শনিবার বিকেলে সোয়া ৩ টায় রংপুর মহানগরীর কামালকাছনা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-১৩ একটি চৌকষ দল। তার বিরুদ্ধে জন উপদ্রুপ ও ধর্মীয় অনূভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করেছে র্যাব। তাকে গ্রেফতারে সন্তোষ জানিয়ে রংপুর ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটি এক বিবৃতিতে ভন্ডনবী ফিরোজ কবীরের সহযোগিদের গ্রেফতার, ‘দরবারের সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পতি’ সরকারী কোষাগারে জমা নিয়ে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা টাকা পরিশোধ এবং প্রচলিত আইনে তার কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার বিকেলে র্যাব ১৩ এর কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কোম্পানী কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মনোয়ার হোসেন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১৩ এর ক্রাইম প্রিভেনশন স্পেশাল কোম্পানীর একটি চৌকষ দল রংপুর মহানগরীর কামালকাছনায় অভিযান চালিয়ে ভন্ডনবী পীর দাবিকৃত পরিচয়দানকারী ফিরোজ কবীরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, ভন্ড নবী দাবিদার ফিরোজ কবিরকে গ্রেফতারের মাধ্যমে রংপুর অঞ্চলে ধর্মকে পূঁজি করে মানুষকে ঠকানোর প্রচেষ্টা নস্যাত করার ক্ষেত্রে র্যাব গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করলো। প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরও জানান, স্থাণীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে ভন্ড নবী দাবিদার ফিরোজ কবিরকে নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবেদন, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটির স্মারকলিপি এবং র্যাবের নিজস্ব গোয়েন্দা গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনূভূতিতে আঘাত, ধর্মীয় গ্রন্থের অপব্যখা, নিজেকে বাংলা ভাষাভাষিদের জন্য নবী দাবীকারী, নারীদের সাথে প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন অনৈতিক কাজ ও ধর্ষনের ভিডিও চিত্র ধারন করে তা দিয়ে পরবর্তীতে ব্লাকমেইলিং করে মোটা অংকের অর্থ প্রতারণাসহ বিভিন্ন অনৈতিক ও অনৈসলামিক কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। তিনি জানান গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে দৈনিক একুশে সংবাদ নামের একটি পত্রিকার স্পেশাল করোসপন্ডেন্ট এর পরিচয়পত্র উদ্ধার করা হয়। তিনি জানান, ফিরোজ কবীর বিমান বাহিনীতে চাকুরী করাকালীন সময়ে ২০০৯ সালে বিভিন্ন অভিযোগে তাকে চাকুরীচ্যুত করা হয়। র্যাব কমান্ডার জানান, ভন্ড নবীর বিরুদ্ধে র্যাবের পক্ষ থেকে জন উপদ্রুপ ও ধর্মীয় অনূভূতিতে আঘাতের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। তার কাছে প্রতারিতসহ যে কেউ মামলা ও অভিযোগ করলে তা গ্রহণ করা হবে।
ভন্ড নবী দাবিদার ফিরোজ কবিরকে গ্রেফতারের পর ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক মাওলানা ইউনুস আলী, যুগ্ম আহবায়ক মাওলানা মোহাম্মদ আলী যুগ্ম ও সদস্য সচিব এটিএম গোলাম মোস্তফা জানান, দেরিতে হলেও র্যাব ভন্ড নবীকে গ্রেফতার করায় প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই। এই ভন্ডকে শুধুকে গ্রেফতার করলেই চলবে না। তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থার উাদ্যোগ নিতে হবে। যাতে আল্লাহ, রাসুল , কোরআন ও ইসলামের প্রতি কখনই কেউ এ ধরনের কর্মকান্ড পরিচালনা করতে না পারে। পাশাপাশি তার দরবারের সকল স্থাবর, অস্থাবর সম্পদ সরকারী জিম্মায় নিয়ে প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পাওনা টাকা পরিশোধ করে দেয়ার জন্যও দাবি জানান তারা।
ভন্ড নবী ফিরোজ কবিরের বিভিন্ন অপকর্মের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন রংপুরের ধর্মপ্রাণ মানুষ। ঈমান আকিদা সংরক্ষণ কমিটির ব্যানারে গত ২৮ এপ্রিল ভন্ড নবী ফিরোজ কবিরকে গ্রেফতার এবং তার ‘দরবারের সমস্থ সম্পতি সরকারী কোষাগারে নিয়ে পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধের জন্য সিটি বাজারের সামনে স্মরণকালের বিক্ষোভ ও ডিসি এসপিকে স্মারকলিপি দিয়ে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দেন। এ ঘটনার ১৯ দিন পর শনিবার তাকে গ্রেফতার করলো র্যাব।
র্যাব, পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ভন্ড বাবা ফিরোজ কবীরের বিরুদ্ধে রংপুরের মাহিগঞ্জের বড় হাজরায় কবিরিয়া দরবার শরীফ স্থাপন করে অগ্নিকুন্ডলী বানিয়ে কাচা কাঠ পুড়িয়ে অগ্নিপূজার মাধ্যমে রোগব্যাধী ভালো করা, নিজেকে বাংলাভাষাভাষিদের জন্য নবী রাসুল দাবী, সালামের পরিবর্তে দুই হাতের তালু একত্রিত করে বুকের মাঝে নিয়ে এসে (বৌদ্ধর্ধর্মের অনুকরণে) মাথা নোয়ানোর পদ্ধতি চালু করা, পবিত্র কালেমা তাইয়েবার সাথে নবীর নাম বাদ দিয়ে নিজের নাম সংযুক্ত করে ভক্তদের (নাউযবিল্লাহ) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ফিরোজ কবির রাসুলুল্লাহ বলতে বাধ্য করা, সুরা ইখলাসসহ বিভিন্ন আয়াতের মধ্যে যেখানে ‘আল্লাহ’ আছে সেখানে আল্লাহ না বলে ‘আনতাল্লাহ’(নাউযুবিল্লাহ) বলাসহ কোরআন ও হাদিসের অর্থ বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা, পবিত্র কোরআনের অর্থ বিকৃত করে সৃষ্টিকর্তা একাধিক বলে দাবি করা, হাদিসকে ভিত্তিহীন দাবি করে তার তরজমাকৃত কোরআনের অর্থই সঠিক বলে দাবি করা, এক হাতে কোরআন রেখে অন্যহাতে অনর্গল সিগারেট খাওয়া, পৃথিবীতে মুসলমান হিন্দু বলে কিছু নেই সবাই সমান বলে দাবী করাসহ বিভিন্ন অনৈসলামিক কর্মকান্ডের গুরুতর অভিযোগ করে আসছিলেন মুসল্লরিা। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কুমারী ভোগ, মাবুদকে পাওয়ার জন্য সাগরেদদের কুমারীভোগের মন্দ্র শিক্ষা দেয়া, তরুণ তরুনীদের প্রেম সফল করা, সন্তান জন্মানো, স্বামীবশীকরণসহ মনষ্কামনা পূরণের নামে ভোগ করা, ভক্তদের বশকরে টাকা কামানো এবং দরবার নির্মানের নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
[caption id="attachment_31095" align="alignright" width="497"]