আর্কাইভ  বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪ ● ১৪ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   বৃহস্পতিবার ● ২৮ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

আন্তর্জাতিক যোগাযোগের গেটওয়ে হবে কুড়িগ্রাম

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

কুড়িগ্রামে ভুটানিজ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল আলোর মুখ দেখতে বসেছে

 width=
 
শিরোনাম: রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা       ২৯ রমজান কি অফিস খোলা?       আজ ঐতিহাসিক রংপুর ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও দিবস       লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ হস্তান্তর       কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি      

 width=
 

বদরগঞ্জের মহাযজ্ঞ যাত্রাগান ! গণমাধ্যম ও ডিসি-এসপি সাহেব নিশ্চুপ কেন..?

মঙ্গলবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৩, রাত ১০:১৩

সজিব তৌহিদ ।। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির দেড় হাজার বছরের অতীত গৌরবাজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। বাঙালি কোন পালা পার্বণে বা অনুষ্ঠানে অথবা দেশটাকে বিশ্বের দরবারে উপস্থাপনে সে সবই পরিবেশন করা হয়। যা বাঙালির পরিচায়ক বা স্বত্বা হিসেবে কাজ করে। এসবের মধ্যে যাত্রা, জারি ,সারি, পালাগান, কবি গান, ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, বেহুলা লক্ষীনদারের কাহিনি, মহুয়া পালা, গীত, গজল, কেঞ্চা ইত্যাদি অন্যতম। এক সময় এদেশে যাত্রাপালা বা যাত্রাগান চিত্ত বিনোদনের উত্তম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হতো। সেই যাত্রার অতীত গৌরব না থাকলেও ফুরিয়ে যায় নি। এখনো চলছে বাংলাদেশের বিভন্ন অঞ্চলে সেই যাত্রা। কিন্তু মাত্রাটা যথেষ্ট ভিন্নরকম। এইতো সেদিন সরেজমিনে রংপুরের বদরগঞ্জে দেখতে গিয়েছিলাম যশোর-মানিকগঞ্জ থেকে অগত‘ প্রতিমা অপেরা যাত্রাগান’। আমার প্রীতিভাজন চারজন বন্ধুর সাথে সে যাত্রা দেখে আমি এবং আমার বন্ধুরা বিষ্মিত হতবাক হয়েছিলাম। এরই নাম যাত্রগান..! গান আর গান ,নাচ আর গান। তা উপভোগ করে অশ্লীল আনন্দের পাশাপাশি লজ্জিতও কম হয়নি বটে। সেকাল একালের যাত্রার মধ্যে এই ফারাক। তা দেখার জন্য বদরগঞ্জের যাত্রা প্যান্ডেলে না গেলে সত্যিই ঘাটতি থেকে যাবে আবহমান গ্রাম বাংলার লৌক সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা। রংপুর রেল স্টেশন থেকে সন্ধা ৭ টায় ট্রেন চেপে গেলাম বদরগঞ্জের মেলায় । স্বভাবগতভাবেই  ঘুরে ঘুরে দেখলাম মেলা প্রাঙ্গণ। ছোট বেলায় কত যে, মেলা বাড়ি গিয়ে ভিড়ে মানুষের ঠেলা খেয়ে এসেছে। সেটাও চুপিসারে মনে পড়ে গেল। প্রচন্ড বাদ্য বাজনার শব্দ শুনে এগিয়ে গিয়ে দেখলাম সাইন বোর্ডে লেখা ‘দি গোল্ডেন সার্কাস’। আহা রে.... কত বছর যাবৎ সার্কাস দেখি না। স্মৃতিময় কৌতূহলবশত ১০০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে আমরা পাঁচজন প্রবেশ করলাম ভিতরে। শুরু হলো সার্কাস। সেকি সার্কাস..! মহা সার্কাস..! সত্যিই