একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষ হয়েছে প্রায় ছয় মাস আগে।
সূত্রমতে, ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত যতগুলো মামলার রায় হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দিন ধরে রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রয়েছে নিজামীর মামলাটি। গত বছরের ২০ নভেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হওয়ার পর ‘যেকোনো দিন রায়’ ঘোষণার জন্য মামলাটি অপেক্ষমাণ রাখা হয়। রায় অপেক্ষামাণ থাকা অবস্থায় ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যান। এরপর ঝুলে যায় নিজামীর মামলার রায়। দীর্ঘ ৫৪ দিন পর ২৩ ফেব্রয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়।
১০ মার্চ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনালে নিজামীর মামলার পুনরায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়। তৃতীয় দফায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হওয়ায় গত ২৪ মার্চ থেকে নিজামীর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষামাণ রয়েছে। কিন্তু সেই অপেক্ষার পালা আর শেষ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, ‘নিজামীর মামলাটি যেহেতু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ মামলার রায় নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠিত ও উদ্গ্রীব। অনেক দিন ধরে রায় হওয়ার কথা থাকলেও কেন যে হচ্ছে না বুঝতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণত রায়ের আগে আমাদের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু এ ধরনের কোনো লক্ষণ দেখছি না। তাই রায় এ সপ্তাহেও হবে কি না তা বলতে পারছি না।’
সূত্র জানায়, মতিউর রহমান নিজামীর রায় অপেক্ষমাণ নিয়ে কিছুটা অস্বস্তিতে আছেন এ মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তারা অনেকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলে আসছেন, ‘এ সপ্তাহে কিংবা চলতি সপ্তাহেই’ নিজামীর রায় হবে। কিন্তু রায়ের সেই ‘সপ্তাহ’ যেন আর আসছে না।
অপেক্ষমাণ এ রায়ের বিষয়ে প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালে নিজামীর মামলার রায় হয়েও হচ্ছে না। প্রায় ছয় মাস পার হলেও রায় না হওয়াটা দুঃখজনক। এ নিয়ে অস্বস্তি আর দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। নিজামীর মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত অন্য কোনো মামলায়ও মনোযোগ দিতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে কয়েক সপ্তাহ ধরে নিজামীর রায় হবে ভেবে অপেক্ষা করেছি। কিন্তু দিন কেটে গেছে, রায় হয়নি। তবে আমি আশাবাদী, দেশের মানুষের প্রত্যশার কথা চিন্তা করে খুব দ্রুতই রায় দেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগের মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন মতিউর রহমান নিজামীকে গ্রেফতার করা হয়। পরে একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। নিজামীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ৩৩৬ পৃষ্ঠার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। আর আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ প্রায় আড়াই হাজার থেকে ৩ হাজার পৃষ্ঠার ডকুমেন্ট তৈরি করা হয়।
তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষ। তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, খুন, ধর্ষণ এবং অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ আনা হয়।
২০১২ সালের ৯ জানুয়ারি নিজামীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওই বছরের ২৮ মে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগ এনে নিজামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
নিজামীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ২৬ আগস্ট থেকে গত বছরের ৭ অক্টোবর পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তার বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক খানসহ ২৬ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। নিজামীর পক্ষে তার ছেলে নাজিব মোমেনসহ চারজন সাফাই সাক্ষ্য দেন। মেহেদী হাসান ডালিম, রাইজিংবিডি