আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা       রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

দিল্লিতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরবেন না

সোমবার, ২৬ মে ২০১৪, দুপুর ০৩:৪৮

প্রভাষ আমিন

নিশ্চয়ই বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই গুরুত্ব তো আগেও ছিল। তাহলে এবার এমন সর্বগ্রাসী প্রতিক্রিয়া কেন হলোএই প্রশ্নের উত্তর মনে মনে অনেক খুঁজেছি,পাইনি। যা পাইতা নিজের কাছেই যৌক্তিক মনে হয় না। আগেও বাংলাদেশের সাংবাদিকরা ভারতের নির্বাচন কাভার করেছেন। কিন্তু এবারের মতো এতো নয়। একটা সহজ হিসাব তো আছেইএখন আগের চেয়ে গণমাধ্যমের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তবে সংখ্যা বেশি হলেও এবার ভারতীয় নির্বাচন নিয়ে আমরা বাড়াবাড়ি করেছিআগে যা করিনি। কোনো কোনো টিভি চ্যানেলের একাধিক টিম ভারতের নির্বাচন কাভার করতে গিয়েছিল। ১৬ মে ফলাফল ঘোষণার দিনে তো বাংলাদেশের বিভিন্ন টিভি চ্যানেল রীতিমত ভারতীয় চ্যানেলের সাথে প্রতিযোগিতা করে কাভারেজ দিয়েছে। ভিনদেশি কেউ দেখলে বিভ্রান্ত হয়ে যেতেনতিনি বাংলাদেশে আছেন না ভারতে। শুধু টিভি চ্যানেল নয়সবগুলো পত্রিকার সিংহভাগ জুড়েই ছিল ভারতের খবর। নারায়ণগঞ্জের সাত খুন তো বটেইএমনকি মুন্সীগঞ্জে মর্মান্তিক লঞ্চডুবির খবরও ভেসে গিয়েছিল ভারতের নির্বাচনের খবরের জোয়ারে। এটারও একটা ব্যাখ্যা আছে। মানে যাই হোকসংখ্যার বিচারে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের চূড়ান্ত বিকাশ লাভ করেছে। আর বাজার ধরতে বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং পত্রিকায় চলে অন্ধ প্রতিযোগিতা। যে কোনো ইভেন্টে কে কার চেয়ে বেশি কাভারেজ দিচ্ছেনচলে সেই প্রতিযোগিতা। এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় শীতলক্ষ্যায় ভাসমান লাশ সরাসরি উঠে আসে টিভির পর্দায়। বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের পর্দাকে ভারতীয় পর্দা বলে বিভ্রম তৈরি হয়।

তবে গণমাধ্যমের প্রতিক্রিয়ার চেয়ে রাজনীতিবিদদের প্রতিক্রিয়া আমাকে আরো বেশি অবাক করেছে। সোজা বাংলায় বললে লজ্জা পেয়েছি। নরেন্দ্র মোদির বিজয়ের সম্ভাবনা তৈরি হতে না হতেই অভিনন্দন জানানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। অন্য সব কাজে পিছিয়ে থাকলেও সকল প্রটোকল ভেঙে আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণার আগেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা মোদিকে অভিনন্দন জানানোর ক্ষেত্রে প্রথম হয়েছেন। এমনকি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমিরও মোদির মত একজন কট্টর হিন্দু নেতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রটোকল মেনে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

রাজনীতি করার হাজারটা সুবিধা যেমন আছেআবার কিছু অসুবিধাও আছে। রাজনীতিবিদরা সবসময় মনের কথাটি বলতে পারেন না। এই যেমন ভারতে বিজেপির নিরঙ্কুশ বিজয়ের পর মোদিকে অভিনন্দন জানানোর ক্ষেত্রেও সবাই মনের কথাটি বলতে পারেননি। অনেককে কূটনৈতিক কারণে অভিনন্দন জানাতে হয়েছে। কিন্তু আমি রাজনীতি করি না। আমাকে কিছু লুকাতে হচ্ছে না। মোদির জন্য আমার তীব্র ঘৃণা।

