আর্কাইভ  শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ● ৬ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ১৯ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: পলাশবাড়ীতে আসামির ছুরিকাঘাতে বাদীর মৃত্যু, গ্রেফতার ১       মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনের ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশ       ভোজ্যতেলের দাম বাড়ল, খোলা তেলে সুখবর       বিএনপি নেতা সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তি দাবিতে রংপুরে  মানববন্ধন ও সমাবেশ        খরার ঝুঁকিতে রংপুর অঞ্চল      

 width=
 

এই কান্নার শেষ কোথায়?

বুধবার, ৪ জুন ২০১৪, বিকাল ০৬:৪৯

যাদের কষ্ট ও পরিশ্রমে উপার্যিত অর্থে বাংলাদেশ বৈদেশীক মুদ্রায় আজ সাবলম্বি তাদের জীবনের কথা ভাবছেনা কেউ! দেশে অবস্থিত বৈদেশীক শ্রমিকদের আত্বিয়-স্বজন, বাবা-মা, ভাই-বোন তাদের কষ্টের কথা শুনে পালগ প্রায় সকলেই।

মালয়েশিয়ার দূর্গম বনাঞ্চল পাহাং জেলার লাডাং কসমায় কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকরা মোবাইল ফোনে দির্ঘ ২ মিনিট কান্না শেষে তাদের কষ্টের কথাগুলো এভাবেই বর্ণনা করছিলেন আর কাঁদছিলেন। এসব সমস্যা নিয়ে মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে একাধিকবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোন কাজ হয়নি।

তারা আরও জানায়, দৈনিক ১৩/১৪ ঘন্টা মজুরি করেও দু’মুঠো অন্ন যোগাতে পারছি না। কাজের যন্ত্রপাতিও কিনতে হচ্ছে, খেয়ে না খেয়ে কাজও করতে হচ্ছে। কিন্তু ন্যায্য বেতনভাতা কোন কিছুই পাচ্ছি না। এভাবে চললে ঋণের টাকাই শোধ করব কিভাবে, পরিবারের বৃদ্ধ মা-বাবা ও ভাইবোনদের কাছেই বা কি পাঠাব। ভাই আমাদের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখেন আমরা এখানে থাকব না, ফিরে যাবো দেশের বাড়ি।

পঞ্চগড় তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তারের পুত্র মোস্তফা কামাল (৩৫) কান্নাজড়িত কন্ঠে জানালেন, এখানে আমাদের উপর যে অত্যাচার-নির্যাতন করা হচ্ছে তা আমাদের দেশের কামলাদের চেয়েও ভয়াবহ। প্রতিবাদ করলেই অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে, বন্ধ করে দেয় খাবার। তর্ক করলে হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। আরাম-বিরাম নেই ১৩/১৪ ঘন্টা একটানা কাজ করে যাচ্ছি। শুধু বেঁচে থাকার জন্য দু মুঠো অন্ন্যের জন্য মুখ বুজে সহ্য করছি সকল প্রকার অন্যায়, অত্যাচার-নির্যাতন। আমাদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। আমরা আর এখানে থাকতে চাই না।

তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের দগরবাড়ি গ্রামের বাসেদ আলীর পুত্র রুবেল (২৭) জানান, আমরা শ্রমিকরা মালেশিয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছি। সরকারিভাবে আমাদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতির কোনটিই পূরণ করা হচ্ছে না। ঠিকমতো বেতনভাতা পাচ্ছি না। ৮ ঘন্টার পরিবর্তে কাজ করানো হচ্ছে ১৩/১৪ ঘন্টা। পরিশ্রম করানো হচ্ছে প্রায় তিনগুণ অথচ ঠিকমতো বেতন পাচ্ছি না। নিয়ম অনুযায়ী আমাদের প্রতি মাসে ৯৫০ মালেশিয়ান রিংগিত দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত ৫ মাসে আমরা বেতন পেয়েছি মাত্র ১৫০০ রিংগিত। যা কোন রকমে খেতেই শেষ।

তেঁতুলিয়া উপজেলার দেবনগর ইউনিয়নের আমজুয়ানি গ্রামের শফিজুলের পুত্র জুলফিকার আলী (২৫) জানান, যে স্বপ্ন নিয়ে যে আশা নিয়ে আমরা বিদেশ পাড়ি দিয়েছি তা গুড়ে বালি। এখানে এসে দেখি সবকিছুই ভিন্ন। সে আরও জানায়, আমাদের পাসপোর্ট ও কাগজপত্র এখানকার কোম্পানীর লোকজন হাতিয়ে নিয়েছে। আমরা বেশিকিছু চাই না। সরকার আমাদের যা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পেলেই আমরা খুশি। আমাদের যদি ভাল কাজ না দেয়া হয় তাহলে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হোক।

মোবাইল ফোনে মালেশিয়া থেকে শ্রমিকরা জানায়, জিটুজি লটারির লোক ৪০ (গ) এর মাধ্যমে চলতি বছরের ১০জানুয়ারি পঞ্চগড়ের ওই তিন প্রবাসী শ্রমিক কাজের জন্য মালেশিয়ায় পাড়ি জমান।

বাংলাদেশের শ্রম অধিদপ্তর এসব শ্রমিকদের তুলে দেন কপারাসিং নামে একটি কম্পানির কাছে। ওই অঞ্চলে ওই কম্পানির অধিনে প্রায় ৩৯ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। যাদের অবস্থাও একইরকম।

শ্রমিকরা জানান, ৭ জনের দলে বিভক্ত করে এসব শ্রমিকদের ওই কোম্পানী মালেশিয়ার দূর্গম বন্য অঞ্চল পাহাং জেলার লাডাং কসমায় নিয়ে যান। এই শ্রমিকদের ৭ জনের গ্রুপে অপর ৪ জনের বাড়ি ঠাঁকুরগাও জেলার বালিয়াডাঙ্গি উপজেলায়। কপারাসিং কম্পানির চীনা মালিক তাদের বলে আমরা তোমাদের ১৩০০ রিংগিত করে কিনে নিয়েছি। আমরা এখন যেমন খুশি তেমন কাজ করাবো। তর্ক করলে ওই কম্পানির ম্যানেজার ইরানী হত্যা করে জঙ্গলে ফেলে দেয়ার হুমকি দেয়।

শ্রমিকরা জানান, তাদেরকে সরকারিভাবে যে কাজ দেয়ার কথা ছিল সেখানেও মিলে তার ভিন্ন চিত্র। তাদেরকে অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক দৈনিক ‘কাজ নাই মজুরি নাই’ ভিত্তিতে কাজ করতে হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী দিনে ৮ ঘন্টা (১ ঘন্টা বিশ্রাম সহ) কাজ করানোর কথা থাকলেও করানো হচ্ছে ১৩/১৪ ঘন্টা। পরিশ্রম করানো হচ্ছে প্রায় তিনগুণ বেশি। অথচ তারা ঠিকমতো ন্যায্য বেতন পাচ্ছে না। যে টাকা দেওযা হয়েছে তা খাবার খেতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। ব্যবহারের জন্য টলি, থাকার ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও কিছুই পাচ্ছে না তারা।

এসব বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফোনে যোগাযোগ করে সংযোগ পাওয়া সম্ভব হয়নি । মালেশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাই কমিশন দীর্ঘ ৫ মাসেও তাদের এই করুণ আর্তনাদ ও আকুতিকে কোন তোয়াক্কা করেননি। সরকারি চুক্তি অনুযায়ী তাদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হোক। অন্যথা তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মন্তব্য করুন


 

Link copied