রুহুল সরকার, রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: অত্যধিক তাপমাত্রার কারনে বোরো বোনো ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে। এতে কাঙ্খিত ফলন না পাওয়ার নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে। বোরো ক্ষেতের ধানের শিষে ধান নেই। সব চিটা হওয়ায় শিষ খাড়া হয়ে আছে। তাপমাত্রার কারনে এবং ক্ষেতে পানি না থাকার কারনে বোরো ক্ষেতের ধানে চিটা দেখা দিয়েছে। ক্ষেতের ওই সর্বনাশা চিত্র দেখে কৃষক হা-হুতোষ করছে। কোনো পরিবারের কান্নার রোল পড়ে গেছে। বোরো ধানের শিষে দানা নেই। প্রায় ক্ষেতের ধান চিটা হওয়ার চিত্র পাওয়া গেছে কুড়িগ্রামের রাজীবপুর উপজেলায়।
রাজীবপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, বোরো ধানের সহনশীল তাপমাত্রা হলো সবোর্চ ৩৬ ডিগ্রি। সেখানে রাজীবপুরে দীর্ঘ ১৫দিনেরও বেশি একনাগাড়ে তাপমাত্রা বিরাজ করছিল ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৩৯ ডিগ্রির ওপরে। আর ওই সময়ে যেসব বোরো ক্ষেতের ধানে শিষ বের হয়েছে মূলত সে গুলোই চিটা হয়েছে। ওই সময়ে সার্বক্ষনিক বোরো ক্ষেতে পানি রাখা হলে এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না বলে জানান, কৃষি কর্মকর্তা আখরুজ্জামান। কিন্তু তাপমাত্রা বেশি থাকায় কৃষক সেচ দিয়ে বাড়ি যাওয়ার পরই ওই ক্ষেত শুকিয়ে গেছে।
কৃষি কর্মকর্তা আখরুজ্জামান আরো জানান, উপজেলার ৩ ইউনিয়নের আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে এবছর বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধশত বিঘা জমির ধান চিটা হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা এখন মাঠ চষে ওই তথ্য সংগ্রহ করছে। তবে এখন তাপমাত্রা কমে গেছে। এ সময় যেসব বোরো ক্ষেতের শিষ বের হবে সেগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না।
এদিকে সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বোরো ক্ষেতের ওই ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। চররাজীবপুর সরকারপাড়া গ্রামের কৃষক শহর আলী। জাউনিয়ার চর আইড়মারী এলাকায় তিনি এবার ৩ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করছেন। সার ডিজেলে খরচ করছেন ধারদেনা করে। তিনি বলেন, ‘কী করমুরে বাবা ৫০ মন ধানের ওপর সুদের টাকা নিয়া মাইয়ার বিয়া দিছি। কথা ছিল ধান কাইটা সুদওয়ালা ঘরোগ ধান দিমু। কিন্তু ক্ষেতে যাই দেহি সর্বনাশ হইয়া গেছে। একটা শিষেও ধান নেই, খালি চিটা। ৩বিঘায় ৩মণ ধানও পামু না।’ এব অবস্থায় ওই কৃষক মনভাড়া ক্রান্ত হয়ে বাড়িতে যাওয়ার পর স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন। তাদের কান্না শুনে গ্রামের মানুষ জড়ো হয়ে জানতে পারে তাদের কান্নার কারন।
এই কান্না শুধু শহর আলীর পরিবারেই যে হচ্ছে তা কিন্তু নয়। বোরো ক্ষেতের এই সর্বনাশা চিত্র দেখে উপজেলার অসংখ্য দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ছোটাছুটি করছে কৃষি দপ্তরে। ধুবালিয়া পাড়ার কৃষক রাজ্জাক আলী বলেন, ‘আমার ৮বিঘা জমির ধান ধইরা চিটা হয়েছে। এহন আমার মরন ছাড়া কোনো পথ নেই। কেননা ওই ধান আবাদ করতে সার তেল খরচ করছি সুদের ওপর টাকা নিয়া।’ একই গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম, ইমান আলী, ইদ্রিস আলী, আজাদ মিয়া জানান, তাদের সবার বোরো ধানের অবস্থাও খারাব।