আর্কাইভ  বুধবার ● ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ● ৪ বৈশাখ ১৪৩১
আর্কাইভ   বুধবার ● ১৭ এপ্রিল ২০২৪
 width=
 
 width=
 
শিরোনাম: আজকের মেধাবী শিক্ষার্থীরাই হবে স্মার্ট বাংলাদেশের কারিগর –রংপুরে স্পীকার       রংপুরে বৃষ্টি নামে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার       কুড়িগ্রামে অষ্টমীর স্নান করতে এসে মারা গেলেন পুরোহিত       বাস-পিকআপ সংঘর্ষে ১১ জন নিহত       উপজেলা পরিষদ নির্বাচন: রংপুরে ৩০ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র দাখিল       

 width=
 

অবরোধে প্রতিদিন ক্ষতি ১৫০০ কোটি টাকা

বৃহস্পতিবার, ৮ জানুয়ারী ২০১৫, রাত ১২:৫৭

৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বছরজুড়ে গুমোট পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে পার করেছে দেশ। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিতে ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ এবং ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন নিয়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে আবারও রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য। বর্তমানে চলছে বিরোধী দলের টানা অবরোধ। এ অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে পোশাকশিল্পের পরিবহন বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ক্রেতার কাছে যথাসময়ে পণ্য পৌঁছানো যায় না। ট্রাকসহ পরিবহন সংস্থাগুলো তাদের ভাড়া তিন গুণ বাড়িয়ে দেয়। ফলে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যাবে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে পণ্যের দাম। এ ছাড়া বিদেশে ইমেজ-সংকট তৈরি হচ্ছে। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নেতিবাচক ধারণা জন্ম নিচ্ছে বাংলাদেশ সম্পর্কে। রপ্তানি বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব আসবে। সময়মতো পণ্যের সরবরাহ করতে না পারার শঙ্কায় ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে অর্ডার বাতিল করবেন।

দোকান মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, হরতাল ও অবরোধে দিনে ক্ষতি প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। বিজিএমইএর হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন ৫৫০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। হরতালে এসব পণ্য রপ্তানি ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। এফবিসিসিআই ও ঢাকা চেম্বারের হিসাবে একদিনের হরতাল কিংবা অবরোধে এক হাজার ৫০০ থেকে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশের (আইসিসিবি) হিসাবমতে, একদিনের হরতালে এক হাজার ৫৪০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ছয় মাসে দেশে ৫৫টি হরতাল-অবরোধ হয়। ওই সময় রাজনৈতিক সহিংসতায় ক্ষতি হয় ৪৯ হাজার কোটি টাকা। ২০১৩-এর জুলাই থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮০ দিনে দেশে ৫৫ দিন হরতাল-অবরোধ হয়েছে। সিপিডির হিসাব অনুসারে একদিনের হরতালে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পরিবহন খাতে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৩শ ৩ কোটি টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কৃষি। এ খাতে একদিনের হরতালে ক্ষতি হয় ২৮৮ কোটি টাকা। বস্ত্র ও গার্মেন্টস খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২৫০ কোটি টাকা। পর্যটন খাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫০ কোটি টাকা। গত বছরের ৩ আগস্ট প্রকাশিত ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়, হরতালের কারণে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৫৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকার (৭০০ কোটি ডলার) ক্ষতি হয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হেলাল উদ্দিন বলেন, রাজনীতিবিদদের দয়ার ওপর মুক্তি নির্ভর করছে। তাদের দয়া না হলে সর্বনাশা কর্মসূচিতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেই থাকব।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হলো তৈরি পোশাকশিল্প। কিন্তু অবরোধ-হরতালে বরাবরই এই শিল্পের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ঠিকমতো কাঁচামালসহ সুতা পরিবহন করতে পারি না, উৎপাদিত পণ্য জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে নিয়ে যেতে পারি না। এর ফলে পরিস্থিতি নাজুক হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন বলেন, হরতালে বিমা খাত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ গাড়ি পোড়ানো হলে বিমা কোম্পানিকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। এ অবরোধের ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। এতে জনসাধারণের স্বাভাবিক জীবনযাপন বাধাগ্রস্ত হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর বিমার ক্ষতিপূরণ কোম্পানিগুলোকে দিতে হবে। ফলে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো পড়বে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে।

অবরোধের চরম মূল্য দিচ্ছেন কৃষকরা। শীতের সবজির আগাম বাজার ধরার জন্য যারা বছর ধরে অপেক্ষা করেন অবরোধে পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তাদের মাঠ থেকে সবজি বাজারে আসছে না। স্থানীয় হাটে বয়ে নিয়ে এলেও পাইকারের অভাবে নামমাত্র দামে তা বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। সস্তায় কিনলেও সেই সবজি নিয়ে বিপাকে পাইকাররা। যানবাহনের অভাবে দেশের কোথাও পাঠানো যাচ্ছে না সেই সবজি। ফলে তারাও ক্ষতির মুখে পড়ছেন।

ক্ষুদ্র বা অপ্রাতিষ্ঠানিক অনেক ব্যবসায়ী রয়েছেন, যারা প্রতিদিন বিভিন্ন পাইকারি বাজারে গিয়ে পণ্যের বেচাকেনা করেন। অবরোধ-হরতালে তাদের কাজ বন্ধ। উৎপাদন বন্ধ থাকছে। শ্রমিকরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এতে তাদের লোকসান বেড়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়েও কষ্ট করছেন।

অবরোধ-হরতালে অর্থনীতির সবচেয়ে বড় উপকরণ টাকার ঘূর্ণন স্থবির হয়ে পড়ে। ফলে টাকা হাতবদল না হওয়ায় অর্থনীতিতে এর কোনো অবদান থাকছে না। অলস পড়ে থাকছে টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, টাকা যত বেশি ঘুরবে, তত বেশি অর্থনৈতিক কর্মকা- জোরদার হবে। আমাদের সময়

মন্তব্য করুন


 

Link copied