আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

নারায়নগঞ্জ ট্রাজেডী- ঐতিহাসিক অশনী সংকেত!

মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০১৪, দুপুর ১২:১৩

গোলাম মওলা রনি

[caption id="attachment_17656" align="alignleft" width="300"] লেখক: সাবেক সাংসদ[/caption]

তার সঙ্গে আমার কোন পরিচয় ছিলোনা ইতিপূর্বে। সেদিনই প্রথম দেখা হলো। আমি তখন মোনাজাত করছিলাম। নারায়নগঞ্জের এমপি নজরুল ইসলাম বাবুর ছেলের জন্মদিনের অনুষ্ঠান ছিলো সেদিন। জাতীয় সংসদের মেম্বারস ক্লাব প্রাঙ্গনে বিরাট আয়োজন। হাজার দশেক লোকের ভুরিভোজের আগে ছেলের জন্য মোনাজাত করার সময় উপস্থিত হলে আমার বন্ধু বাবু এমপি বললেন- হুজুর লাগবে না- রনি করুক। আমি আল্লাহর দরবারে হাত তুলে বন্ধু পুত্রের জন্য অন্তর থেকে দোয়া করছিলাম। মঞ্চে তখন শ’খানেক লোক আর সামনে হাজার পাঁচেক। পিছন থেকে কে যেনো বলে উঠলো বাহঃ ভারী সুন্দর তো-চালিয়ে যান-উইকেট পড়বেনা। মোনাজাত শেষে ডানদিকে তাকিয়ে দেখি শামীম ওসমান। তিনি এগিয়ে এলেন এবং করমর্দন করলেন। এরপর আমাদের বহুবার কথা হয়েছে এবং বহু প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আজ আর সেই প্রসঙ্গে যাবো না-আজ বলবো অন্য কথা।

নারায়নগঞ্জের সঙ্গে আমার আত্মীয়তা, ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বহু দিনের। আমার চাচাত ভাই বিয়ে করেছেন সেখানকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী পরিবারে। সেই সুবাদে ঐ শহরের প্রায় সকল বড় ব্যবসায়ীকেই চিনি বা চিনতাম। রাজনৈতিক লোকদের চিনতে শুরু করেছি এমপি হবার পর। জেলার সকল এমপির সঙ্গেই আমার ছিলো দহরম মহরম। এর বাইরে বিএনপির নেতাদেরকে চিনি নানা কারনে। এ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার এবং আমি গত ১০ বছর যাবৎ একই বিল্ডিংয়ে অফিস করি। আওয়ামীলীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর নারায়নগঞ্জের ডিসি হন সামসুর রহমান যিনি আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষ। এরপর হলেন- মনোজ বাবু। খুবই ভালো সম্পর্ক ছিলো আমাদের মধ্যে বিশেষ করে তার মেয়ের কারনে। আমার মেয়ে নন্দিতা এবং মনোজ বাবুর মেয়ে মন্দিরা একই ক্লাশে পড়ে ভিকারুননিসায়। আর এমপি নুরুলকে চিনি সেই ১৯৮৮ সাল থেকে। নুরুল এবং আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ.এফ. রহমান হলে একসঙ্গে থাকতাম ছাত্রজীবনে। এতো কথাবার্তা বা গাল গল্পের একটাই অর্থ- নারায়নগঞ্জ সম্পর্কে আমার অভিজ্ঞতা অন্যসব কলাম লিখকগনের মতো নয়-হয়তো একটু ভিন্ন প্রকৃতির কিংবা ভিন্ন মাত্রার! সাম্প্রতিক কালে নারায়নগঞ্জের ৭টি চাঞ্চল্যকর গুম এবং পরবর্তীতে গুমকৃত লোকদের গলিত লাশ শীতলক্ষা নদীতে ভেসে ওঠার পুর্বে এবং পরে সকল মানুষের সন্দেহের তীর ছিলো শামীম ওসমানের দিকে। মানুষজন সন্দেহ করছিলো এবং তাকে সহ তার পরিবারের প্রতি দিবানিশি গালাগাল বর্ষন করছিলো। শামীম ওসমান শত চেষ্টা করেও মানুষের মনে কোন স্থান পাচ্ছিলেন না। তার বডি লেঙ্গুয়েজ, আচরন এবং উল্টা পাল্টা কথাবার্তা শুনে মানুষের সন্দেহ আরো ঘনিভুত হয়। অতীত থেকে আজ অবধি শামীম ওসমান এবং তার পরিবারের প্রতি স্থানীয় জনগন