মিলটি চালুর বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠন করা কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে যেকোনো সময় কারখানাটি বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালু হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
১০ বছর আগে দিনাজপুর, পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও অঞ্চলের চাষিরা তুঁতগাছ লাগাতেন। তাদের প্রায় অর্ধশত বাগান ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখনো প্রায় ১৫-২০টির মতো বাগান টিকে রয়েছে। যেসব বাগান থেকে পলু পালনের মাধ্যমে সুতা উৎপাদন করেন রেশম কর্মীরা। এক সময় ঠাকুরগাঁও ঐতিহ্যবাহী রেশম কারখানায় উৎপাদিত হতো মসৃণ সিল্ক কাপড়। অথচ নীতিনির্ধারকদের টানাপড়েন ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি আর উদাসীনতায় দিনে দিনে এই কারখানাটিকে লোকসানে ফেলা হয়। বিএমআরই করা হবে এমন কথা বলে হঠাৎ করে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বন্ধ কারখানা চালু করার কথা বলে একাধিকবার রাজনৈতিক ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘোষণা পেলেও তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ হওয়ার পর প্রায় পাঁচ হাজার রেশম চাষি বেকার হয়ে পড়েন। তবে এখনো প্রায় দুই হাজার চাষি রেশম চাষ ধরে রেখেছেন। কিন্তু তুঁতগাছের অভাবে তারা পলু পালন করতে পারছেন না। তা ছাড়া পুঁজি ও উপকরণের অভাবে তারা এখন বিপাকে পড়েছেন। পাঁচ হাজার চাষি বেকার হয়ে পড়ায় তারা ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। অন্য দিকে অব্যবহৃত থাকায় রেশম কারখানার ৫০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হতে চলেছে। অথচ কারখানাটি চালু হলে রেশম চাষের সাথে যুক্ত পাঁচ হাজার চাষির আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
১৯৭৭-৭৮ সালে বেসরকারি সংস্থা আরডিআরএস ঠাকুরগাঁওয়ে এই রেশম কারখানাটি স্থাপন করে। তখন ছয়টি বড় রেশম বাগান স্থাপন করা হয়। এই বাগান ঠাণ্ডিরাম, রতœাই, সাদামহল, সাকোয়া, সনকা ও আটোয়ারী রেশম বাগান আজো কোনো রকমে টিকে আছে।
সেই থেকে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার চাষিরা রেশম চাষের সাথে জড়িত হন। ধীরে ধীরে বৃহত্তর দিনাজপুর অঞ্চলের সাড়ে সাত হাজার চাষি রেশম গুটি উৎপাদনের সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৯৫ সালে রেশম কারখানাটি আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ১৯৯৮ সালের ডিসেম্বরে। আধুনিকীকরণে মোট ব্যয় হয় এক কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ভবন নির্মাণ, নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, পুরনো যন্ত্রপাতি মেরামত, সংস্থাপন ও যানবাহন ক্রয়ের জন্য এই টাকা ব্যয় হয়। লোকসানের অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। চাষি ও স্থানীয় জনগণের মতে, মিলটি ঐতিহ্যগত কারণে চালু করা দরকার। তাছাড়া এখানকার কাপড় অত্যন্ত মূল্যবান। কাঁচামালের কোনো অভাব হবে না।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি রেশম কারখানা চালুর সম্ভাবনা যাচাইয়ে গঠন করা সংসদীয় কমিটি ঠাকুরগাঁও ও রাজশাহী পরিদর্শন করে মন্ত্রণালয়ে তাদের রিপোর্ট জমা দেয়।
বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ইজারা দিয়ে কারখানা দু’টি চালুর উদ্যোগের সত্যতা নিশ্চিত করে রাজশাহী রেশম বোর্ডের চেয়ারম্যান সুনীল পাল জানান, ঠাকুরগাঁও ও রাজশাহীর প্রতিষ্ঠান দু’টিকে ইজারা দিয়ে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানার সহকারী পরিচালক নাজির উদ্দীন সরকার বলেন, গত মাসে বেসরকারিভাবে কারখানা পরিচালনার জন্য টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। একটি সূত্র জানায়, ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা পরিচালানার জন্য দু’টি বেসরকারি কোম্পানি টেন্ডার ড্রপ করেছে।
২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর লোকসান দেখিয়ে সরকারি মালিকানাধীন ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। ২০০৭ সালে রেশম বোর্ড কারখানা ইজারা দেয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করলেও পরে তা বাতিল করা হয়। নতুন করে তা চালু করতে ন্যস্ত করা হয় প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের হাতে। এর পর কারখানার সাথে সম্পৃক্ত শ্রমিক, চাষি ও ব্যবসায়ীরা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানার সহকারী পরিচালক নাজির উদ্দীন সরকার জানান, কারখানা পুরোদমে চললে ঠাকুরগাঁওয়ে ১ দশমিক ৭৯ লাখ মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করা সম্ভব।