মোদির বিজয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট তাদের উচ্ছ্বাস গোপন রাখতে পারেনি। আওয়ামী লীগের বেদনাটাও গোপন থাকেনি। এ নিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এটা ঠিক ঐতিহাসিকভাবেই আওয়ামী লীগের সাথে ভারতের কংগ্রেসের সম্পর্ক ভালো। যদিও তিস্তার পানিসীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়নিতবুও সাম্প্রতিককালে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক সবচেয়ে উষ্ণ। এমনকি দেশি-বিদেশি নানা মহলের প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখেও আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারির প্রার্থীবিহীনভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে পেরেছে ভারতের শর্তহীন সমর্থনের কারণেই। এখানেই লুকিয়ে আছে বিএনপি-জামায়াত জোটের উচ্ছ্বাসের রহস্য। যদিও বিজেপির সাথে বিএনপি-জামায়াত জোটের আদর্শিক ফারাক আকাশ-পাতাল,তবুও শত্রুর শত্রু আমার মিত্রএই তত্ত্বেই লাফাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। মোদি ক্ষমতায় আসাতে আওয়ামী লীগের হয়তো একটু সমস্যা হবেতবে বিএনপি-জামায়াতের কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না। মোদি তো আর আওয়ামী লীগকে সরিয়ে বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না। আর দিল্লির মসনদে তার মতো একজন দাঙ্গাবাজবাংলাদেশ বিদ্বেষীপাকিস্তান বিদ্বেষীউগ্র জাতীয়তাবাদী নেতা থাকলে তা বিএনপি-জামায়াতের জন্য অস্বস্তিকরই হওয়ার কথা।

অস্বস্তির কথাই যখন এলোতখন একটু ব্যক্তিগত অস্বস্তির কথা বলে নেই। বিজেপি যখন মোদিকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেতখন থেকেই আমার মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি ছিল। ভারতের মতো ঐতিহ্যবাহী গণতন্ত্রের হাল ধরবেন মোদির মত একজন নেতিবাচক চরিত্রের মানুষ;এটা কিছুতেই মন থেকে মেনে নিতে পারছিলাম না। কিন্তু কংগ্রেস যেভাবে নির্বাচনের আগেই হাল ছেড়ে বসে ছিলতাতে মোদীর জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে উঠছিল। কোনো একটা মিরাকলের অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। বিজেপি এমন ভূমিধস বিজয় পেলো যেকোনো টানাহ্যাচড়ারও সুযোগ ছিল না। কী আর করা মনের দুঃখ নিয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। একটাই আশাপ্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর হয়তো মোদি তার আগের নেতিবাচক ইমেজ ঝেড়ে ফেলে সত্যিকারের নেতা হওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও বারবার মোদীর হিংস্র দাঁত বেরিয়ে পড়ছিল। তিনি বলে রেখেছেন১৬ মে’তেই যেন ভারতে থাকা বাংলাদেশিরা বাক্স-প্যাটরা গুছিয়ে রাখেন। তাই অস্বস্তিটা কাটছেই না। এমনকি শপথ নেয়ার আগেই ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে একটি সেল গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন। তার মানে লক্ষণ ভালো না। যদিও শোনা যাচ্ছেমোদির প্রথম বিদেশ সফর হবে বাংলাদেশ এবং সেই সফরে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে নাটকীয় অগ্রগতি হতে পারেতবুও এ ব্যাপারে আমি খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছি না। বিজেপি’র বিশাল বিজয় আমার শঙ্কা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বিশাল বিজয় মোদিকে আরো আত্মবিশ্বাসী করবেযা তাকে আরও বেপরোয়াও করতে পারে। আশার জায়গা একটা বড় দায়িত্ব মানুষকে উদার করেবড় করে। ভারতের মতো বড় গণতন্ত্রের দায়িত্ব যদি কর্পোরেটদের নেতা নরেন্দ্র মোদি সত্যিকারের জাতীয় নেতায় বদলে দেয় তাহলেই সবার জন্য মঙ্গল।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত বরাবরই ফ্যাক্টর। একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহায়তা করেছিল। সেই জন্য ভারতের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। কিন্তু স্বাধীনতার পর নানা ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্কে আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হয়। অন্ধ ভারত বিরোধিতাও হয়ে যায় বাংলাদেশের রাজনীতির প্রধান প্রবণতা। একাত্তরে সহায়তার পরও ভারত সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের আস্থা হারানোর প্রধান কারণ তাদের দাদাসুলভ আচরণ। দুই দেশের সম্পর্ক কখনোই পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও আস্থার ছিল না। শুধু তিনদিকে সীমান্তে নয়ভারত সবদিক দিয়েই ঘিরে রেখেছে বাংলাদেশকে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মারা গেলে বাংলাদেশের সব পত্রিকায় তা লিড হয়। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ মারা যাওয়ার খবর ভারতের পত্রিকায় ভেতরের পাতায় সিঙ্গেল কলামে ছাপা হয়। ভারতের প্রায় সব টিভি চ্যানেল বাংলাদেশে দেখা যায়। কিন্তু ভারতীয় বাঙালিদের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল সে দেশে দেখা যায় না। ভারতের লেখকশিল্পীগায়কঅভিনেতা-অভিনেত্রীক্রিকেটাররা বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশের কাউকে ভারতের মানুষ চেনেই না। আমাদের ক্রিকেট উন্নয়নে ভারত অনেক অবদান রাখতে পারতো। কিন্তু টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার ১৪ বছরেও ভারত আমাদের আমন্ত্রণই জানায়নি। অবশ্য আমাদেরও দায় আছে। আমরা দেখি বলেই তো তাদের সিনেমা বা সিরিয়াল বাংলাদেশে এতো জনপ্রিয়। ভালো বই পড়তেভালো গান শুনতেভালো সিনেমা দেখতে আমার আপত্তি নেইএমনকি তা ভারতীয় হলেও। কিন্তু বিষয়টা পারস্পরিক হলে ভালো হতো।