তো বটেই সারা দেশবাসী বিক্ষুব্দ। মুলতঃ বিরুপ প্রচার প্রপাগান্ডা, দলীয় হাই কমান্ডের একেক সময় একেক নীতি কখনো দ্বিমুখী আবার কখনো ত্রিমুখী নীতি এবং শামীম ওসমানের চোপা এবং হাত ঝোলানোর অভ্যাসের কারনে তার ইমেজের বারোটা বেজেছে। আর বাকী ইমেজ নষ্ট হয়েছে তার কর্মকান্ডের জন্য। বাংলাদেশে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকী সব সময়ই নারায়নগঞ্জের ওসমান পরিবারের অন্ধ ভক্ত ছিলেন। সেই বঙ্গবীরই লিখলেন-এবার নারায়নগঞ্জ গিয়ে সদ্য প্রয়াত জাতীয় পার্টির এমপি নাসিম ওসমান সম্পর্কে একটি শব্দ উচ্চারন করতে সাহস পেলাম না জনরোষের ভয়ে! শামীম ওসমান যখন দেখলেন-জনমত এবং জনরোষ দিনকে দিন তার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে এবং তাতে ঘি ঢালছেন তারই চিরশত্র“ মেয়র আইভি তখনই দুঃসাহসী কাজটি করে ফেললেন। নিহত ব্যক্তির শ্বশুরকে দিয়ে বোমাটি ফাটালেন কিন্তু তার আগে নিজের জীবন হুমকীর মুখে এই মর্মে থানায় জিডি করলেন। দেশবাসী নতুন করে ঠাট্রা মসকরা শুরু করলো- তারা বললো- যমের আবার মৃত্যু ভয়! নারায়নগঞ্জে শামীম ওসমানের জীবন হুমকীর মুখে! দাঁড়াও প্রান খুলে হেসে নেই- হা হা হা- হু হু হু- উ হু হু! লোকজন যখন ঠাট্রা মসকরা করছিলো তখন আমার কেনো যেনো মনে হয়েছিলো শামীম ওসমানের জিডি করার পেছনে গুরুত্বপূর্ন কারন রয়েছে। কেননা অতীতে আমি যতবারই তার সঙ্গে কথা বলেছি তাতে কোনবারই তাকে আমার বোকা মানুষ বলে মনে হয়নি। মানুষ নাকি বেশী লম্বা এবং মোটা তাজা হলে স্বভাবগত ভাবেই বে আক্কেল হিসেবে পয়দা হয়। সেক্ষেত্রে শামীম ওসমান সম্পূর্ন ব্যতিক্রম এবং ব্যতিক্রম তার ভাইয়েরাও! কাজেই শামীম ওসমান যখন জিডি করলেন তখন আমি ধরে নিলাম- তিনি শক্ত কিছু একটা করতে যাচ্ছেন। তিনি সেটা করলেনও। বোমা ফাটালেন ব্যাবের বিরুদ্ধে। র‌্যাবের তিনজন কর্তা, একজন মন্ত্রীর পুত্র এবং বঙ্গবন্ধুর আত্মীয় এক প্রভাবশালী এমপির ছেলেকে জড়িয়ে অভিযোগ উত্থাপন করলেন-৬ কোটি টাকা ঘুষ গ্রহনের মাধ্যমে র‌্যাব এই নিমর্ম হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। র‌্যাবের কর্তা ব্যক্তিরা কোন ব্যাংক একাউন্ট থেকে টাকা লেনদেন করেছেন এই তথ্যও ফাঁস করে দেন খুন হওয়া প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদ চেয়ারম্যান। প্রথমে সবাই ধারনা করলো শহীদ চেয়ারম্যান হয়তো শামীম ওসমানের বিরুদ্ধ লোক। কিন্তু অচিরেই সবাই টের পেলেন যে শামীম ওসমানের ভরসা, আশ্রয় এবং প্রশ্রয়ে নিহতের পরিবার র‌্যাবের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পেরেছে। রাতারাতি দৃশ্যপট উল্টে গেলো। সারাদেশের মানুষ র‌্যাবের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগলো। সব শ্রেনী পেশার মানুষ ধিক্কার জানাতে আরম্ভ করলো এবং এই প্রথমবারের মতো সুশীল সমাজ মানব বন্ধনের জন্য রাস্তায় নেমে এলো। ক্ষমতাসীন দল প্রমাদ গুনলো। র‌্যাবের অভিযুক্ত কর্মকর্তাসহ অনেককে প্রথমে বদলী এবং পরে ৩ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো। ক্ষমতাসীন দল পুলিশ ও বেসামরিক প্রশাসনেও ব্যাপক রদবদল করলো। