আর্কাইভ  বুধবার ● ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ● ৪ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বুধবার ● ১৭ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: আজকের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর –রংপুরে স্পীকার       রংপুরে বৃষ্টি নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার       কুড়িগ্রামে অষ্টমীর স্নান করতে এসে মারা গেলেন পুরোহিত       বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১১ জন নিহত       উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: রংপুরে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল       

 width=
 

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী

বৃহস্পতিবার, ২ অক্টোবর ২০১৪, রাত ০২:২৭

ডেস্ক : ভারতীয় রাজনীতিবিদ, স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব ও আধ্যাত্মিক নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৮৬৯ সালের ২ অক্টোবর গুজরাটের পরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মহাত্মা গান্ধী নামেই বেশি পরিচিত। তিনি সত্যাগ্রহ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। এ আন্দোলন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল অহিংস মতবাদ বা দর্শনের ওপর, এটি ছিল ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম চালিকাশক্তি। মহাত্মা গান্ধীর বাবা করমচাঁদ গান্ধী ছিলেন পোরবন্দরের দেওয়ান। মহাত্মা গান্ধী মাঝারিমানের ছাত্র ছিলেন। গুজরাটের ভবনগরের সামালদাস কলেজ থেকে কোনোরকমে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করেন। কলেজ জীবন খুব একটা ভালো কাটেনি। কারণ তার পরিবার চাইত তিনি ব্যারিস্টার হন। ১৮ বছর বয়সে ১৮৮৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে যান। লন্ডনে তার জীবনযাপন ছিল মায়ের কাছে করা শপথ দ্বারা প্রভাবিত। জৈন সন্ন্যাসী বেচার্জীর সামনে তার মায়ের কাছে শপথ করেছিলেন- মাংস, মদ ও উচ্ছৃঙ্খলতা নয়, হিন্দু নৈতিক আদর্শ পালন করবেন। দক্ষিণ আফ্রিকায় তিনি আইন পেশায় যুক্ত হন। সেখানে নিপীড়িত ভারতীয় নাগরিকদের অধিকার আদায়ে তিনি প্রথমবারের মতো অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। ভারতে ফিরে আসার পরে কয়েকজন দুস্থ কৃষক ও দিনমজুরকে সঙ্গে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বহু বিস্তৃত বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ ও জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মত প্রচার শুরু করেন। এর সবগুলোই ছিল স্বরাজ তথা ভারতকে বিদেশী শাসন থেকে মুক্ত করতে। ১৮৯৪ সালে গান্ধী দক্ষিণ আফ্রিকায় নাটাল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে সেখানকার ভারতীয়দের রাজনৈতিকভাবে সংঘবদ্ধ করেন। ১৮৯৭ সালের জানুয়ারিতে ভারতে এক সংক্ষিপ্ত সফর শেষে ফিরে আসার পর এক শ্বেতাঙ্গ মব তাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করে। গান্ধী এই মব সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। ১৯০৬ সালে ট্রান্সভাল সরকার উপনিবেশের ভারতীয়দের নিবন্ধনে বাধ্য করানোর জন্য একটি আইন পাস করে। ১১ সেপ্টেম্বর জোহানেসবার্গে সংঘটিত এক গণপ্রতিরোধে গান্ধী সবাইকে এই আইন বর্জন করতে বলেন। ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে মহাত্মা গান্ধী ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নির্বাহী দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তার নেতৃত্বে কংগ্রেস স্বরাজের লক্ষ্যকে সামনে রেখে নতুন সংবিধান গ্রহণ করে। টোকেন ফি দিতে রাজি হওয়া যে কোনো ব্যক্তির জন্য দলের সদস্যপদ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তিনি পার্টিকে একটি অভিজাত প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণ জনগণের দলে রূপান্তর করেন। এর পর একের পর এক জনপ্রিয় কর্মসূচি গ্রহণ করেন। ১৯৩০ সালে ভারতীয়দের লবণ করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ৪০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডান্ডি লবণ কুচকাওয়াজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯৪২ সালে ইংরেজ শাসকদের প্রতি সরাসরি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকবার দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতে কারাবরণ করেন। তিনি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য পাঞ্জাব থেকে পশ্চিমবাংলা, বিহার; বিহার থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলার নোয়াখালী, বিক্রমপুরের ফুরশাইল ও লৌহজং ছুটে গিয়েছেন। নোয়াখালীতে তিনি একবার চার মাস অবস্থান করেন। মহাত্মা গান্ধী সকল পরিস্থিতিতেই অহিংস মতবাদ ও সত্যের ব্যাপারে অটল থেকেছেন। তিনি সাধারণ জীবনযাপন করতেন এবং একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তার পোশাক ছিল নিজের হাতে বোনা ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় ধুতি ও শাল। তিনি সাধারণ নিরামিষ খাবার খেতেন। শেষ জীবনে ফলমূ্লই বেশি খেতেন। আত্মশুদ্ধি ও প্রতিবাদের কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য উপবাস থাকতেন। গান্ধী ছিলেন বহুমূখী লেখক ও সম্পাদক। দশক ধরে তিনি সম্পাদনা করেছেন গুজরাটি, হিন্দি ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকা হরিজন। তার সম্পাদিত ও ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকার মধ্যে রয়েছে- দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘ইন্ডিয়ান অপিনিয়ন’ ও দেশে ‘ইয়ং ইন্ডিয়া’। এ ছাড়া তার হাতেই সম্পাদিত হতো গুজরাটি ভাষার মাসিকপত্র নবজীবন, যা পরে হিন্দি ভাষায়ও প্রকাশিত হতো। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো পত্রিকায় তার চিঠি প্রকাশিত হতো। গান্ধী গুজরাটি ভাষায় ভগবত গীতার ওপর ধারাভাষ্য লেখেন। গুজরাটি পাণ্ডুলিপিটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন মহাদেব দাসী। তিনি একটি অতিরিক্ত সূচনা ও ধারাভাষ্য যোগ করেন। এটি গান্ধীর একটি ভূমিকাসহ প্রকাশিত হয় ১৯৪৬ সালে। তার প্রকাশিত বইয়ের মথ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- The Story of My Experiments with Truth, Satyagraha in South Africa, Hind Swaraj or Indian Home Rule ও গুজরাটী ভাষা থেকে জন রাসকিনের অনুবাদে Unto This Last। শেষ বইটিকে গান্ধীর অর্থনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৬০ এর দশকে ভারত সরকার গান্ধীর রচনাবলী প্রকাশ করে। শতাধিক খণ্ডে প্রকাশিত এ রচনাবলীতে প্রায় ৫০ হাজার পাতা আছে। ১৮৮৩ সালে মহাত্মা গান্ধী বাবা-মায়ের পছন্দে কস্তুরবা মাখাঞ্জীকে (কাস্তুবাই নামেও পরিচিত ছিলেন) বিয়ে করেন। তাদের চার ছেলে- হরিলাল গান্ধী, মনিলাল গান্ধী, রামদাস গান্ধী ও দেবদাস গান্ধী। গান্ধী বিশ্বজুড়ে মহাত্মা ও বাপু নামে পরিচিত। ভারত সরকারিভাবে তাকে ভারতের জাতির জনক হিসেবে ঘোষণা করেছে। ২ অক্টোবর তার জন্মদিন ভারতে গান্ধী জয়ন্তী হিসেবে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়। ২০০৭ সালের ১৫ জুন জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি নয়াদিল্লিতে মহাত্মা গান্ধীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী নাথুরাম গডসে ছিলেন চরমপন্থী হিন্দু মহাসভার অনুসারী। সূত্র : উইকিপিডিয়া

মন্তব্য করুন


 

Link copied