সার্কাস ..! এমন সার্কাস আমি জীবনও দেখি নাই। যে সার্কাস ভাই বোন, বধূ, পিতা- মাতা আতœীয় স্বজনের সাথে কম্পিন কালেও দেখা স্বভব না। শুধু জিগরি বন্ধুর সাথে দেখা স্বভব। ২০ মিনিট করে সার্কাস দেখিয়ে ২০ টাকা ওয়াসুল করা হয় হিন্দি, ইংলিশ, বাংলা গানের সাথে বেহায়া কিছু তরুণীর অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি আর মুদ্রাহীন ফালতু নাচের মাধ্যমে। বেশ কয়েকটা সাকার্স প্যান্ডেলে দেখলাম একই অবস্থা । সন্ধা রাতে জমে সার্কাস প্যান্ডেল; আর মধ্যরাতে যাত্রা প্যান্ডেল। সবশেষে গেলাম যাত্রা প্যান্ডেলে রাত ১১ টার দিকে । সাংবাদিকতার পরিচয় দিয়ে নয় অতি সাধারণ দকর্শ হয়ে তৃতীয় শ্রেণীর জন প্রতি ৮০ টাকার  টিকিট দিয়ে। অবশ্য কেন যেন প্রথম শ্রেণীর জনপ্রতি ২০০ টাকা এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর  ১৫০ টাকার টিকিট কাটতে আগ্রহ জন্মালো না। যাহোক, শুরু হলো যাত্রা। বদরগঞ্জের ঐতিহাসিক দেশখ্যাত যাত্রা গান। সেই যাত্রা আমার জীবনের এক মহাযাত্রা, মহা অভিজ্ঞতা। আমি নিশ্চিত সেই যাত্রা আমার বাবা দেখেনি, তার বাবা দেখেনি, তার দাদা দেখেনি। মোদ্দা কথা হলো আমি যাত্রা গানে যা দেখেছি আমার চৌদ্দ পুরুষ তা দেখেনি। কবির কথা, ‘রাত যত গভীর হয়/ ভোর তত নিকটে আসে...’। আর সেখানে দেখলাম, রাত যত গভীর হয়/ অশ্লীলতা তত বাড়ে । রাত ১১ টা থেকে ভোর ৪ টা পর্যন্ত নেপথ্যে পুরুষ কণ্ঠের উপস্থাপনায়, প্রিন্সেস মিথিলা, ঢাকার মডেল বিউটি, চপলা চঞ্চলা হরিণী মিতা, সুন্দরী কন্যা লিপি রায়সহ প্রায়   ১২ জন যুবতীর কুরুচিপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি ও অশ্লীল নিত্য পুলিশি নিরাপত্তায় হাজার-হাজার দর্শক উপভোগ করলেন। রাত দেড়টার দিকে আবালের মত দায়িত্বরত এক পুলিশ কে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই এখানে যে অশ্লীল কর্মকান্ড হচ্ছে আপনাদের থানা প্রশাসন থেকে কিছু বলা হয় না..? আমার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে তিনি আমাকে একটা ঝারি মেরে  বললেন, আপনার বাড়ি কই? আমি বাড়ির কথা বললে তিনি বলেন,“ মিয়া জানেন না, ডিসি, এসপির অনুমোদন নিয়াই এইসব হয়।” আমি স্তবদ্ধ হয়ে ভাবলাম এখনকার আয়োজকরা কিসের  অনুমোদন পেয়েছেন আর বাস্তবে কি হচ্ছে তা কি  ডিসি, এসপি সাহেব জানেন..! আমার মনেহয় তা তারা জানেন এবং জেনেও না জানার ভান করে আছেন। আমরা বিস্মিত হই, ডিসি, এসপি সাহেবের মত শিক্ষিত, বিচক্ষণ ও সচেতন ব্যক্তিত্ব কিভাবে বদরগঞ্জে মেলার অন্তরালে নোংরা, কুরুচিপূর্ণ, অর্ধনগ্ন ও অশ্লীল যাত্রাগান এবং সাকার্সের অনুমোদন দেন....?? আরো হতভম্ব হই এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের নিরব-নিশ্চুপ ভূমিকা দেখে। ডিসি-এসপি সাহেব দয়া করে গড়ি বহর নিয়ে নয়, ৮-১০ টি পুলিশ নিয়ে নয়, চুপসারে একটি বার টিকিট কেটে অতি সাদা-মাঠা দর্শক হয়ে দেখে যান, বদরগঞ্জের মেলায় হচ্ছেটা কি..? সম্ভব হলে স্ত্রী-সন্তানকে সাথে নিয়ে এসে পরিচয় করিয়ে দিয়েন, এই হলো হাজারো বছরের পুরনো বাঙালি সংস্কৃতির ‘যাত্রাগান’। লেখক: ব্লগার ও সাংবাদিকর। a

মন্তব্য করুন


 

Link copied