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হলো না। বরং জনরোষ বাড়ছে দিনকে দিন। মানুষ সরকারী দলকে বিশ্বাস ও আস্থায় আনতে পারছেনা। নানা রকম সন্দেহ, অমুলক কথাবার্তা এবং গুজবে প্রতিদিন বাংলাদেশের আকাশ বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে- নারায়নগঞ্জের নিহত হওয়া ৭ হতভাগ্য ব্যক্তির মৃত্যুকালীন আর্ত চিৎকার এবং তাদের রক্ত জমিনে জিবরাইল এবং আজরাইলের কান্না হিসেবে বাংলার ঐতিহাসিক অশনি সংকেত রুপে আর্বিভূত হয়েছে। অনেকে বলছেন এমনটিতো হবার কথা ছিলো না। আমি বলছি- এমনটিই হবার কথা এবং আমরা যদি সতর্ক না হই এবং তওবা করে সঠিক পথে ফিরে না আসি তবে আগামী দিনে পরিস্থিতি হবে আরো ভয়াবহ। প্রথমে নারায়নগঞ্জ ক্ষমতাসীন দলের ভ্রান্ত রাজনীতি নিয়ে কিছু কথা বলে নেই। তারপর বলি বর্তমান সমস্যার কারন-করনীয় এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে। ১৯৯৬ সালের আওয়ামীলীগ শাসনামলে শামীম ওসমান বিভিন্ন কারনে বিতর্কিত এবং কুখ্যাত ব্যক্তিতে পরিনত হন। বিএনপির পুরাটা শাসনামল এবং পরবর্তী ১/১১ র আমলে তিনি ছিলেন ভারতে। তার কথা বার্তা শুনলে মনে হয়- দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক ছিলো এবং আছে। ইতিপূর্বে তিনি নারায়নগঞ্জসহ ঢাকা শহরের পেশী শক্তির রাজনীতির একজন বাহক ছিলেন-এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ২০০৯ সালের সরকারে তিনি কিছুই ছিলেন না বরং পদে পদে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হচ্ছিলেন। এনিয়ে তার ব্যক্তিগত হতাসা এবং ক্ষোভের অন্ত ছিল না। তিনি পুনরায় আলোচনায় আসেন ২০১৩ সালে নারায়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রাক্কালে। শেখ হাসিনা আন্তরিক ভাবেই চেয়েছিলেন শামীম ওসমান পাস করে আসুক। কিন্তু পরিস্থিতির কারনে সেটা সম্ভব হয়নি। জিতে যান আইভি। ফলে শামীম ওসমান পুনরায় বেকায়দায় পড়েন। নারায়নগঞ্জের রাজনীতিতে গত ১২ বছর ধরে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্তহীনতায় ভূগেছে। সেখানকার সদর আসনটিতে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে কিংবা দলে শামীম ওসমানের প্রাধান্য থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হীনতা, একেক নেতার একেক ধরনের কুটকৌশল ইত্যাদি কারনে শামীম ওসমান যেমন ক্ষত বিক্ষত হয়েছেন তেমনি স্থানীয় আওয়ামীলীগে দেখা দিয়েছে চরম ভ্রাতৃঘাতী বিরোধ। কোন বিরোধী দল বা জামাত-শিবির-হুজি দরকার নেই- নারায়নগঞ্জে আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীদের জীবন নাশের জন্য নিজ দলের প্রতিদ্বন্দী ভাই ব্রাদারই যথেষ্ঠ। এরই ধারাবাহিকতায় ৭টি খুনের নিমর্ম ঘটনা ঘটলো। এখন প্রশ্ন হলো-এই ঘটনায় র‌্যাব জড়ালো কিভাবে এবং কেনো ? থানা পুলিশ বা বেসামরিক প্রশাসন কি অভিযুক্ত র‌্যাব কর্মকর্তাদের কুকর্মের ভাগ পেতো? এবং এসব কর্মের সঙ্গে শামীম ওসমান কতটুকু জড়িত- ইত্যাদি আলোচনার পুর্বে র‌্যাব নিয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি বলে নেই। প্রথমেই বলতে চাই- আমি র‌্যাব বিলুপ্ত করার পক্ষে নই। দেশের অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বদনামীর তুলনায় এখনো র‌্যাবের সুনাম অনেক বেশী। র‌্যাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ব্যক্তি