হাসিবুল হাসান শারদ
একজন এ প্লাস প্রাপ্ত মেয়েকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা আপু, বলো তো ‘আমি এ প্লাস পেয়েছি’ এটার ইংরেজিটা কী হবে? সে বলল, এটা তো ট্র্যান্সলেশান? বললাম, হ্যাঁ, করে শোনাও তো আমাকে। সে বলল, আমাদের সিলেবাসে তো ট্র্যান্সলেশান ছিল না। বললাম, ভেরি গুড!
ওর সাফল্যকে ম্লান করার ইচ্ছা আমার নেই। তবে আমাদের প্রিয় দেশটিতে শিক্ষার মান শূন্যের কোঠায় নেমে এলে উদ্বিগ্ন হবার আছে। আর সুশিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, এতেও কোনো সংশয় নেই, এটা ইহলৌকিক কলেমাতুল্য।
লঙ্গরখানা খুলে খয়রাতি খাওয়ালে অনেক খয়রাতিই প্রফুল্ল হয়, কিন্তু তাতে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন হয় না, পুষ্টি হয় না, ভবিষ্যৎ আলোকিত হয় না। মুদ্রাস্ফীতি একটা দেশের জন্যে যতটা ক্ষতিকর, এ প্লাস-স্ফীতি তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতিকর, কেননা মুদ্রাস্ফীতি এক অর্থবছরের পর ঘোচানো যেতে পারে, কিন্তু অযোগ্যকে যোগ্য বলে গণহারে রাষ্ট্রীয় সনদ দিলে তা শতবর্ষেও ঘোচানো যায় না। তাছাড়া এটা একে তো রাষ্ট্রের মর্যাদা হানিকর, অপরপক্ষে তলাফুটা জ্ঞান-জাহাজে দেশটাকে তুলে দেয়া। একশো বছর টানতে হবে এই অন্তঃসারশূন্যতার গ্লানি। ভাবতেই ভয় লাগে একটা দেশে খাদ্য নেই, আছে কেবলই মুদ্রা আর মুদ্রা; সেই মুদ্রা তো চিবিয়ে খাওয়া যাবে না! তেমনি প্রকৃত শিক্ষা নেই, আছে কেবল সনদ আর সনদ, সেটাও কি অন্নহীনের মুদ্রা চিবুনোর মতো না?
কিছু গাছ ও ফল পুষ্ট হয় বিষাক্ত রাসায়নিক সারে, সেটা দেখতে ভালো হলেও অবশেষে বর্জনীয়, তেমনি এসএসসির ফলও যে সার দিয়েই ফলানো তাতে কোনো সংশয় নেই; একদা এটাও হবে বর্জনীয়। ভালো ফলাফলের ওপর থেকে মানুষের আস্থা হারাতে হারাতে একদিন বাণিজ্যের স্বার্থেই প্রাইভেট স্কুল-কলেজগুলো বা বাজারি গাইডগুলো হয়তো স্লোগান দিয়ে থাকবে, শুধু এ প্লাস নহে, প্রকৃত শিক্ষাই আমাদের অঙ্গীকার! কেননা দিশা হারালে জনগণ উলটো দিক ফিরতে বাধ্য।