আর্কাইভ  শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪ ● ১৫ চৈত্র ১৪৩০
আর্কাইভ   শুক্রবার ● ২৯ মার্চ ২০২৪
 width=
 

 

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

রানিকে নিয়ে কুড়িগ্রামে পৌঁছেছেন ভুটানের রাজা

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

কুড়িগ্রামে সমৃদ্ধির হাতছানি

 width=
 
শিরোনাম: রংপুরবাসীর জন্য সরকারি চাকরি, পদ ১৫৯       স্বাস্থ্যের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক ফজলুল হক কারাগারে       কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা       লালমনিরহাটে পুকুরে জাল ফেলতেই জালে উঠে এলো যুবকের মরদেহ       কুড়িগ্রামে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করলেন ভুটানের রাজা      

 width=
 

বিএনপির মিথ্যাচার আর আমাদের পোড়া কপাল!

রবিবার, ১১ জানুয়ারী ২০১৫, বিকাল ০৫:০৪

চিররঞ্জন সরকার

ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সভাপতি অমিত শাহ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল। এর পরপরই আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এর সত্যতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়। সর্বশেষ বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যমকে অমিত শাহ জানান, তিনি আদৌ বেগম খালেদা জিয়াকে কোনও ফোন করেননি। 'দিজ ইস টোটালি রিউমার' চ্যানেল টোয়েন্টিফোরকে বলেন অমিত শাহ। একাত্তর টেলিভিশনকে তিনি বলেন, 'দিস ইজ এ ফেক নিউজ।'

এদিকে অমিত শাহের টেলিফোনসংক্রান্ত আলোচনা মিথ্যে প্রমাণ হওয়ার মধ্যে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়াকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্যদের একটি বিবৃতি প্রকাশ হয়েছিল যুক্তরাজ্যের একটি সংবাদপত্রে, যা ভুয়া বলে ধরা পড়ে।

বিএনপি ওই মিথ্যা বিবৃতি প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানরা। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের নাম ভাঙ্গিয়ে মিথ্যাচারের এ রাজনীতি সচেতনমহলে কৌতুকের জন্ম দিয়েছে। পাশাপাশি বিএনপির যাবতীয় কর্মকাণ্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস ও কমিটির সদস্য এলিয়ট এ্যাঙ্গেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোন পক্ষের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে ভুয়া বিবৃতি ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ ও তার ছেলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিন্দা জানিয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যানের নামে মিথ্যা বিবৃতি প্রচার করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই কংগ্রেস সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস ও কমিটির সদস্য এলিয়ট এ্যাঙ্গেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোন পক্ষের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে ভুয়া বিবৃতি ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধান রাজনৈতিক দলের প্রধান নেতা এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশের সম্মানিত ও শক্তিমান ব্যক্তিদের নিয়ে বিএনপি নেতৃত্ব যে মিথ্যাচার করছেন তা অনভিপ্রেত এবং নিঃসন্দেহে একটি গর্হিত কাজ। এই দেশদুটোর কাছে আমাদের মান-সম্মান যেভাবে ভুলুণ্ঠিত হলো- এরপর বিএনপি নেতারা মুখ দেখাবেন কী করে?

আমরাই বা বিএনপিকে সমর্থন করবো কোন নৈতিক জোরে? ভারতবিরোধী রাজনীতিকে যারা সারাজীবন উস্কে দিয়ে নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছেন, তারা একজন বিজেপি নেতার মিথ্যে ‘টেলিফোন সংলাপ’-এর খবর এভাবে প্রচার করলো কেন? নাকি বিএনপির রাজনীতির মানেই হচ্ছে মিথ্যের বেসাতি?