কর্নেল জিয়া আমার সহপাঠী হবার কারনে বাহিনীটির কর্মকান্ড সম্পর্কে যেমন কিছুটা ধারনা আছে তেমনি জিয়ার সুবাদে আরো অনেক র‌্যাব কর্তাকে কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। আমার পরিচিত জনদের কাউকেই আমি মদ-মেয়েমানুষ, জুয়া কিংবা ঘুষ দূর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে দেখিনি। অন্যদিকে, জিয়া কোনদিন ছাত্রলীগ বা অন্যকোন রাজনীতি করতো না। আবার বর্তমান সরকারের কোন প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গেও তার কোন দহরম মহরম নেই। সে ন্যায্য হলে সবার কথাই শুনে আবার অন্যায্য হলে কারো কথাই শুনে না। আমি বলছি মন্ত্রী-এমপিদের কথা। এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী বা তার বাহিনী প্রধানের কথা সে কিভাবে সমীহ করে তা আমার জানা নেই। কাজেই নারায়নগঞ্জের ঘটনায় র‌্যাবের নাম আসায় আমি ব্যক্তিগত ভাবে হোঁচট খেয়েছি। আমার মনে হয় র‌্যাবের সৎ কর্মকর্তারাও মারাত্মক ভাবে অপমানীত হয়েছেন সতীর্থদের কুকর্মের কারনে। কাজেই বাহিনীটির সার্বিক অস্তিত্ব রক্ষা ও সুনাম অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হওয়া দরকার। আর প্রক্রিয়ায় এমন কিছু ঘটতে পারে যার ফলে আগামীতে ক্ষমতাসীনরা হয়তো আরো বিপদে পড়তে পারে। এদেশের সচেতন মহল বেশ ভালো করেই জানে যে-র‌্যাব-পুলিশের মধ্যে মারাত্মক দ্বন্দ রয়েছে। তেমনি পুলিশ সদর দপ্তর ও মন্ত্রনালয়ের দ্বন্দ কারো অজানা নয়। বিভিন্ন ক্যাডার সার্ভিসের আন্তঃবিরোধ, বিচার বিভাগ, দুদক, জাতীয় রাজস্ববোর্ড ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ের দুরত্ব দিন দিন বাড়ছে। এসব পুরোনো এবং ক্রমবর্ধমান সমস্যার আগুনে পেট্রোল ঢালছে বিভিন্ন আমলে ক্ষমতাসীনদের দলবাজি, অবৈধ নিয়োগ, অযোগ্য লোকদেরকে গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব প্রদান, অনৈতিক পদোন্নতি এবং স্বজন প্রীতির নির্লজ্জ বেহায়াপনা। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের কাফন হয়েছিল সেদিন- যেদিন জনতার মঞ্চের নায়কেরা সরকার কর্তৃক পুরস্কুত হয়েছিলো। কিন্তু যদি বলেন-কাফন তো হয় মরার পর। তাহলে সিভিল সার্ভিস মরলো কবে? আমি বলবো- স্বাধীনতার পর পরই মরেছিলো। যখন পাকিস্তানের অনুগত এবং মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী সিএমপিদেরকে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রশাসনে যোগদানের সুযোগ করে দেয়া হয়েছিলো তখন থেকে শুরু হয়েছে মরন। মরার পর কাফন-কাফনের পর কবর রচনা এবং সবশেষ চল্লিশা। গত ৫ ই জানুয়ারীর ভোটার বিহীন নির্বাচনের প্রধান সাহায্যকারী হিসেবে এদেশের সিভিল সার্ভিস তাদের কবর রচনা করেছিলো আর নারায়নগঞ্জের ট্রাজেডীর মাধ্যমে চল্লিশা বা চেহলাম পালন করছে। এবার নারায়নগঞ্জ প্রসঙ্গে আসি। হত্যাকান্ডটি সংগঠিত হয়েছে রাজনৈতিক কারনে। যার দায় দায়িত্ব অবশ্যই রাজনৈতিক নেতৃত্বের। অন্যদিকে র‌্যাব বা প্রশাসনের অন্য যাদের নাম আসছে তারা সবাই রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত এবং রাজনৈতিক প্রভাবে কর্মস্থলে নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে স্থানীয় রাজনৈতিক পান্ডাদের দুস্কর্মের হাতিয়ার হতে ওদের কোন লজ্জা লাগেনি। এতোবড় হত্যাকান্ডের পেছনে ব্যয়কৃত বিপুল অর্থও তারা আয় করেছিলো অবৈধভাবে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। দূভাগ্য/ ভাগ্যক্রমে নারায়নগঞ্জের ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিরা ধরা পড়েছে। কিন্তু ধরা পড়েনি কিন্তু হয়েছে এমন উদাহরন এদেশে রয়েছে হাজার হাজার । দেশের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা ভীষন চিন্তিত। চারিদিকে কেমন যেনো এক উত্তপ্ত এবং অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে। এমনতরো অবস্থায়-যে কোন জিনিস ঘটতে পারে যে কোন সময়। অর্থাৎ এ ধরনের পরিস্থিতিতে দেশ-সমাজ-রাষ্ট্র কোন বাধা ধরা নিয়ম বা নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্যে চলতে পারে না। ফলে সকালে এক সিদ্ধান্ত হয় তো বিকালে আবার অন্য একটা। একজন একটি কাজের অনুমোদন দেন তো অন্যজন হুট করে নিষিদ্ধ করেন। সবখানেই এক ধরনের হটকারী অবস্থা বিরাজ করে। ফলে মানুষের মন থাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত-সমাজে কেউ কাউকে ছাড় দেয় না। অপমান এবং অসম্মান করাই হয়ে উঠে ক্ষমতাসীনদের প্রধান পেশা এবং নেশা। আর এ অবস্থায় মানুষ একজন আরেক জনের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। কথায় কথায় যাকে তাকে সন্দেহ করা শুরু করে। এক সময় ভীরু কাপুরুষের মতো একা একা গোস্বায় ফোঁস ফোঁস করতে থাকে ঠিক যেনো গোখরা সাপের মতো। আপনারা অবাক হবেন সাপের কোন চোখ নেই। তারপরও অকারনে কেবল সন্দেহের বশবর্তী হয়ে সাপগুলো ফনা তুলে ফোঁস ফোঁস করতে থাকে। যারা ভীতু লোক তারা তো সেইসব ফোঁস ফাঁসের শব্দ শুনেই চিৎপটাং- দাঁতে দাঁত লাগিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অজ্ঞান অবস্থায় অনেকে আবার কাপড় চোপড়ও নষ্ট করে ফেলে। বেশির ভাগ লোকতো মারাই যায়। এক গবেষনায় দেখা গেছে- সাপের কামড়ে মৃত লোকদের শতকরা ৯০ জনই মারা যায় হার্ট এ্যাটাকে। অর্থাৎ কোন ফনা তোলা বিষহীন সাপ কামড় দিয়েছে বা দিতে উদ্যত হয়েছে এই দৃশ্য দেখা মাত্রই উনি চিৎপটাং হয়ে হার্ট এ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। নারায়নগঞ্জের ট্রাজেডীর মধ্যে ঐতিহাসিক অশনীসংকেত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। অভিযুক্ত র‌্যাব কর্তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে এবং রিমান্ডে নেয়া হবে। হয় সিআইডি নয় ডিবি পুলিশের কাস্টডীতে রিমান্ড হবে। রিমান্ডে এমন সব কলংকিত অধ্যায় বের হয়ে আসবে যাতে র‌্যাবের অস্তিত্ব নিয়েই টানাটানি শুরু হবে। র‌্যাব বলবে- এটা পুলিশের চক্রান্ত। তারা রিমান্ডের নামে জোর করে মনগড়া স্বীকারোক্তি আদায় করে র‌্যাবকে জনসম্মুখে হেয় করছে। ফলে র‌্যাব পুলিশের পুরোনো বিরোধ প্রলয়ংকরী আকার ধারন করবে। র‌্যাবও চেষ্টা করবে পুলিশকে বিপাকে ফেলার জন্য এবং এসব কর্মকান্ডের কোন এক সময় যদি শামীম ওসমানের জিডির আশংকা বাস্তবায়িত হয়ে যায় তাহলে দেশবাসী বোধ হয় খুব একটা অবাক হবে না। অন্যদিকে অভিযুক্ত র‌্যাব কর্মকর্তার শ্বশুর এবং মহাত্মা দীপু চৌধুরীর আব্বা জনাব মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া তার সাম্প্রতিক কথাবার্তা, আঙ্গুলীর নড়াচড়া এবং ঠোঁট, ভ্রু এবং জিহবার কর্ম কুশলতার কারনে বেশ ঝামেলায় আছেন। তাকে বোধ হয় বিদেয় নিতেই হবে। অন্যদিকে নিরাপত্তার জন্য হলেও শামীম ওসমানকে হয় জেলে নয় বিদেশে যেতে হবে। আর এতে করে নারায়নগঞ্জের শামীম ওসমান পন্থীদের ওপর নেমে আসবে গজব। আবার তিনি যদি বাইরে থাকেন তবে অজানা আশংকা সর্বদা তাকে তাড়া করবে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের অবস্থা হবে - শাঁখের করাতের মতো। একটি রাজনৈতিক সরকারের ক্ষমতার উৎস হলো জনগন। তাদের বন্ধু হলো-তাদেরই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলো আর ভিত্তি হলো জনগনের প্রতি বিশ্বাস। বর্তমান ক্ষমতাসীনরা জনগনকে বিশ্বাস করেনা। নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি ব্যয় করে তারা বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে প্রায় ধ্বংশ করে দিয়েছে। তারা এসব করেছে রাষ্ট্রের প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে। ফলে যা হবার হচ্ছে। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা মনে করছে- আমরাই তোমাকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। ফলে তারা আর পূর্বের মতো আনুগত্য দেখাবে না- হুকুম তামিল করবে না। বরং উল্টো রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সব সময় স্নায়ূবিক চাপে রাখবে। এই সময় ক্ষমতাসীনদের জন্য সবচেয়ে মারাতœক হয়ে দেখা দিবে-ইন্টার সার্ভিস পলিটিক্স। র‌্যাব বলবে আমরা না হলে কিছুই হতো না। পুলিশ বলবে- অসম্ভব! থানা পুলিশের সাহায্য ছাড়া কেউ কি কোন কিছু করতে পেরেছে কোন কালে। ডিসি/ইউনওরা বলবে-বোকারা বলে কি! আমরাইতো ছিলাম রিটার্নিং অফিসার। ভোট গননা-কারচুপি, ফলাফল ঘোষনা, গেজেট নোটিফিকেশন-সবইতো আমরা করেছি। কাজেই আমরাই সব। রাজনৈতিক নেতৃত্বের এসব বিরোধ নিষ্পত্তির কোন নৈতিক যোগ্যতা থাকবে না। তারা পুতুল হয়ে সুতোর টানে কেবল রচনা করবে পুতুল নাচের ইতিকথা। নারায়নগঞ্জের ৭ খুনকে অস্থির সমাজের বর্জ্য বা গাদ বা ময়লা হিসেবেই দেখছে সমাজ বিজ্ঞানীরা। কোন তরল পদার্থ গরম হলে ময়লা গুলো উপরে ভেসে ওঠে। আর ঠান্ডার সময় ময়লা থাকে নীচে। ঘোর বর্ষায় যদি বন্যা হবার আশংকা থাকে তবে বেশ কয়েকদিন আগ থেকেই ঘোলা পানি প্রবাহিত হওয়া শুরু হয় । সমাজ যদি অস্থির হয় তবে মন্দ ও কুৎসিৎ ঘটনাগুলো শিরোনাম হয়। শান্তির সময় শিরোনাম হয় সৃষ্টিশীল মহৎ কর্মগুলো। কবিরা সুন্দর সুন্দর কবিতা রচনা করে। সুরকার সৃষ্টি করে অমর সুর লহরী। প্রকৃতি তার শীতল বাতাস, ফুল এবং ফল দ্বারা সৃষ্টিশীল মানুষদের ঔদার্যকে বাড়িয়ে দেন বহুগুনে। অন্যদিকে গজব নাযিল হবার প্রাক্কালে সবকিছু উত্তপ্ত হয়ে উঠে। টগবগিয়ে ফুটতে থাকে সবকিছু। সমাজের সব গোপন এবং কুৎসিৎ বিষয় সমুহ চলে আসে প্রকাশ্য দিবালোকে। মানুষ দিনের কাজ রাতে এবং রাতের কাজ করে দিনে। যে কাজ করা দরকার গোপনে-তা করে প্রকাশ্যে- আর যা করা দরকার প্রকাশ্যে তা করে গোপনে। এখন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আপনিই বলুন- আমরা কোন দিকে যাচ্ছি।

মন্তব্য করুন


 

Link copied