
জানা গেছে, মঙ্গলবার সেনা সদর দপ্তর ও নৌ-বাহিনী সদর দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হয় বলেও দুই বাহিনী সূত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে। তবে র্যাবের সহাকারী পরিচালক (মিডিয়া) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাদিরা খাতুন জানান, এ ধরনের কোনো দাপ্তরিক নির্দেশ এখনও আমরা পাইনি। মিডিয়াতেই আমরা শুনেছি।
অবসরে যাওয়া অপর দুই কর্মকর্তা হলেন আরিফ হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ ক্যাম্পের সাবেক প্রধান লে. কমান্ডার এমএম রানা। অবসরের পর তারা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন বলেও জানা গেছে। চাকরিচ্যুত তারেক সাঈদকে ঘটনার পর র্যাব-১১ অধিনায়কের পদ থেকে সরিয়ে সেনাবাহিনীতে ফিরিয়ে আনা হয়।
তিন কর্মকর্তার মধ্যে সেনাবাহিনীর দুজনকে অকালীন এবং নৌবাহিনীর একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। সেনা কর্মকর্তারা আপাতত নিজ বাসায়ই থাকতে পারবেন। তবে দোষী প্রমাণিত হলে সব অভিযুক্তকে ফৌজদারি আদালতের মুখোমুখি হতে হবে।
২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। এর তিন দিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যায় তাদের লাশ ভেসে ওঠে। এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে মামলা করে নজরুলের পরিবার।
গত রবিবার নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ছয় কোটি টাকার বিনিময়ে র্যাবের তিন কর্মকর্তা ওই সাতজনকে অপহরণ ও খুন করেছেন।
এ অভিযোগ সম্পর্কে তারেক সাঈদ সাংবাদকিদের বলেছেন, সব বাহিনীর লোক মিলে এক সঙ্গে ঘুষ নেয়া বাস্তবসম্মত নয়। তা ছাড়া ছয় কোটি টাকা অনেক টাকা। এতগুলো টাকা নিতে পিকআপ লাগার কথা। প্রশ্ন হলো, এত টাকা নিয়ে আমি কী করলাম। সে টাকা তো আমার কাছে থাকতে হবে। আমার মনে হয়, কাউকে বাঁচানোর জন্য এসব কথা বলা হচ্ছে। এসব কথাবার্তা তদন্তকে জটিল করে তুলবে।
সশস্ত্র বাহিনীর একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জের ঘটনার পর তিন কর্মকর্তাকে গত ২৮ এপ্রিল স্ব স্ব বাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশ দেয়া হয়। মঙ্গলবার তিন কর্মকর্তাকে অবসরে পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।ইতোমধ্যে এ ঘটনার সার্বিক তদন্তে সাত সদস্যের কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইভাবে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি ওই ঘটনায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) দিয়ে মামলা তদন্ত করতেও নির্দেশ দেন আদালত। র্যাবের সাবেক বা বর্তমান কোনো সদস্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করতে র্যাবের মহাপরিচালককেও (ডিজি) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ছয় কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের ঘটনায় র্যাব সদস্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করতে র্যাবের পক্ষ থেকেও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চার সদস্যের কমিটির প্রধান হলেন র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক আফতাব উদ্দিন আহমেদ।