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের কথা হলেই সবসময় বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে কথা হয়। এটা সত্যি আমাদের স্বার্থটা বেশি। ভারত চাইলেই পানি আটকে আমাদের বিপদে ফেলতে পারে। কিন্তু স্বার্থটা মোটেই একতরফা নয়। ভারতের স্বার্থেই বাংলাদেশের সাথে তাদের সুসম্পর্ক রাখা দরকার। বাংলাদেশের সহায়তা ছাড়া সেভেন সিস্টার্সকে উন্নয়নের মূল ধারায় রাখতে পারবে না ভারত। একসময় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ভারতে অস্ত্র চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হতো বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে ধরা পড়া ১০ ট্রাক অস্ত্র তো ভারতের উলফার জন্যই যাচ্ছিল। উলফা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্য ছিল বাংলাদেশ। এই যে এখন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মণকে মণ স্বর্ণ ধরা পড়ছেএই স্বর্ণ তো বাংলাদেশের বাজারের জন্য নয়ভারতে পাচারের জন্য। তাই নিজেদের স্বার্থেই বাংলাদেশকে আস্থায় রাখতে হবে মোদি সরকারকে। দিনের পর দিন ভারত আমাদের পানি আটকে রাখবেসীমান্ত সমস্যা জিইয়ে রাখবেকথায় কথায় বিএসএফ গুলি করে সীমান্তে মানুষ মারবেমোদী ভারতে থাকা বাংলাদেশীদের পুশব্যাক করার হুমকি দেবেনআর আমরা বসে বসে আঙ্গুল চুষবোএটা হবে না। মাথা উঁচু করেশক্ত ভাষায়চোখে চোখ রেখে কথা বলতে হবে ভারতের সাথে।

বাংলাদেশের কেউ কেউ ভারতকে নিয়ে একধরনের হীনমন্যতায় ভোগেন। হতে পারে আয়তনে আমরা ছোট, বয়স আমাদের কম। কিন্তু তাই বলে আমাদের হীনমন্যতায় ভোগার কোনো কারণ নেই। পৃথিবীর সব দেশ একরকম নয়। স্বাধীনতার পর থেকে গত ৪২ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। ভারতও এগিয়েছে। ভারত ভারতের মতো, আমরা আমাদের মতো। সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশ ভারতের চেয়েও অনেক এগিয়ে। ভারতের কাছ থেকে যেমন আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে, তেমনি আমাদের কাছ থেকেও ভারত অনেক কিছু শিখতে পারে। আমাদের রাজনীতিবিদরা আরেকটু সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হলে মেধাবী নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নেয়ার সামর্থ্য রাখে। তাই হীনমন্যতার কোনো কারণ নেই। যা হবে সব সমানে সমান। আমাদের ন্যায্য পাওনা আমাদের বুঝিয়ে দাও, দাদা হিসেবে তোমাদের আমরা সম্মান করবো। আমাদের খাটো করলে আমরাও ছেড়ে কথা বলবো না।

একসময় মস্কোতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা ধরতেন বামপন্থিরা। সেই দিন ফুরিয়েছে অনেক আগেই। এখন কেউ কেউ দিল্লিতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতা মেলে বসে থাকেনউল্লসিত হনমন খারাপ করেন। সময় এসেছে এই মানসিকতা বদলানোর। প্রেম কখনো একতরফা হয় না। আমরা ভারতের বন্ধুত্ব চাইপ্রভূত্ব নয়।

লেখকঅ্যাসোসিয়েট হেড অব নিউজএটিএন নিউজ

probhash2000@gmail.com

মন্তব্য করুন


 

Link copied