে। সেদিন লাশ দাফন করার মতো এলাকায় ছিল না কোনো মানুষ। মুসল্লিদের লাশের পাশে বসে কোরান তেলাওয়াত করেনি কেউ । কাফন পরানো হয়নি সেই শহীদদের। সেদিনের সেই বর্বরতায় শহীদদের সকলের পরিচয় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। স্বাধীনতার পরে তেমন কোন উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়নি। তাই আজ ৪২ বছর পরেও জানা সম্ভব হয়নি সেই সকল শহীদদের অনেকেরই পরিচয়। রংপুরের মুক্তিযোদ্ধারা তৃণমূল পর্যায়ে খোঁজখবর নিয়ে যাদের পরিচয় পেয়েছেন তারা হলেন - ১) আবেদ আলী সরকারের পুত্র মনোয়ার হোসেন বেণু (রংপুরের শহরের রাধাবল্লভ) ২) শমসের আলী পেয়াদার পুত্র নওয়াব আলী বাপাত (সাতগাড়া মিস্ত্রীপাড়া) ৩) আব্দুল মজিদের পুত্র আব্দুল করিম (পীরজাবাদ) ৪) শমসের আলী পানাতির পুত্র আজগর আলী (দামোদরপুর) ৫)আমীর উল্লাহ শাহের পুত্র শাহ্‌ সেকেন্দার আলী (দামোদরপুর) ৬) সেকেন্দার আলীর পুত্র মিন্টু মিয়া (দামোদরপুর) ৭) নয়া মিয়া প্রেসিডেন্টের পুত্র শাহ্‌ মোঃ নূরল আনাম (দামোদরপুর) ৮) খোদাবকস্ মৌলভীর পুত্র মোঃ আজহার আলী (দামোদরপুর) ৯) মোঃ আমিন-এর পুত্র মোঃ আজগর আলী (দেওডোবা বড়বাড়ি) ১০) মহির উদ্দিনের পুত্র মোঃ মনসুর আলী (দেওডোবা বড়বাড়ি) ১১) খট্টু শেখের পুত্র মোঃ আব্দুল জব্বার মিয়া (দেওডোবা বড়বাড়ি) ১২) নছির উদ্দিনের পুত্র আব্দুস সাত্তার (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ১৩) বাতাসু মিয়ার পুত্র মোঃ মোফাজ্জল হোসেন (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ১৪) আব্দুল মুকিতের পুত্র মোঃ নবানু মিয়া (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ১৫) মোঃ কান্দুরা মিয়ার পুত্র মোঃ আব্দুল আজিজ (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ১৬) খোকা মামুদের পুত্র মোঃ এসরাতউল্লাহ (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ১৭) মোঃ আব্দুল গফুরের পুত্র মোঃ নূরুল ইসলাম (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ১৮) করিম উদ্দিন মুন্সীর পুত্র মোঃ আব্দুস সোবহান (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ১৯) মোঃ আলিম উদ্দিনের পুত্র মোঃ ইয়াসিন আলী (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ২০) মোঃ আলিম উদ্দিনের পুত্র মোঃ সোলায়মান মিয়া (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ২১) হাছেন আলীর পুত্র মোঃ আব্দুর রাজ্জাক (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ২২) মিয়াজন মিয়ার পুত্র মোঃ মনসুর আলী (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ২৩) শহর উদ্দিনের পুত্র মোঃ লুৎফর রহমান (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি) ২৪) আব্দুল জব্বারের পুত্র আব্দুর রহিম (ন্যাকাড়টারী বড়বাড়ি)। অন্য শহীদের পরিচয় সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। লাহিড়ীরহাট বধ্যভূমি : লাহিড়ীর হাট বধ্যভূমি রংপুরের প্রধান বধ্যভূমিগুলোর মধ্যে অন্যতম। রংপুর শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার পশ্চিমে রংপুর-বদরগঞ্জ সড়কের পাশে লাহিড়ীরহাট বধ্যভূমির অবস্থান। এই বধ্যভূমিতে শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের মতোই চরম অবহেলায় এখনও দখলদারদের দখলে রয়েছে এ বধ্যভূমি। স্বাধীনতার দীর্ঘদিন পরেও মূল বধ্যভূমির জমি অধিগ্রহণ করা হয়নি। সামান্য একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়েছে লাহিড়ীর হাট-শ্যামপুর রোডের পাশে একটি অংশে। এ ছাড়া কোনো কিছুরই চিহ্ন নেই সেখানে। স্থানীয়দের দাবি মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশের মানুষের ওপর যে গণহত্যা হয়েছে তার স্মারক বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা গেলে নতুন প্রজন্ম সেই সময়কে মনে রাখবে, শ্রদ্ধা জানাতে পারবে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে ধরে রাখতেই আগামী প্রজন্মের জন্য এই সব বধ্যভূমি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। রংপুরের গণমানুষের দাবী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও শত শহীদের আত্মবলিদানের যে স্মৃতিগুলো এখনও অবশিষ্ট রয়েছে সেই সব সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। জেলার প্রতিটি বধ্যভূমিতে একটি করে কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হোক। সরকারীভাবে এখনই উদ্যোগ না নেয়া হলে হয়তো আগামী প্রজন্ম জানতেই পারবে না এখানে কেমন পৈশাচিকতার শিকার হয়েছিলেন তাদের পূর্বসূরি নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ।

মন্তব্য করুন


 

Link copied