বিএনপির এই অপতৎপরতা বিস্ময়কর! দেশের প্রধান একটি রাজনৈতিক দলের এই অবস্থান তাদের চরম রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বরই বহিঃপ্রকাশ। লন্ডনে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতারাই নাকি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করে ভুয়া বিবৃতি প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইমেজ ভূলুণ্ঠিত করেছে। সঙ্গে নিজেদেরও।

প্রশ্ন হলো, বিএনপি এমন গর্হিত কাজ কেন করল? ভারতের শাসক দলের সভাপতি বিএনপি নেত্রীকে ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন--এই খবরে খালেদার গুরুত্ব বেশ বাড়ে। ঘরোয়া আন্দোলনে তিনি মানুষের সহানুভূতি ও দলীয় কর্মীদের পাশে পাচ্ছেন না! এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী মহল যে তার জন্য উদ্বিগ্ন সে বার্তা বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া যায়। সেই জন্যই কি বিএনপি'র তরফে অমিতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হয়েছিল?

কিন্তু এতে করে বিএনপির ভাবমূর্তি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এই প্রতারণার পর বেগম জিয়ার যাবতীয় তৎপরতাই নিছকই সাজানো ঘটনা বলে মনে করা কী ভুল হবে? গত এক সপ্তাহে খালেদা জিয়া কি সত্যি একবারের জন্যও বাসায় যেতে চেয়েছেন? নাকি ইচ্ছে করেই অফিসে থেকে একটি ‘পরিস্থিতি’ সৃষ্টির চেষ্টা করছেন? তবে কি খালেদা জিয়ার অসুস্থতা খবরও ‘ভান’ ‘সাজানো নাটক’?

একথা ঠিক, ৫ জানুয়ারি তার দফতরের সামনে থেকে ভিড় হটাতে পুলিশ ‘পেপার স্প্রে’ ছড়িয়েছিল। এতে বাইরে দাঁড়ানো খালেদার চোখে জল এসেছিল। হাঁচি দিতে দিতে তিনি ঘরে ফিরে যান। যদিও চিকিৎসকরা বলেছেন, এই ঝাঁঝ বড়জোর ২৪ ঘণ্টা থাকতে পারে। কিন্তু সেটাকেই তিনি বড় করে দেখাতে চাইছেন। এ জন্য আন্তর্জাতিক উদ্বেগের কাহিনী বানানো? নৈতিকতার দিক থেকে এটা কতটা গ্রহণযোগ্য? একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের কাছে দেশের মানুষ এটা কখনই প্রত্যাশা করে না। এটা স্রেফ জোচ্চুরি।

সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া, অফিস থেকে বের হতে না দেওয়া, খালেদা জিয়ার বাড়ির সামনে ইটবালুর ট্রাক এনে রাখা, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের নির্বিচারে ধরপাকড়- এগুলো বর্তমান সরকারের চণ্ড নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। বিএনপির প্রতি সরকারের এই আচরণ দেশবাসী মোটে পছন্দ করেনি, বরং ক্ষুব্ধ হয়েছে। সাধারণ মানুষের সমর্থনের পাল্লা তাই বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দল বিএনপির দিকেই ঝুঁকে পড়ছিল।

এই সহিংস অবরোধ-হরতালের কারণে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। প্রতিদিন চোরাগুপ্তা বোমা হামলা করা হচ্ছে। পেট্রোল বোমায় ঝলসে দেওয়া হচ্ছে নিরীহ যাত্রীদের। বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যানবাহনে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ইটের আঘাতে নির্মম মৃত্যু ঘটছে সাধারণ মানুষের।

কিন্তু আন্দোলনের নামে, সরকার হঠানোর নামে বিএনপি এসব কী করছে? অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দিয়ে দেশের মানুষকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিপদের মুখে ঠেলে দিল। বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নৈরাজ্যের পথ বেছে নিয়েছে। দেশের মুসলিম জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর ধর্মীয় অনুষ্ঠান বিশ্ব ইজতেমাকেও শ্রদ্ধা দেখানো হয়নি। এই সহিংস অবরোধ-হরতালের কারণে লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লিকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। প্রতিদিন চোরাগুপ্তা বোমা হামলা করা হচ্ছে। পেট্রোল বোমায় ঝলসে দেওয়া হচ্ছে নিরীহ যাত্রীদের। বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যানবাহনে ইট-পাথর নিক্ষেপ করা হচ্ছে। ইটের আঘাতে নির্মম মৃত্যু ঘটছে সাধারণ মানুষের। রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে ফেলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে নিরুপায় যাত্রীদের। জ্বালাও-পোড়াও, পুলিশের প্রতি হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশও নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে। মারছে। সব মিলিয়ে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। পণ্য পরিবহনে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষক তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ কাজ পাচ্ছে না। তাদের অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।

বর্তমান সরকার নির্বাচিত না অনির্বাচিত, তাতে সাধারণ মানুষের কিছুই যায় আসে না। সাধারণ মানুষ কাজ চায়, খেয়ে-পরে বাঁচতে চায়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে এ ক্ষেত্রে চরম কোনও সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে- তা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে না। তাই সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে এখনই হঠানোর রাজনীতি নিয়ে বড় বেশি আগ্রহী নয়। বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন তাই একেবারেই দলীয় সমর্থকদের আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। এই আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সঙ্গত কারণেই কোন যোগ বা সমর্থন নেই।

আর ‘খালেদা জিয়াকে কোনও সমাবেশ করতে না দেওয়ার’ ছাত্রলীগের যে ঘোষণা-এতে বাড়াবাড়ি আছে অবশ্যই, কিন্তু এজন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান কম দায়ী নয়। যার জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো কিনা সন্দেহ, স্বাধীনতার সেই মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ বলাটা কতটা যৌক্তিক আর শোভন? দেশের প্রধান দলের একজন শীর্ষ নেতার মুখ থেকে এমন মন্তব্য কী আদৌ সহনীয়?

আমরা জানি, বঙ্গবন্ধুকে তদানীন্তন পাকিস্তানি শাসক ইয়াহিয়া খান বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল। সেই আদেশ কার্যকর করতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া স্বাক্ষরও করেছিল। ইয়াহিয়া ভুট্টোকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় সেই আদেশ বাস্তবায়ন করার জন্য। ভুট্টোর তা করার সাহস হয়নি।

স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ রেসকোর্স মাঠের বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমাকে ফাঁসি দিলে আমি বলেছি, আমার লাশটা তোমরা আমার বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিও। যেন বাংলার মাটিতে আমার কবর হয়।

১৯৬৮ সালেও তার সেলের পাশে কবর খুঁড়ে সেই কবরের সামনে তাকে দাঁড় করিয়ে ভয় দেখানো হয়েছিল। তিনি মৃত্যুকে ভয় পাননি। সেজন্যই পুরো জাতি তার ওপর আস্থা রেখেছিল। তা না হলে পাকিস্তানের বিশাল সেনাবাহিনীর কাছ থেকে কৌশলে জনগণকে এক করে এদেশ স্বাধীন করা আর কখনও হয়তো সম্ভব হতো না।

সেই বঙ্গবন্ধুকে রাজাকার বলাটা আর যাই হোক সুস্থতা মানসিকতার পরিচায়ক নয়। এটা সচেতন দেশপ্রেমিক কোনও নাগরিকের পক্ষেই সহ্য করা, মেনে নেওয়া কঠিন।

বিএনপি আন্দোলনের নামে যে সন্ত্রাসী-প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, দুটি শক্তিশালী দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নামে যে মিথ্যাচার ও জোচ্চুরি করেছে, তাতে কোনও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে এই দলটির নাম উচ্চারণ করাটাও লজ্জার। আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আচরণ, ব্যবহার, কর্মকাণ্ড বিরোধী দলকে জনপ্রিয় ও পরবর্তী সময়ে ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে প্রশস্ত করে। কিন্তু বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি যা করছে, যেভাবে করছে তাতে অনন্তকাল আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ‘দখল’ করে থাকলেও কারও কিছু বলার থাকবে বলে মনে হয় না!

হায়, আমাদের সত্যি পোড়া কপাল!

লেখক: কলামিস্ট

মন্তব্য করুন


 

Link copied